ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ করানোই ব্রত

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৯ জুন ২০১৬

কাজ করানোই ব্রত

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নে পরিবেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমাদের পরিবেশমন্ত্রী এমন কিছু কথা বলেছেন যাতে তার পরোক্ষ ক্ষোভ অপ্রকাশিত থাকেনি। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের চার ভাগের তিন ভাগ কর্মকর্তা বছরের অধিকাংশ সময় বিদেশ ভ্রমণে থাকেন। এ মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তারা বিদেশ যায় জ্ঞান অর্জনের জন্য। তারা ভ্রমণের জন্যও বিদেশ যায়। প্রথম প্রথম নিষেধ করতাম, তবে এখন আর করি না। এ মন্ত্রণালয় সৃষ্টি হয়েছে বিদেশী অর্থ আহরণের জন্য; কোন কাজ করার জন্য নয়।’ বলা দরকার, জাতীয়ভাবে আমাদের পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের তরফ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে বেশ কিছু। ১৯৮৯ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় নামে আলাদা মন্ত্রণালয় সৃষ্টি হয়। একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে অধিদফতরটি নতুন নামকরণ হয়ে পরিবেশ অধিদফতর গঠিত হয় এবং ১৯৯৫ সালে তৈরি পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের আওতায় তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৯২ সালে গৃহীত জাতীয় পরিবেশ নীতি বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয় পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্মপরিকল্পনা অনুসরণে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫। আইনের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান সম্ভব হয়েছে। তারপরও ভয়াবহ পরিবেশ দূষণে অস্বাস্থ্যকর অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে দেশের মানুষ। পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণে হুমকির মুখে মানবস্বাস্থ্য। তবে পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সব কিছুর আগে সতর্ক থাকতে হবে যাতে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যে কোন ধরনের বৈরী কর্মকা- প্রতিহত করা সম্ভব হয়। এর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় গাছ লাগাতে হবে ব্যাপক হারে। একটি সবুজ প্রকৃতি গড়ে তোলা জরুরী, কারণ তা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, সুস্বাস্থ্য ও সুখী জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শব্দ দূষণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। শব্দ দূষণের কারণে আগামী প্রজন্ম মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানাতে দেখেছি আমরা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। তবে এই কাজে তারা নিজেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেই নাগরিকবৃন্দ খুশি হবেন। ভূপৃষ্ঠের যে বিশাল জলরাশি সমুদ্র, হ্রদ, নদী ও খাল-বিলে বহমান, এমনকি ভূ-গর্ভে যে বিশাল জলরাশি সঞ্চিত রয়েছে তা অপরিমেয়। কিন্তু এ বিপুল পানির সবটুকুই ব্যবহার উপযোগী নয়। পৃথিবীর প্রায় ১১০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয় জল পায় না। তাছাড়া ২৬০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানির অভাবে মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশ্ব পানি দিবসে মানবজাতির জন্য ভয়াবহ এ রিপোর্ট প্রকাশ করে জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক সেল। এই সেক্টরেও আমাদের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের করণীয় রয়েছে অনেক। মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি ও ধরন নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ভেতর অসন্তুষ্টি বিরাজ করতেই পারে। এই অসন্তুষ্টিকে বরং আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখতে পারি। অসন্তোষ, অতৃপ্তি ও ক্ষোভ দায়িত্ববান ব্যক্তিকে আরও কৌশলী, কর্মতৎপর ও সৃজনশীল হতে সহায়তা করে। একটি মন্ত্রণালয় চালাতে গিয়ে তাই হাল ছেড়ে দেয়া কাম্য হতে পারে না। বরং অনিয়ম ও অসঙ্গতিসমূহ চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণই যক্তিযুক্ত। সমালোচনা বা হতাশা নয়, আমরা দায়িত্বশীল পদাধিকারীর কাছে চাই সক্রিয়তা, সক্ষমতা। কাজই হোক ব্রত। সেই কাজ নিজে করা এবং অন্যকে দিয়ে করানো- দুটিই জরুরী।
×