অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ একটি ড্যাটা সেন্টারই বদলে দিচ্ছে অনেক কিছু। কাগজ থেকে ডিজিটাল হবে সরকারী সব কেনাকাটা। অর্থাৎ পুরোপুরি ই-টেন্ডারিং প্রক্রিয়ায় চলে যাবে দেশ। সেজন্য অপেক্ষা আর বেশি দিনের নয়। মাত্র ছয় মাসের মধ্যেই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। ফলে দুর্নীতি, অনিয়ম ও টেন্ডারবাজির দিন ফুরিয়ে আসবে।
উচ্চক্ষমতার ওই ডাটা সেন্টারটি বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের জাতীয় ডাটা সেন্টারে স্থাপন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এর মিরর ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) কার্যালয়ে। নতুন এই ডাটা সেন্টারের মাধ্যমে দেশের মোট ২৫ হাজার সরকারী ক্রয়কারী অফিস ইলেকট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেমে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ বিষয়ে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহারের ফলে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দরপত্রের স্বচ্ছতা আনতে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ই- টেন্ডারিংয়ের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাইলট প্রকল্পের সফলতার পর দেশের সব সরকারী কেনাকাটা অনলাইন প্রক্রিয়ায় আনতে কেনা হচ্ছে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন ডাটা সেন্টার। এটি স্থাপনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অধীন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক থাকরাল ইনফরমেশন সিস্টেমস প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে সম্প্রতি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তির আওতায় উচ্চ ক্ষমতার ওই ডাটা সেন্টারটি স্থাপন করে দেবে কোম্পানি। তা ছাড়া নতুন ডাটা সেন্টার স্থাপনের পর পাঁচ বছর পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সিপিটিইউ দেশে সরকারী ক্রয়ের ডিজিটাল রূপান্তর করছে।
এ প্রসঙ্গে সিপিটিইউর মহাপরিচালকক ফারুক হোসেন বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের তিন মাসের মধ্যেই নতুন ডাটা সেন্টার স্থাপনে আমরা আশাবাদী। সে হিসেবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই স্থাপন কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এটি হলে সরকারী সব দরপত্র অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসতে আর তেমন কোন বাধা থাকবে না। সূত্র জানায়, দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি ঠেকাতে সরকারের অন্যতম এ উদ্যোগের প্রাথমিক কার্যক্রমে ই-টেন্ডারিং সফল হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ পদ্ধতির সুফল মিলছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গৃহীত এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সরকারী অফিস। ইতোমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এই পদ্ধতিতে। ফলে ঘরে বসেই দরপত্র-সংক্রান্ত সকল কাজ করতে পারছেন ঠিকাদাররা। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দরপত্রের প্রস্তাব, মূল্যায়ন চুক্তি ব্যবস্থাপনা ও ই-পেমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কাজই স্বল্প সময়ে, সহজে ও সমন্বিতভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ই-টেন্ডারিং এ বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ভাল করেছে। এ প্রক্রিয়ার পাইলট কার্যক্রম সফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ই-টেন্ডারিং মূল্যায়ন-সংক্রান্ত ১১ সদস্যের একটি মিশন এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ডাটা সেন্টার কিনতে ১০ কোটি মার্কিন ডলার অতিরিক্ত ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
সিপিটিইউ সূত্র জানায়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ই-জিপির আওতায় নিয়ে আসতে ডাটা সেন্টার স্থাপনের পাশাপাশি ইতোমধ্যেই যেসব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, যারা ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তাদের প্রশিক্ষণ, তা ছাড়া ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলছে। এ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে বর্তমান পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত চলমান চারটি টার্গেট এজেন্সির মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই ল্যাবে ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হবে। সিপিটিইউতে ই-জিপি বাস্তবায়নে জড়িত বেসরকারী সংস্থা দোহাটেকও ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে। সিপিটিইউ-এর সক্ষমতা বাড়াতে সিপিটিইউকে একটি কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার বিষয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) আওতায় রেগুলেটরি ইউনিট হিসেবে কাজ করছে। যা শুধু মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে কিন্তু কোন নির্দেশ দিতে পারে না। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সিপিটিইউ সূত্র জানায়, উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা ও সরকারি অর্থ ব্যয় অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যই ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ২০১১ সালের ২ জুন এ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ক্রয় প্রক্রিয়া ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি দূর করতে অনেক আগে থেকেই দাতা সংস্থাগুলো চাপ দিয়ে আসছিল। এ অবস্থায় প্রথম পর্যায় সরকারী চারটি সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ই- টেন্ডারিং চালু করা হয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রতিবছর সরকারীভাবে যে ক্রয় কাজ করা হয় তার অধিকাংশই এ চারটি সংস্থা সম্পন্ন করে থাকে। তাই এই ৪টি বৃহৎ সংস্থাকেই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল।