ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণার দাবিতে দূতাবাস ঘেরাও

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৯ জুন ২০১৬

পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ঘোষণার দাবিতে দূতাবাস ঘেরাও

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও দেশটির কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ক্রমাগত লঙ্ঘনের প্রতিবাদে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশন ঘেরাও করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিপরীতে রাজধানীর ভাটারা থানার সামনে সমাবেশ করেন দলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ বিভিন্ন সংগঠন একই দাবিতে কর্মসূচী পালন করে। সমাবেশে পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। আদালতের রায়ে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়ে পাকিস্তান ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের উপর তাদের কৃত জঘন্য অপরাধকেই প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিল। যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান নেতা মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীকে ‘নিশান-ই-পাকিস্তান’ উপাধি দিয়ে পাকিস্তান মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারী এক ঘৃণ্য অপরাধীর পক্ষ নিল। পাকিস্তান শুধু এই ঘটনায়ই নয়, বরং এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিশ^ মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারী এ জাতীয় অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে কার্যত নিজেকেই সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। পাকিস্তান এর আগে ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমরসহ তালেবান গোষ্ঠীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছে। আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা একই অপরাধ করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী উগ্র সশস্ত্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কর্তৃক অর্থ, অস্ত্রসহ বিভিন্ন প্রকারে মদদদানের ঘটনা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। আজ এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তুরস্কের ক্ষমতাসীন মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক দল ও তার সরকার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোগান আজ বিশে^র নতুন লাদেন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে দেশের বিরুদ্ধে এসব অপরাধীর ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারেও সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ফজলে হোসেন বাদশা তার বক্তব্যে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিতে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ^ জনগোষ্ঠীর কাছে আহ্বান জানান। ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগর সভাপতি আবুল হোসাইনের সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কামরুল আহসান, ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, ইয়াসিন আলী এমপি, শেখ টিপু সুলতান এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিরুল হক আমিন, মোস্তফা আলমগীর রতন, সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক কিশোর রায় প্রমুখ। সমাবেশ শেষে সেখানে পাকিস্তানের পতাকায় অগ্নিসংযোগ করে সন্ত্রাসের প্রতিধিক্কার ও ঘৃণা জানানো হয়। সমাবেশ শেষে পাকিস্তান হাইকমিশন অভিমুখে মিছিল করার কথা থাকলেও কূটনৈতিক এলাকা বিবেচনায় পুলিশের অনুরোধে মিছিলের কর্মসূচী বাতিল করা হয়। এ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে পুরো কূটনৈতিক পাড়ায় বাড়তি নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়। পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রায় এক কিলোমিটার আগেই দেয়া হয় কাঁটাতারের বেড়া। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনও পাকিস্তানের হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচী পালন করে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্তি উপ কমিশনার (এডিসি) আহাদুল ইসলাম জানান, কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় ঘেরাওকারীদের গুলশান-২ নং এ আটকে দেয়া হয়। এ সময় তারা সেখানে ১৫-২০ মিনিট অবস্থান করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ বাংলাদেশের নানা ব্যাপার পাকিস্তানের অযাচিত হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে পাকিস্তান দূতাবাস ঘেরাওয়ের চেষ্টা চালায় ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
×