ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিল আহমেদ

হাসপাতাল ও সাহায্যকর্মীরা আজ যুদ্ধের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ৮ জুন ২০১৬

হাসপাতাল ও সাহায্যকর্মীরা আজ যুদ্ধের টার্গেট

মানবিক সাহায্য বিশেষজ্ঞ মাইকেল থফম্যান বলেছেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা সংঘাতে লিপ্ত দেশগুলোতে সাহায্য সমর্থন দিয়ে হত্যাকা-ে সহযোগিতা করছে। মেডিসিন্স সানস প্রন্টিয়ারস নামে একটি সাহায্য সংস্থার এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধের সময় হাসপাতাল ও মানবিক সাহায্য কর্মীদের হামলার টার্গেট করা দ্রুত এক নতুন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হচ্ছে। হাসম্যান এ ব্যাপারে এক নিরাপদ চিত্র তুলে ধরে বলেন, বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর পরিবর্তে প্রচলিত সেনাবাহিনীগুলোই বারংবার যুদ্ধের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করছে। তিনি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ভর্ৎসনা করে বলেন, এদের মধ্যে চারটি সদস্য দেশ এমন সংঘাতে জড়িত যেখানে চিকিৎসা কর্মীদের টার্গেট করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৫০-এর দশকে কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকে এমন পরিস্থিতি আর হয়নি। তিনি সিরিয়ার লড়াইকে নোংরা যুদ্ধ আখ্যায়িত করে বলেন, বাশার আল আসাদ সরকার ও বিদ্রোহীরা উভয়েই হাসপাতালগুলোকে টার্গেট করেছে। তবে রাষ্ট্রগুলোর হাতেই আছে অধিকতর বিধ্বংসী ক্ষমতা। হফম্যান বলেন, আমরা যখন হাসপাতালে বোমাবর্ষণের কথা বলি সেই বোমাবর্ষণ বিমানবাহিনীর কাজ। বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর বিমান বাহিনী নেই। কাজেই বোমাবর্ষণের ঘটনাগুলো একান্তভাবে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর যাদের অস্ত্রবল অনেক বেশি। অথচ দেশগুলো সবই জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। সম্প্রতি সিরিয়ার বিরোধী দল অধিকৃত ইদলিব শহরে একাধিক বিমান হামলার পর জাতীয় হাসপাতালটি সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর ওপর সর্বশেষ হামলায় কমপক্ষে দু’ডজন সিভিলিয়ান নিহত হয়। গত মাসে এমএসএফ ও আন্তর্জাতিক রেডক্রসের সাহায্য সমর্থনপুষ্ট আলেপ্পোর এক হাসপাতাল সিরিয়া সরকারের বিমান হামলায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এতে ঐ এলাকার এক শিশু বিশেষজ্ঞ নিহত হয়। তিন দিন পর নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিদ্রোহী বাহিনীর গোলাবর্ষণে একটি মাতৃসদন আংশিক ধ্বংস হয়। মেডিক্যাল স্থাপনাগুলোর ওপর এই সিরিজ হামলা থেকে প্রমাণ হয় যে যুদ্ধে সাহায্য কর্মীদের সুপরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন সিরিয়ায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে বলেছিল যে বাশার সরকার মেডিক্যাল স্থাপনাগুলোর ওপর হামলাকে সুপরিকল্পিতভাবে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধেও মেডিক্যাল স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা হয়েছে। গত ৩ মে নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধাঞ্চলে মেডিক্যাল কর্মী ও হাসপাতালগুলোর ওপর হামলার অবসানের দাবি জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। তবে হফম্যান বলেন, যুক্তরাজ্যসহ যারা এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে এসব হত্যাকা-ের সঙ্গে তাদের যোগসাজশ আছে। হফম্যান যেসব দেশ ও কোয়ালিশন হাসপাতালগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছে তাদেরকে নিরাপত্তা পরিষদের চার সদস্যের দেয়া সামরিক ও লজিস্টিক সাহায্যের কথা বলছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনকে লজিস্টিকস সহায়তা এমনকি শোনা যায়, হামলার টার্গেটিং ডাটাও দিয়েছে। অন্যদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইয়েমেন হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে সৌদি আরবকে কোটি কোটি ডলারের অস্ত্র যুগিয়েছে। রাশিয়া সিরিয়া বাশার সরকারের পক্ষে হস্তক্ষেপ করে পতনের হাত থেকে রক্ষা করেছে এবং বারবার বিমান হামলা চালিয়ে অসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা করেছে। এসব হত্যাকা-ের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরাও দায়ী বলে হফম্যান উল্লেখ করেন। কারণ তারা হলো কোয়ালিশনের অংশ যারা বোমা অভিযান চালিয়েছে। রাশিয়ার মতো তারা আলেপ্পোর হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করেনি বটে তবে তারা সিরিয়া সরকারের সঙ্গে সেই কোয়ালিশনের অংশ যারা এমন কাজ করছে। হফম্যান বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের অবশিষ্ট একমাত্র স্থায়ী সদস্য চীনই কোথাও বোমাবর্ষণ করছে না। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এমএসএফের এক রিপোর্টে সিরিয়া জুড়ে হাসপাতালগুলোতে ৯৪টি বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করা হয়। সে মাসেই ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস নামে এক এনজিও জানায় যে, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের কাছে ১৭৫টি স্বাস্থ্য স্থাপনার ২২৪টি হামলা এতে ৫৯৯ জন মেডিক্যাল কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা রেকর্ড করা আছে।
×