ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে বিদ্যুত-গ্যাস-পানি

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৯ জুন ২০১৬

রমজানে বিদ্যুত-গ্যাস-পানি

রমজান মাসে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা স্বভাবতই অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে সংযমের মাসটি পালনে মনোনিবেশ করে থাকেন। ধর্মীয় নিয়ম ও বিধিবিধান মতো এবাদত-বন্দেগীতে সময় অতিবাহিত করেন। মসজিদে মসজিদে শুরু হয় খতমে তারাবি, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই চলে ব্যাপক প্রস্তুতি ও আয়োজন। বাজার ভর্তি নানাবিধ পণ্যদ্রব্যের সমারোহ। কমতি নেই কোন কিছুর। অথচ কোন কোন নিত্যপণ্যে কেন যেন অকারণে অস্থিরতা। বৃষ্টি ও বর্ষার মৌসুম শুরু হয়নি এখনও। এ সময়ে বেগুন, শসার দাম বাড়ার কথা নয়। অথচ রোজা শুরুর আগের দিনই বেগুনের দাম লাফিয়ে উঠল ৮০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি কেজি। শসা ৪০ থেকে ৬০ টাকা বুট বা ছোলার দাম একলাফে ৬০ থেকে বেড়ে ৯০-১০০ টাকা কেজি। অনুরূপ মাছ-মাংস-মুরগি-ডিম-ডাল-তেল ও অন্য কিছু পণ্যে। দাম বাড়ার সপক্ষে ব্যবসায়ীরা যে ব্যাখ্যাই দিন না কেন, চাহিদা ও যোগানের মধ্যে এত বিস্তর পার্থক্য নেই যে, দাম এত বাড়বে! আসলে এক শ্রেণীর অসৎ ও অসাধু ব্যবসায়ী ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রায় জিম্মি করে এই সংযমের মাসেও লোভের বশবর্তী হয়ে অতি মুনাফা করতে চান। এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর উচিত হবে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে তাদের সংযত করা। রমজান শেষে ঈদ-উল-ফিতর। তখন যেন পণ্যের দাম আরও একধাপ না বাড়ে সেদিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত এখন থেকেই। রমজান মাসে ঘরে ঘরে এবং মসজিদগুলোতে বিদ্যুত, পানি ও গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে এসব ক্ষেত্রেও তেমন সুসংবাদ নেই বলে জানা গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রে। বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল অনেকটা যেন পরিহাসের সুরে বলেছে, রমজানে বিদ্যুত পরিস্থিতি হবে আবহাওয়ানির্ভর। অর্থাৎ নিয়মিত বৃষ্টি-বাদলের ফলে আবহাওয়া কিছুটা ঠা-া থাকলে ভাল থাকবে বিদ্যুত পরিস্থিতি। আর তা না হলে বা গরম তীব্র হলে খারাপ হবে বিদ্যুতের অবস্থা। রবিবার দেশে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হলেও ঢাকাসহ অনেক স্থানেই ছিল লোডশেডিং। রমজানে উৎপাদন ও চাহিদার ব্যবধান থাকবে কমপক্ষে ১ হাজার মেগাওয়াট। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত গ্যাস সরবরাহ করা দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো সেখানেও দেখা দিয়েছে সঙ্কট। নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার ও উত্তোলন পর্যায়ে না থাকায় এহেন সমস্যা। আপাতত বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশনগুলোতে এবং যমুনা সারকারখানা ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টে সরবরাহ বন্ধ রেখে গ্যাস দেয়া হবে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোতে। তবে তাতে বাসাবাড়ি ও শিল্প-কারখানাগুলোতে বিঘিœত হবে গ্যাস সরবরাহ। ফলে ঘরে ঘরে গৃহিণীদের কিছু দুর্ভোগ বাড়বে। অন্যদিকে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা-বোনাস পরিশোধে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ সময়ে গ্যাসের ঘাটতি থাকবে ৩৫ কোটি ঘনফুট। একইভাবে রাজধানীতে পানির ঘাটতি থাকবে ৩০ কোটি লিটার। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা হবে আরও খারাপ। ফলে নানারকম নাগরিক দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই রমজান পার করতে হবে দেশবাসীকে। সত্য বটে, জনসংখ্যা অনুপাতে সীমিত সম্পদ নিয়ে এসব সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে সরকারকে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। রাতারাতি একযোগে সব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। বর্তমান সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন নেই। গত ক’বছরে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে যথেষ্ট সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সমস্যারও সমাধান হবে। সে অবস্থায় ধৈর্য ধরতে হবে জনসাধারণকে।
×