ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদা বনাম চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৯ জুন ২০১৬

চাঁদা বনাম চাঁদাবাজি

অর্পিতা সুলতানা সমাজে ভাল-মন্দ দুটোই থাকে। কিন্তু সেই ভাল-খারাপের যে কোন একটা যখন আরেকটাকে ছাপিয়ে যায়, তখন সমাজের রূপরেখা সেই আদলেই গঠিত হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাঁদা উত্তোলনটা মহৎ উদ্দেশ্যে প্রচলিত হলেও বর্তমানে সেটাই আজ একটি শ্রেণীর মানুষের পেশার অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ অন্যায় ভাবে মানুষের ওপর জোরপূর্বক অর্থ সংগ্রহ করা। যার কারণে চাঁদার কথা শুনলেই অনেকে ভয় পান। তবে একটা বিষয় সুস্পষ্ট হওয়া দরকার, চাঁদা আর চাঁদাবাজির মধ্যে পার্থক্য। চাঁদা কোন ভাল কাজ করার লক্ষ্যে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা তাদের আয়কৃত অর্থ থেকে খুশি মনে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু অর্থ প্রদান করা। আর ভাল কাজটি তখনই জঘন্য অপরাধ ঘৃণিত বস্তুতে পরিণত হয় যখন চাঁদার সঙ্গে বাজি শব্দটা সংযুক্ত করা হয়। রাজনৈতিক কুচক্রী মহল, মাদকাসক্ত যুবসমাজের একটি অংশ অতিমাত্রায় চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক নির্ধারণ করে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্যরে কথা না বিবেচনা করে প্রভাব খাটিয়ে আদায় করে নেয়ার প্রবণতাই হচ্ছে চাঁদাবাজি। এর থেকে শিক্ষকম-লী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবধি বাদ পড়ছে না। আবার রাস্তাঘাটে পিস্তল ঠেকিয়ে চাঁদাবাজি করা যেন নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। অনেক সময় চাঁদাবাজি করতে গিয়ে খুনের মতো জঘন্য অপরাধ করছে তারা। এমনকি চাঁদার টাকা আদায়ের জন্য কোমলমতি শিশুদের জিম্মি করে পরিবারকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। নিজেদের নিরাপদ রাখার জন্য শিশুদের হত্যা করে বস্তাবন্দী লাশ ফেলে রেখে যায় ডোবা-নালা, পুকুর, নদীতে। চাঁদাবাজি সমাজে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এর থেকে উত্তরণের জন্য সমাজের বিবেকবান মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। এ ধরনের অপরাধজনক কর্মকা-ের ফলে সমাজকে ক্ষতির হাত থেকে মুক্ত করার জন্য, যুবসমাজসহ যারা এ ধরনের জঘন্য কর্মকা-ে লিপ্ত তাদের এ ধরনের কর্মকা-ে লিপ্ত হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে তা অনুসন্ধান করতে হবে। যেমন- মাদকাসক্ত, বেকারত্ব, হতাশাগ্রস্ত, পরিবেশগত কারণে অপরাধপ্রবণতা সৃষ্টি, অন্যের প্ররোচনায় পড়ে ও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ইত্যাদি বিষয় চিহ্নিত করা। সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে যারা এ ধরনের কর্মকা- অর্থাৎ চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত তারা কিন্তু চাঁদাবাজ হয়ে জন্মগ্রহণ করেনি। তাই শিশু বয়স থেকে বাবা-মায়ের উচিত চাঁদাবাজি কতটা জঘন্য অপরাধ সে সম্পর্কে শিশু মনে মূল্যবোধ তৈরি করা। চাঁদাবাজির মতো জঘন্য অপরাধ সম্পর্কে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে শিক্ষকম-লীকে পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। তবে একটা রোগ যখন মহামারী আকার ধারণ করে তার প্রতিরোধক টিকা তৈরি হলেও তাকে শিকড় থেকে নির্মূল করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তেমনই চাঁদাবাজি আমাদের সমাজে যেভাবে শিকড় বিস্তার করেছে তার মূল উৎপাটন করা কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনকে গ্রহণ করতে হবে কঠোর অবস্থান। সামাজিক মাধ্যমগুলোকে হতে হবে তৎপর। টেলিভিশন, ফেসবুক, এফএম রেডিও ও পত্রপত্রিকাগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মানবিক বোধের উন্মেষ ঘটানোর মধ্য দিয়ে চাঁদাবাজির মতো জঘন্য অপরাধ থেকে চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা সম্ভব। হীরাডাঙ্গা, ঝিনাইদহ থেকে
×