ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গুপ্তহত্যাকারীরা ও তাদের প্রভুরা ঠিকই ধরা পড়বে;###;সর্বোচ্চ সাজা ওদের ভোগ করতে হবে;###;সংসদে প্রধানমন্ত্রী

দেশ উল্টানো যাবে না

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৯ জুন ২০১৬

দেশ উল্টানো যাবে না

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা গুপ্তহত্যাকারী ও তাদের গডফাদারদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, গুপ্তহত্যা করে কেউ পার পাবে না। যারা হত্যা করছে এবং তাদের প্রভুরা যেই হোক না কেন তাদেরও আমরা রেহাই দেব না। যারা এসব গুপ্তহত্যার মাধ্যমে পরিবারগুলোর ক্ষতি করছে তাদের হিসাবও আমরা পাই পাই করে নেব। আর বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা করে তারা যদি মনে করে গুপ্তহত্যা করেই দেশ একেবারে উল্টে দেবে, কিন্তু তা তারা পারবে না। হত্যাকারীরা ঠিকই ধরা পড়বে। হত্যাকারীরা ঠিকই সাজা পাবে এবং সর্বোচ্চ সাজা এই হত্যাকারীরা ভোগ করবে। বুধবার ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। চট্টগ্রামে পুলিশ সুপারের স্ত্রী হত্যার প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারীদের প্রতি প্রশ্নœ রেখে বলেন, আজকে যারা পরিবারের ওপর হাত দিতে শুরু করেছে, তারা কি ভুলে যায় তাদেরও পরিবার আছে। তাদের বাবা-মা আছে। তাদেরও ভাইবোন-স্ত্রী আছে। একদিকে যদি আঘাত আসে তাহলে তো অন্যদিকেও যেতে পারে। এটা কি তারা ভুলে যাচ্ছে? যারা এই ধরনের গুপ্তহত্যা এবং সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত তাদের পরিবারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব ঘটনা ঘটানো থেকে যেন তারা তাদের (গুপ্তহত্যাকারী) পরিবারের সদস্যদের বিরত থাকতে বলে। আজকে যদি তারা এভাবে অন্য পরিবারগুলোর ওপর হাত দিতে শুরু করে তাহলে কিন্তু কারোর হাতই থেমে থাকবে না এবং জনগণকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। সংসদ নেতা আরও বলেন, পরিকল্পিতভাবে যারা গুপ্তহত্যা করে তারা দেশের ক্ষতি করছে। মানুষের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং তাদের হত্যাকা-ের প্যাটার্নটা (ধরন) একই রকম। তারা ঠিক একই জায়গায় কোপ দেয়, একই জায়গায় গুলি করে। একই জায়গায় মারে। তারা একই কায়দায় এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা অনেক ঘটনার আসামি ইতোমধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এখনও যারা ঘটনা ঘটিয়েছে অবশ্যই ইনশাল্লাহ তারা গ্রেফতার হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রধানমন্ত্রী হত্যাকারী ও তাদের প্রভুদের উদ্দেশ করে আরও বলেন, আমি এটাও তাদের বলতে চাই, ১৯৭১ সালে এদেশে যারা গণহত্যা চালিয়েছিল, আমরা কিন্তু ৪৪ বছর পরে এসেও তাদের বিচার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের ফাঁসি হয়েছে। কারণ খুনের মামলা কখনই তামাদি হয় না। সেই যুদ্ধাপরাধীদেরও কিন্তু বিচার হয়েছে। জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছিল, যাদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল। যারা গর্ব করে বলত তাদের বিচার কে করবে? আল্লাহর রহমতে আমরা সেই খুনীদেরও বিচার করেছি এবং রায়ও কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, আজকে যারা গুপ্তহত্যায় লিপ্ত, তারা যদি মনে করে গুপ্তহত্যা করে তারা পার পেয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ তারা পার পেয়ে যাবে না। তারা পার পাবে না। তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবেই হবে। তাদের প্রভু যারাই হোক, তাদেরও আমরা রেহাই দেব না। এটা হলো বাস্তব কথা। এদের বিচার অবশ্যই হবে। আর এ সমস্ত গুপ্তহত্যা করে তারা দেশের এবং মানুষের যে ক্ষতি করছে। পরিবারের ক্ষতি করছে; আমরা এটারও হিসাব পাই পাই করে নেব। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতে আগুন সন্ত্রাস ও পেট্রোলবোমার হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এদের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাটা দেশের জনগণ গ্রহণ করেনি। তারা এর প্রতিরোধ শুরু করে। জনগণের মধ্য থেকেই প্রতিরোধ আসে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাস এদেশে মানুষ পোড়ানোর এক হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আন্দোলনের নাম করে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়। তিনি বলেন, যখন এটা আমরা এবং দেশবাসী প্রতিবাদ করি যখন গণরোষ সৃষ্টি হয়, তখনই এরা ক্ষান্ত দিয়ে বিরত হয়। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি তারা গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পুরোহিত, ইমাম, সেই সঙ্গে শিক্ষকদের হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি যেটা এর আগে কখনও আমরা দেখিনি পুলিশ অফিসার যিনি এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিল। তাঁর স্ত্রীকে কুপিয়ে কুপিয়ে কি নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো! তিনি বলেন, পুলিশের কাজই হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা, অপরাধীদের ধরা। বাংলাদেশে নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- যারা ঘটাতে চেয়েছে এই পুলিশ অফিসার তাদের গ্রেফতার করেছে। বোমা বানানোর সরঞ্জামসহ বহু কিছু উদ্ধার করেছে। ঘাতকরা সেই দক্ষ পুলিশ অফিসারের পরিবারের ওপর হাত দিয়েছে। মাইনাসকারীরাই মাইনাস হয়ে গেছে ॥ ওয়ান ইলেভেন সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ওয়ান ইলেভেনের সময় ২৫ লাখ গণস্বাক্ষর দিয়ে যারা গণতন্ত্র আনতে সহায়তা করেছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ওই সময় অনির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আমার কাছে বার বার আপোসের প্রস্তাব আসে। আমি প্রতিবারই প্রত্যাখ্যান করেছি এবং বলেছি, একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে আমি আলোচনা করতে রাজি নই। ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমানুষের তীব্র আন্দোলন সংগ্রামের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার লেজ গুটাতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন আমি মুক্ত হই। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ওয়ান ইলেভেনের মতো দুর্যোগ বাংলাদেশে আর আসবে না বলে আশা করি। গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত থাকবে। যারা আমাকে ওইসময় মাইনাস করতে চেয়েছিলেন তারা নিজেরাই মাইনাস হয়েছে। আর মাইনাসে মাইনাসে প্লাস হয়ে গেছে। তাই এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেই। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলি। বিএনপির কারণেই ওয়ান ইলেভেন ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের ৫ বছরের মেয়াদে বাংলাদেশকে পরিণত করা হয়েছিল হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছিল দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দেশ, সাংবাদিক নির্যাতনের দেশ আর জঙ্গীবাদের দেশ হিসেবে। তিনি বলেন, তাদের অব্যাহত অপশাসনের ফলে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়। কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় আসার জন্য তাদের আজ্ঞাবহ রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে, তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ওয়ান ইলেভেনের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম হয়। এক শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ॥ সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামালের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ আগামী ১৫ বছরের মধ্যে সমগ্র দেশে ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কার্যকম গ্রহণ করেছে। এ পর্যন্ত ৬৮ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য স্থান নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বিগত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করি। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও দশটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করা হবে।
×