ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষিত চাঁদাবাজ

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৯ জুন ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ চাঁদাবাজি

মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সেই ষাট দশকের কথা বলি। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকা- যেমন নাটক, যাত্রা, পালা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা তুলে অনুষ্ঠান পালন করা হতো। তখন সবাই মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে চাঁদা দিত। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাড়ায় পাড়ায় চাঁদা তুলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার, বস্ত্র সহ অনেক কিছু দেয়া হতো। কি সুন্দর একটি মহৎ কাজ ছিল। আর এখন চাঁদাবাজীর স্টাইলটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন মানুষের মহৎ চিন্তা-ভাবনা নেই বললেই চলে। এখন চাঁদাবাজী হচ্ছে বিনাপুঁজিতে ব্যবসা। এটি এখন অপরাধে পরিণত হয়েছে। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে চাঁদাবাজী চলে না। সড়ক-মহাসড়ক, ফুটপাতে, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে, যান-বাহনে সব জায়গায় চাঁদাবাজী মহাসমারোহে চলছে। ভাল স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে মোটা অংকের চাঁদা দিতে হয়। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই চাঁদাবাজীর সঙ্গে জড়িত। মুখোশপরা সমাজপতি, রাজনীতিবিদ ছাত্রনেতা, সন্ত্রাসী সবাই জড়িত। এমনকি চাঁদাবাজিতে এগিয়ে আছে জনগণের বন্ধু আমাদের পুলিশ ভাইরাও। তবে সব পুলিশ নয়। অনেক পুলিশ ১০ টাকার জন্য হাত পেতে বসে থাকে। চাঁদাবাজীর সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে পুলিশের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসী মাস্তানির চাঁদাবাজী আর পুলিশের চাঁদাবাজী একে অপরের সহায়ক। চাঁদাবাজীতে পুলিশ আর মাস্তান যেন খালাত ভাই। এরাই এখন চাঁদাবাজীর শীর্ষ স্থান দখল করে আছে। পৃথিবীর আর কোন দেশে এই রকম চাঁদাবাজী আছে কিনা জানি না। দেশটা মনে হচ্ছে চাঁদাবাজদের খনি। এটা এখন মহাব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন আসে মুক্তির উপায় কি? উত্তর একটাই। আইন আছে, আইনের প্রয়োগ নেই। শুধু এই কথাটি বিশ্লেষণ করলে প্রশ্নের সব উত্তর বেরিয়ে আসবে। প্রশাসনের লোকেরা যখন চাঁদাবাজীকে লিপ্ত হয় তখন আমি মনে করি লেখা পড়া শিখিয়ে মা-বাবা তাদের শিক্ষিত চাঁদাবাজ তৈরি করেছে। চাঁদাবাজীকে প্রতিরোধ করতে সামাজিক প্রতিরোধ খুবই দুর্বল। কারণ সবার মাঝে সহযোগিতার মনোভাব নেই। নিজের নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা ও আত্মশুদ্ধি এবং রাষ্ট্র ও সরকারের কঠোর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে চাঁদাবাজী অনেকাংশে কমে আসবে। একটি কথা মনে রাখতে হবে। প্রতিটি ঘরে স্ত্রী-পুত্র কন্যারা যেন চাঁদাবাজদের বলে-‘তোমার চাঁদাবাজীর হারামের টাকায় আমাদের লালন-পালন করো না‘। দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর, চট্টগ্রাম থেকে
×