ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণী ইসলাম সান

দশ হাজারী ক্লাবে এ্যালিস্টার কুক

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৮ জুন ২০১৬

দশ হাজারী ক্লাবে এ্যালিস্টার কুক

সম্প্রতি ইংল্যান্ডের প্রথম ও ইতিহাসের ১২তম ব্যাটসমান হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রানের ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়েছেন এ্যালিস্টার কুক। ডারহামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৪৭ রানের মধ্য দিয়ে দারুণ এ রেকর্ডটি নিজের করে নেন সাদা পোশাকের ইংল্যান্ড অধিনায়ক। কেবল তাই নয়, কম বয়সে ১০ হাজার রান সংগ্রহের ক্ষেত্রে গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ডও গড়েন কুক। ২০০৫ সালে কলকাতা টেস্টে ৩১ বছর ৩২৬ দিন বয়সে ১০ হাজার রান করেছিলেন ভারতীয়দের ‘ক্রিকেট-ঈশ্বর’ শচীন। ডারহামে ব্যক্তিগত ৪৭-এর পথে ৫ রান করে কুক যখন সেখানে পা রাখেন তখন তার বয়স ৩১ বছর ১৫৭ দিন। সিরিজ শুরুর আগে ল্যান্ডমার্কে উঠতে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩৬ রান। সেটি পেতে আধুনিক ইংল্যান্ডের সফলতম ব্যাটসম্যানকে কত কাঠখড়ই না পোড়াতে হয়! হেডিংলির প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৬ রান করে আউট হন, প্রতিপক্ষ ইনিংস ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে আর ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাননি। ২০ রান দূরে থেকে ডারহামের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু করেন। এবার হচ্ছে, অনেকে নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম ইনিংসে আউট হয়ে যান ১৫ রানে! অবশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭ রানের পথে আসে সেই মহেন্দ্র ক্ষণ। এজন্য অবশ্য প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান চান্দিমালকে ধন্যবাদ দিতে পারেন কুক! কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কান ব্যাটসম্যান ১২৬ রান না করলে এখনেও দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ের সুযোগ হতো না ইংল্যান্ড অধিনায়কের! কেবল কম বয়সে শচীনকে টপকে যাওয়াই নয়, প্রথম ইংলিশ ক্রিকেটার হিসেবে ১০ হাজার রানের চূড়ায় ওঠেন এ্যালিস্টার নাথান কুক। ১২৮ টেস্টে রান ১০,০৪২। সেঞ্চুরি দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৮। গুচের রান ৮,৯০০ (১৯৭৫-১৯৯৫)। ইংল্যান্ডের হয়ে এখনও খেলা চালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে কাছাকাছি থাকা কেভিন পিটারসেনর (৮১৮১) সঙ্গে পার্থক্য ২,৮৬২ রান। সর্বোপরি টেস্ট ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান সংগ্রহাকের তালিকায় কুক আছেন ১২ নম্বরে। ১৫,৯২১ রান নিয়ে সবার ওপরে শচীন। অবশ্য বর্তমানদের মধ্যে কুকই সবার ওপরে। কীর্তিটা কম নয়, তবু বিনয়ী ইংল্যান্ড অধিনায়ক জানিয়েছেন, রেকর্ড নয় তার কাছে দলের জয়টাই বড়। ডারহামে চারদিনেই ৯ উইকেটের বড় জয় পায় ইংলিশরা। এক ম্যাচ বাকি থাকতে তিন টেস্টের ‘ইনভেস্টেক’ সিরিজ জিতে নেয় ২-০ ব্যবধানে। দিনেশ চান্দিমালের অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় (১২৬) দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৭৫ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। ফলোঅনে পড়েও ৭৯ রানের লিড পায় অতিথিরা। ৮০ রানের ছোট্ট লক্ষ্যে ১ উইকেট হারিয়ে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। তার আগে প্রথম ইনিংস ৪৯৮ রানের জবাব দিতে নেমে লঙ্কানরা অলআউট হয়েছিল ১০১ রানে। কুক বলেন, ‘যত বেশি সম্ভব রান করে দলকে জেতানোটাই ব্যাপার। আপনি রান করলেন, কিন্তু দল জিতল না, এমন ব্যক্তিগত রেকর্ডের কোন মূল্য নেই।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘শচীন জীবন্ত কিংবদন্তি। তার সঙ্গে তুলনার দুঃসাহস আমার নেই।’ ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের মালিক হতে কিছুদিন আগেই কুক ছাড়িয়ে এসেছেন পূর্বসূরি গ্রাহাম গুচকে। যিনি বর্তমানে টিম ইংল্যান্ডের ব্যাটিং পরামর্শক। গুরুকে স্মরণ করে কুক বলেন, ‘গুচির তাড়া খেয়ে প্রতিনিয়ত সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে নেটে অনুশীলন করেছি। এটা সেই পরিশ্রমের ফসল।’ গুচের কণ্ঠেও কুক-স্তুতি, ‘ও এমন এক ক্রিকেটার, যে নিজের কাজটা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করে। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে, দলের জয়টাই বড়, তাই ব্যক্তিগত অর্জগুলো কুকের পায়ে এসে লুটোপুটি খায়। ওকে অভিনন্দন।’ কুক একদিন শচীনের করা সর্বোচ্চ টেস্ট রানের রেকর্ডকেও ছাড়িয়ে যাবেন বলে মনে করেন আরেক গ্রেট সুনীল গাভাস্কার। ইংল্যান্ড কোচ ট্রেভর বেইলিসও সেই দলে। ২০১৩ সালের নবেম্বরে অবসরে যাওয়া শচীনের নামের পাশে ১৫,৯২১ রান। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের চূড়ায় নাম লেখানো গাভাস্কার বলেন, ‘কুক একদিন শচীনের সর্বোচ্চ টেস্ট রানের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলতে পারে। বয়স তার পক্ষে। ইংল্যান্ড টেস্টও খেলে বেশি। প্রত্যেক বছর ইংল্যান্ড যে পরিমাণ টেস্ট খেলে তাতে কুক ফর্ম ধরে রাখতে পারলে আগামী সাত বছরে শচীনকে ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।’ প্রিয় শিষ্য সম্পর্কে ইংল্যান্ড কোচ বেলিস বলেন, ‘টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের মালিক হওয়ার সামর্থ্য কুকের রয়েছে। তবে বিষয়টা নির্ভার করছে ওর ফিটনেস ও ফর্মের ওপর।’ কুক নিজে কি বলেন? ‘কে জানে! কখনও ১০ হাজার রান করতে পারব, এটাই তো ভাবিনি! এখন নতুন করে ভাবতে হবে, নতুন একটা লক্ষ্য ঠিক করতে হবে।’ তবে কোচকে কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি। বেলিসকেও কৃতিত্ব দিয়ে বিনয়ী কুক বলেন, ‘আমি যে ক’জন কোচের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের সানিন্ধ্য উপভোগ করেছি। তবে বেলিস অন্যদের চেয়ে আলাদা। সে ঠা-া মাথার। কঠিন পরিস্থিতিতিও রিল্যাক্স থাকে। এই জায়াগাতেই সে বেশি স্বতন্ত্র।’ শচীনকে টপকে সর্বোচ্চ টেস্ট রানের মালিক হতে কুককে আরও ৫,৮৭৯ রান করতে হবে। বহু দূরের পথ। তবে ইংল্যান্ড টেস্ট অধিনায়ককে অন্য একটি রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে। দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে কুকের মোট রান ১৩৩০৭। ১৩৭৭৯ রান নিয়ে ইংলিশদের মধ্যে এ তালিকায় সবার ওপরে কেভিন পিটারসেন। দলে বাইরে থাকা কেপির ক্যারিয়ার শেষ বলে মনে করা হয়। অভিষেকের পর থেকে কুক নিজেকে যেভাবে ফিট রেখেছেন, সেটা সত্যি বিস্ময়কর। ২০০৬ সালের মার্চে ভারতের বিপক্ষে তার অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত ১২৯ টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড। এর ১২৮টিতেই খেলেছেন কুক! ‘সব ধরনের কন্ডিশনে নতুন বলে বিশ্বসেরা বোলারদের বিপক্ষে টপঅর্ডারে নেমে পরীক্ষা দিয়েছি। আমি আনন্দিত যে আমাকে খুব বেশি সময় বাদ পড়ে থাকতে হয়নি।’ বলেন নিজের ফিটনেস নিয়ে সন্তুষ্ট কুক। অধিনায়কের ফিটনেস প্রসঙ্গে সতীর্থ জেমস এ্যান্ডারসনের রসিকতা, ‘ও কখনই বারে গিয়ে চার পেগের বেশি মদ পান করে না!’
×