ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে আলোচনা

প্রস্তাবিত বাজেট মানব কল্যাণ ও উন্নয়নের সোপান

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৯ জুন ২০১৬

প্রস্তাবিত বাজেট মানব কল্যাণ ও উন্নয়নের সোপান

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়েছে। বুধবার আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত এই বাজেটের মধ্যেই অন্তর্নিহিত আছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃপ্ত শপথ, মানবকল্যাণ ও উন্নয়নের সোপান। তবে আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা রোধ এবং সুষম বণ্টন ব্যবস্থা সৃষ্টি না করা গেলে কাক্সিক্ষত অর্জন হবে না। হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লুণ্ঠিত জনগণের টাকা কিভাবে উদ্ধার হবে সে সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দাবি করেন আলোচকরা। ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন- সরকারী দলের অধ্যাপক আলী আশরাফ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, পঞ্চানন বিশ্বাস, ইস্রাফিল আলম ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। আলোচনা শেষে ডেপুটি স্পীকার সংসদ অধিবেশন আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করেন। আলোচনার সূত্রপাত করে সরকারী দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনার দেশ। এই দেশ এগোবেই, এগোচ্ছে। খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ এখন চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করছে। রিজার্ভ সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিনি বলেন, অনেকেই বলেন এ বাজেটটি উচ্চাভিলাষী। উচ্চাভিলাষী তো হবেই। উচ্চাভিলাষ বা স্বপ্ন না থাকলে কোনকিছু অর্জন করা যায় না। এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন তো উচ্চাভিলাষ নিয়েই করতে হয়। তিনি বলেন, বিশ্বমন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রেখে ৬ ভাগ প্রবৃদ্ধি বজায় রেখে এখন ৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে। সারাবিশ্ব এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে। যেভাবে দেশ এগোচ্ছে তাতে মধ্যম নয়, উন্নত দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়। প্রস্তাবিত বাজেটকে অত্যন্ত যুগোপযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও অগ্রগতির সোপানে। ফসলের বিপুল উৎপাদনে এখন প্রত্যেক কৃষকের গোলাভরা ধান। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যেন নড়বড়ে অবস্থান। খেলাপী ঋণ প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এসব আদায়ের কি কোন ব্যবস্থা নেই? হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এসব তো জনগণের টাকা। চোর ঘরে ঢুকে বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা নিয়ে গেল- এখনই আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। অডিট সিস্টেম আরও শক্তিশালী করতে হবে। মনে রাখবেন, যদি চোররা রিজার্ভের সব টাকা নিয়ে যেতে পারত তবে পুরো দেশই তো শেষ হয়ে যেত। আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বিএনপির আমলে যেখানে বাজেট ছিল ৭৯ হাজার কোটি টাকার, সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের বাজেটের আকার হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল আকার দিয়ে বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের সক্ষমতা, উন্নয়ন, অগগ্রতির চিত্র তুলে ধরেছে বর্তমান সরকার। এ বাজেটের মধ্যেই অন্তর্নিহিত আছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃপ্ত শপথ, মানবকল্যাণ ও উন্নয়নের সোপান। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, এ বাজেট বাস্তবায়ন অসাধ্য বলে মনে করছি। যখন-তখন যাকে-তাকে ভর্ৎসনা করার অস্বাভাবিক ক্ষমতা দিয়ে অর্থমন্ত্রী যদি এ হিমালয় পর্বত স্পর্শের অসাধ্য সাধন করতে পারেন তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। বাংলায় প্রবাদ আছে- ধার করে ঘি খাওয়া। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এ প্রবাদটি সরকারের জন্যও প্রযোজ্য কি-না? সরকারী দলের ইস্রাফিল আলম অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বলেন, অর্থমন্ত্রীর মন্ত্রণালয়েই হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক থেকে অর্থ লুণ্ঠন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীভাবে গড়ে তুলতে না পারলে বাজেটের সুফল আসবে না। এসব বন্ধ না করলে, বৈষম্য দূর করতে না পারলে নৌকার জোয়ার আসবে না।
×