ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বড় মূলধনী কোম্পানির ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত শিথিল হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৮ জুন ২০১৬

বড় মূলধনী কোম্পানির ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত শিথিল হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বড় পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানির উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের শর্ত কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে স্বল্প পরিশোধিত মূলধনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ পরিচালকদের জন্য সহজসাধ্য হলেও বড় মূলধনী কোম্পানির ক্ষেত্রে (বিশেষ করে ব্যাংক) তা বেশ কঠিন। মূলত এই কারণেই বড় মূলধনী কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিচালকদের দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে কমিশন। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের মতামত চেয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও মতামত জানাননি এ্যাটর্নি জেনারেল। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এ-সংক্রান্ত মতামত হাতে পেতে পারে বলে ধারণা করছে বিএসইসি। মতামত হাতে পেলেই এক মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার। এদিকে ব্যাংক মালিকদের সংগঠনের (বিএবি) পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছে। অর্থমন্ত্রী বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখার আশ্বাসও দিয়েছেন বলে একাধিক স্টেকহোল্ডাররা নিশ্চিত করেছেন। বিএসইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ওপর ভিত্তি করে পরিচালকদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ নির্ধারণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন-নির্ভর করছে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামতের ওপর। আশা করা যাচ্ছে, আগামী এক মাসের মধ্যে হয়ত চূড়ান্ত হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে মূলধনের ওপর ভিত্তি করে চার ভাগে কোম্পানিগুলোকে ভাগ করা হতে পারে। এটি চূড়ান্ত হলে, যে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি, ওই কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে দশমিক ৫০ থেকে এক শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। আর যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার মধ্যে সে কোম্পানির পরিচালকদের এককভাবে শেয়ার ধারণ করতে হবে কমপক্ষে এক শতাংশ। এছাড়া কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৪০০ থেকে ৭৫০ কোটি টাকার মধ্যে হলে ওইসব পরিচালককে এককভাবে শেয়ার ধারণ করতে হবে এক দশমিক ৫০ শতাংশ। সর্বশেষ পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকার নিচে হলে কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিচালকদের আগের মতো ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে বলে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হতে পারে। এর আগে বড় পরিশোধিত মূলধনের কারণে পরিচালকদের শেয়ার ধারণে সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে বিএসইসিকে চিঠি দিয়েছিল পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল বিএসইসিকে লিখিতভাবে জানান কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তসরিবুল ইসলাম চৌধুরী। যেখানে বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ২২ নবেম্বরের নির্দেশনা থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে অব্যাহতি চাওয়া হয়। কিন্তু পরিচালকদের ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণ অব্যাহতির আবেদন বিবেচনার কোন সুযোগ নেই বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে সাফ জানিয়ে দেয় বিএসইসি। এ সংক্রান্ত নির্দেশনার ওপর হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল থাকা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও রায়ের বিপক্ষে মামলা বিচারাধীন থাকায় আবেদন বিবেচনা করেনি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ওই বছরের ২৫ নবেম্বর বিএসইসি লিখিতভাবে বিষয়টি নাকচ করে দেয়। এর আগে ওই বছরের ১৪ অক্টোবর বিএসইসির ৫২৯তম নিয়মিত কমিশন সভায় ইউনাইটেড এয়ারের আবেদন বিবেচনার সুযোগ নেই বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে সৃষ্ট শেয়ারবাজারের ধস ঠেকাতে ২০১১ সালের ২২ নবেম্বর পরিচালকদের শেয়ার ধারণ নিয়ে নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। এ ক্ষেত্রে পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ ও ব্যক্তিগতভাবে ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা দিয়ে ৬ মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। অন্যথায় ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানি রাইট শেয়ার ও পুনঃগণপ্রস্তাবের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে না বলে জানানো হয়। একই সঙ্গে ন্যূনতম দুই শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ পরিচালকেরা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদ হারাবে বলে নির্দেশ দেয় বিএসইসি।
×