ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের প্লে-অফ ম্যাচ, সেই সেট পিসেই সর্বনাশ মামুনুলদের, বাংলাদেশ ০-১ তাজিকিস্তান

তাজিকদের কাছে এবার লড়ে হারল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৮ জুন ২০১৬

তাজিকদের কাছে এবার লড়ে হারল বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অসুখ হলে তা সারানোর নানা উপায় আছে। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেরও একটা অসুখ আছে। ‘সেট পিস অসুখ’। সেই অসুখটি অনেক বছরের পুরনো। একাধিক কোচ প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোন লাভ হয়নি। আর এটা নিয়েই নাখোশ ছিলেন লোডভিক ডি ক্রুইফ। মঙ্গলবার তাঁর নাখোশ হওয়ার মাত্রাটা আর বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আক্ষেপও। এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বের বাছাইপর্বে খেলার সুযোগটাও প্রায় নিভু নিভু। যদি বাছাইপর্বে খেলার সুযোগটা কাজে লাগাতে হয়, এজন্য মঙ্গলবার স্বাগতিক বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে বেশ বড় ব্যবধানে (৬-০) জিততে হতো প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তান দলের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে জয় নয়, উল্টো ০-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। আক্ষেপের কারণ- ম্যাচে যথেষ্ট প্রাধান্য বিস্তার করে ও গোলের একাধিক সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের সমস্যা হলো- পুরো ম্যাচে অনেক ভাল খেলেও শেষ ১৫ মিনিটে খেই হারিয়ে ফেলে। এটা মূলত মনোসংযোগের অভাবেই ঘটে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য চেষ্টা করেছেন। মাঠে অনুশীলনের পাশাপাশি এসব বিষয় ভিডিও ক্লাসের মাধ্যমে হাতে-কলমে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন খেলোয়াড়দের। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হলো না। সেই সেটপিস আতঙ্কেই ডুবল বাংলাদেশ! হারলেও আরেকটা ‘লাইফ লাইন’ পাচ্ছে বাংলাদেশ দল। সেক্ষেত্রে আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তাদের প্লে-অফের আরও দুটি ম্যাচ খেলতে হবে প্রতিপক্ষ ভুটানের বিরুদ্ধে। ভুটানকেও যদি হারানো না যায়, তাহলে আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০১৯ সাল পর্যন্ত এএফসি আয়োজিত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। যদি তাই হয়, তাহলে অবশ্যম্ভাবীভাবে সেটা হবে ‘বেঙ্গল টাইগার্স’ দলের জন্য চরম অশনি সঙ্কেত! এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও তাজিকিস্তান ১১ ম্যাচে পরস্পরের মোকাবেলা করেছে। তাজিকিস্তান জিতেছে ৭ ম্যাচে, বাংলাদেশ ১ ম্যাচে। ড্র হয়েছে ৩টি ম্যাচ। ক্রুইফের অধীনে আড়াই বছরে বাংলাদেশ জাতীয় দল ও অলিম্পিক দল মোট ম্যাচ খেলেছে ৩২টি। জিতেছে ৭টিতে, ড্র ৮টিতে, হার ১৭টিতে। সর্বশেষ গত ২ জুন এশিয়ান কাপের বাছইপর্বের প্লে-অফ পর্বে স্বাগতিক তাজিকদের কাছে ৫-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। সোমবার অনুষ্ঠিত এক ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কোচ ক্রুইফ এবং অধিনায়ক মামুনুল কোন আশার বাণী শোনাননি। কিন্তু মঙ্গলবার তারা হারলেও প্রত্যাশার চেয়েও অনেক ভাল খেলেছে। এই জয়ে ‘দ্য পারশিয়ান লায়ন্স’খ্যাত তাজিকিস্তান এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। প্রথম লেগে বড় ব্যবধানে জয়ের পর ঢাকায় ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করে তাজিকিস্তান দল। বাড়তি কোন চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা তারা করেনি। এছাড়া দুপুরের বৃষ্টিতে দাবদাহ দূর হয়ে গেলে সেটিও সফরকারীদের পক্ষেই যায়। কারণ ঢাকায় নেমেই স্থানীয় তাপমাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল তারা। এই ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল অন্তত ড্র করা। পারফর্মেন্স খুব একটা মন্দ না হলেও বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড লাইনে গোল করার মতো খেলোয়াড়ের অভাবটা আবারও দেখা দেয়। নাবিব নেওয়াজ জীবন ও জুয়েল রানার অনভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড লাইনটা তাজিকিস্তানের সুঠামদেহী ডিফেন্স লাইনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এদিন হোম ম্যাচে প্রথম একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন আনেন ক্রুইফ। গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা, ডিফেন্ডার মামুন মিয়া ও নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, মিডফিল্ডার ইমন বাবু ও সোহেল রানা ছিলেন প্রথম একাদশে। দুই লেগে ৬-০ ব্যবধানে হেরে আগামী আগস্টে ভুটানের বিপক্ষে দুই লেগের ম্যাচের দিকে এখন তাকিয়ে বাংলাদেশ। তবে ওই ম্যাচে খেলতে পারবেন না জামাল ভূঁইয়া। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে পর পর দুই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখার কারণে ভুটানের বিপক্ষে খেলতে পারবেন না তিনি। ৭ মিনিটে বক্সের খুব কাছেই তাজিকিস্তানের মিডফিল্ডার ওমরবুয়েভকে ফাউল করেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার রায়হান হাসান। লেবাননের রেফারি ফ্রি-কিকের নির্দেশ দেন। ডিফেন্ডার নাজারভের বাঁক খাওয়ানো শট বাংলাদেশের এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বলের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ঢুকে যায় স্বাগতিকদের জালে (১-০)। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই খেলা শেষ হলে আক্ষেপের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্রুইফ-শিষ্যরা।
×