ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কানিজ কোহিনূর শম্পা

দিন ফুরাল সেরেনার

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৮ জুন ২০১৬

দিন ফুরাল সেরেনার

আবারও ব্যর্থ সেরেনা উইলিয়ামস। এবারও তীরে এসে তরী ডুবালেন আমেরিকান টেনিসের জীবন্ত কিংবদন্তি। রোঁলা গ্যাঁরোর ফাইনালে স্পেনের গারবিন মুগুরুজার কাছে হেরে যান তিনি। এর ফলে টেনিসের উন্মুক্ত যুগে সর্বোচ্চ ২২ গ্র্যান্ডসøামজয়ী স্টেফি গ্রাফের রেকর্ডে ভাগ বসানোর অপেক্ষাটা আরও বেড়ে গেল তার। শুধু তাই নয়, টানা তিন গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টে ব্যর্থ হওয়া কারণে আমেরিকান টেনিস তারকার ক্যারিয়ারই শেষ দেখছেন অনেকে। অথচ প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে কি জিতেন নাই সেরেনা উইলিয়ামস? তার বয়স যখন ১৭ বছর। ঠিক তখনই গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্ট জিতে টেনিস বিশ্বকে চমকে দেন তিনি। এরপরের সময়টাতেও টেনিস কোর্টে রাজত্ব করেন এই বিস্ময় বালিকা। অসামান্য সব কীর্তি গড়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন ইতিহাসের সোনালি পাতায়। গত মৌসুমেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন সেরেনা। চার গ্র্যান্ডসøাম টুর্নামেন্টের তিনটিতে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু প্রথম তিন মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপাজয়ী সেরেনা উইলিয়ামস বছরের শেষ গ্র্যান্ডসøাম ইউএস ওপেনেই থেমে যান। ইতালিয়ান টেনিস তারকা রবার্টা ভিঞ্চির কাছে হেরে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যান তিনি। চলতি বছরের শুরুটাও বেশ ভালভাবে করেছিলেন সেরেনা। দুর্দান্ত পারফর্মেন্স উপহার দিয়েই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে জায়গা করে নেন তিনি। কিন্তু শিরোপা জয়ের লড়াইয়েই স্বপ্নভঙ্গ হয় তার। বছরের প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে জার্মানির এ্যাঞ্জেলিক কারবারের কাছে হেরে যান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান। এরপর ইন্ডিয়ান ওয়েলসের শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে সেরেনাকে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেন বেলারুশের ভিক্টোরিয়া আজারেঙ্কা। তবে মিয়ামি ওপেনে একেবারেই বাজে পারফর্ম করেন তিনি। শেষ ষোলোতে রাশিয়ান তারকা সভেতলনা কুজনেতসোভার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েন পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি উচ্চতার এই আমেরিকান। নতুন বছরের প্রথম তিন টুর্নামেন্টে না পারলেও রোম মাস্টার্সে আর ভক্ত-অনুরাগীদের হতাশ করেননি সেরেনা। ফাইনালে স্বদেশী মেডিসন কেইসকে হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন তিনি। দীর্ঘ ৯ মাস পর শিরোপাÑখরা ঘুচিয়ে স্বরূপে ফেরার ইঙ্গিত দেন তিনি। পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখনে বছরের দ্বিতীয় মেজর টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেনেও। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই অসাধারণ খেলে ফাইনালে জায়গা করে নেন সেরেনা উইলিয়ামস। কিন্তু ফাইনালেই হেরে যান ৭০ শিরোপার মালিক। ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতলেই নতুন মাইলফলক স্পর্শ করার হাতছানি ছিল সেরেনার। টেনিসের উন্মুক্ত যুগে ২২ গ্র্যান্ডসøামজয়ী স্টেফি গ্রাফের রেকর্ডে ভাগ বসাবেন তিনি। কিন্তু টানা দুই মেজর টুর্নামেন্টের ফাইনালে হেরে সমর্থকদের হতাশ করলেন সেরেনা উইলিয়ামস। সেরেনার চেয়ে ১২ বছরের ছোট গারবিন মুগুরুজা। গত মৌসুমে উইম্বল্ডনের ফাইনালে জায়গা করে নিলেও সেরেনা উইলিয়ামসের অভিজ্ঞতার কাছে হেরে যান তিনি। তবে এবার নিজেকে প্রমাণ করেই রোঁলা গ্যাঁরোয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন মুগুরুজা। সেইসঙ্গে সেই হারের প্রতিশোধটাও নিয়ে নিলেন তিনি। অসামান্য এই কীর্তি গড়ে স্প্যানিশ টেনিস তারকা দারুণ আনন্দিত। সেরেনাকে হারানোর পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। কারণ নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি যে, আমি আসলেই ভাল খেলতে পারি। চাপ সামলে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে জিততে পারি।’ ক্যারিয়ারের প্রথম মেজর শিরোপা জয়ের পেছনে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাকেই মূলচাবি হিসেবে মন্তব্য করেছেন মুগুরুজা, ‘শুধু আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে খেলতে পারাটাই এখানে চ্যাম্পিয়ন হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করি আমি।’ ফ্রেঞ্চ ওপেনে পুরুষ এককে গত এক দশক ধরেই স্প্যানিশ রাজত্ব। ২০০৫-১০১৪ সাল পর্যন্ত মাত্র একবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি রাফায়েল নাদাল। তাছাড়া বাকি নয়বারই রোঁলা গ্যাঁরোর শিরোপা নিজের করে নিয়েছেন। কিন্তু মহিলা এককে ফ্রেঞ্চ ওপেনে স্প্যানিশরা ছিলেন একেবারেই নিষ্প্রভ। ১৯৯৮ সালে শেষ কোন স্প্যানিশ খেলোয়াড় হিসেবে ফরাসী ওপেনের শিরোপা জিতেছিলেন। এবার স্প্যানিশদের দেড় যুগের শিরোপা-খরা ঘুচালেন মুগুরুজা। ফ্রেঞ্চ ওপেনের ট্রফিটাও তাই স্পেনের মানুষদেরই উৎসর্গ করে দিয়েছেন তিনি, ‘এই টুর্নামেন্টে স্পেনের মানুষদের জন্যই। আমি যখন ছোট্ট শিশু ছিলাম এবং ক্লে কোর্টে অনুশীলন করতাম তখন সবসময়ই স্বপ্ন দেখতাম রোঁলা গ্যাঁরোয় জেতার। অবশেষে সেই রোঁলা গ্যাঁরোতেই চ্যাম্পিয়ন। এটা আমার জন্য অসাধারণ একটি দিন। এখানে ফাইনাল খেলতে পেরে আমি খুবই রোমাঞ্চিত। তাও আবার একজন সেরা খেলোয়াড়ের বিপক্ষে। আমি ক্লে কোর্টেই বেড়ে উঠেছি। স্প্যানিশদের জন্য যা খুবই স্বাভাবিক। তাই আমার কাছে শিরোপা জয়ের বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর।’ প্রতিপক্ষ সেরেনা উইলিয়ামস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মুগুরুজা বলেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে সেরেনা খুবই শক্তিশালী। তার বিপক্ষে আমার সেরাটা দিয়েই খেলার চেষ্টা করেছি।’ সেরেনাও মুগুরুজাকে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেননি। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘গারবিনকে অভিনন্দন। কোর্টে সে প্রকৃতপক্ষেই অনেক ভাল খেলেছে। তার বিপক্ষে আমি ভাল সার্ভ করতে পারিনি। বিশেষ করে ফিরতি শটে অনেক ইররস খেলেছি কিন্তু কোর্টে সবধরনের চেষ্টাই করেছি।’ চলতি মৌসুমে মোট পাঁচ টুর্নামেন্টে খেলেছেন সেরেনা। তার চারটিতেই ফাইনালে হেরেছেন তিনি। আমেরিকান তারকার জন্য যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান হারাতে হয়নি সেরেনাকে। সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়েও সবার উপরে সেরেনার নাম। ৮,৩৩০ পয়েন্ট নিয়ে এক নাম্বারে অবস্থান তার। আর ২১ গ্র্যান্ডসøামের মালিককে হারানোয় দুই ধাপ অগ্রগতি হয়েছে গারবিন মুগুরুজার। বর্তমানে দুইয়ে আছেন তিনি। এক ধাপ করে পতন ঘটেছে তিন ও চার নাম্বারে থাকা যথাক্রমে এ্যাগ্নিয়েস্কা রাদওয়ানাস্কা এবং এ্যাঞ্জেলিক কারবারের।
×