ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দলের নাম ভাঙিয়ে অর্থোপার্জন

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৯ জুন ২০১৬

দলের নাম ভাঙিয়ে অর্থোপার্জন

হাছান তৌফিক পারভেজ পূর্ব প্রচলিত ধারণায় ‘চাঁদা’ শব্দটি মূলত কোন মহৎ উদ্দেশ্য ও উদ্যোগের নিমিত্তে অবদান রাখার আশায় নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী যে ‘সামান্য পরিমাণ’ টাকা দিয়ে অংশগ্রহণ করা হয়ে থাকত তাই ‘চাঁদা’ নামে পরিচিত। কিন্তু বর্তমান যুগে ‘চাঁদা’ শব্দটি ভিন্ন আঙ্গিকে এবং নেতিবাচক মাত্রায় ব্যবহার হয়ে আসছে। বলাইবাহুল্য তা কোন মহৎ উদ্দেশ্যে ও উদ্যোগের নিমিত্তে ব্যবহৃত হচ্ছে না। এখন মূলত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রায় জোরজবরদস্তিপূর্বক সাধারণের কাছ থেকে যে ‘সামান্য পরিমাণ’ টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে তাই চাঁদা নামে পরিচিত। এই ‘সামান্য’ টাকা সংগ্রহের কার্যক্রমকে হয়ত ‘চাঁদাবাজি’ নামে অভিহিত করা যেতে পারে। আজকের যুগে চাঁদা, চাঁদাবাজ, চাঁদাবাজি এই শব্দত্রয়ের সঙ্গে মূলত কেন যেন একটি রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ার গন্ধ পাওয়া যায়। রাজনীতিই যেন আজ এই চাঁদাবাজদের অর্থ উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? কেন আজ ‘রাজনীতি’ চাঁদাবাজদের অর্থ উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে? এর জন্য দায়ী কে বা কারা? তাহলে কি ধরে নিতে হবে রাজনীতিবিদরাই এই চাঁদাবাজদের মদদ দিচ্ছেন। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্থানীয় পর্যায়ের অনেক রাজনীতিবিদ নিজেরা এই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। এমনকি এই চাঁদাবাজি করেই অনেক ‘তথাকথিত’ রাজনীতিবিদ অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে উঠেছেন এবং উঠছেন। তাহলে অসহায় ‘জনগণ’ কোথায় যাবে বা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি যদি চাঁদাবাজি করে থাকেন তাহলে তারা কার কাছে এর বিরুদ্ধে বিচার চাইবে? যে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিজে চাঁদাবাজি করে থাকেন তিনি চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন? সেটা কি তার পক্ষে সম্ভব হবে? সোজাসুজি উত্তর হচ্ছে ‘না’। তাহলে চাঁদাবাজি থেকে মুক্তির উপায় কী? মুক্তির উপায় হতে পারে নিম্নরূপ- ১. যে সব স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় ‘রাজনীতিবিদ’ নিজেরা চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে নির্মোহ ভঙ্গিতে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক দল থেকে বহিষ্কার করে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এতে করে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের দলীয় ইমেজ জনসাধারণের কাছে বৃদ্ধি পাবে। ২. রাজনৈতিক টাউট-বাটপাড়-জোচ্চোরদের রাজনৈতিক দলে স্থান দেয়ার বিরুদ্ধে দলীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক জনসাধারণের কাছে দলীয় ইমেজ বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে রাজনৈতিক টাউট-বাটপাড়-জোচ্চোররা দলীয় ইমেজ কখনই বৃদ্ধি করতে পারে না এবং পারবেও না। এটাই সত্য। আর জনসাধারণ সত্যের পক্ষেই থাকবে। ৩. সবাইকে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ৪. প্রয়োজনে চাঁদাবাজদের অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের বিপথগামী সন্তানদের সুপথে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। মিরপুর, ঢাকা থেকে
×