ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলছে আলীকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৮ জুন ২০১৬

চলছে আলীকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বক্সার মোহাম্মদ আলীকে শেষ বিদায় জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে তার জন্মশহর লুইসভিল। পরশু যুক্তরাজ্যের আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের হাসপাতাল (এখানেই মৃত্যবরণ করেন ৭৪ বছর বয়সী বক্সার) থেকে মৃতদেহ তার জন্মস্থান কেন্টাকির লুইসভিলে নিয়ে আসা হয়। শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল- রাস্তার পাশে আলীর প্রতিকৃতিতে ছেয়ে গেছে। কেবল বড় প্রতিষ্ঠান বা শিল্পীর হাতে নয়, পাড়া-মহল্লার ছেলেমেয়েরা মিলে বাড়ির দেয়ালে রং দিয়ে আলীর ছবি এঁকেছে। বিষণœœতা ছাপিয়ে জাতীয় বীরকে চিরবিদায় জানাতে প্রস্তুত তার জন্মস্থান। শুক্রবারের শেষকৃত্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন থাকবেন, এটা আগেই জানা গিয়েছিল। থাকবেন তারকা অভিনেতা বিলি ক্রিস্টাল। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোগানের মুখপাত্র তার উপিস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আলীর পরিবার থেকে ডাক দেয়া ‘উন্মুক্ত শেষকৃত্যে’ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও অনেক বড় তারকা, রাষ্ট্রনায়ক উপস্থিত হবেন। লুইসভিলের কেএফসি ইয়াম সেন্টারে (বাস্কেটবল কোর্ট) আলীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় ফ্রিডম হলে বৃহস্পতিবার ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত গ্রেটের জানাজা হবে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ১০ জুন শুক্রবার কেভ হিল সমাধিতে ‘দ্য চ্যাম্পিয়ন’-কে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হবে। ‘আলী ছিলেন সারাবিশ্বের নাগরিক। কিন্তু এখানে জন্ম হওয়ায় আমরা লুইসভিলের মানুষ অনেক বেশি গর্বিত। তিনি কেবল বক্সারই ছিলেন না, ছিলেন বিশ্বমানবতার জ্বলন্ত উদাহরণ। আমি তাই গোটা বিশ্ববাসীকে এই শেষকৃত্যে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি’- সংবাদ মাধ্যমকে বলেন লুইসভিলের মেয়র। আলীর পরিবারের সবচেয়ে পরিচিত মুখ তার মেয়ে বক্সার লায়লা আলীও বিশ্ববাসীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাবার আত্মার শান্তির জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। ১৯৪২ সালের ১৭ জুন কেন্টাকির লুইসভিলে আলীর জন্ম। তার আগের নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে। এই নামেই তিনি বক্সার হয়ে ওঠেন। ১৯৬০ সালে রোম অলিম্পিকে এই নামেই সোনা জিতেছিলেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর ১৯৬৪ সালে সনি লিস্টনকে হারিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে প্রথমবারের মতো বক্সিংয়ের বিশ্বসেরার মুকুট পরেন। ৬১টি পেশাদার লড়াইয়ের ৫৬টিতেই জিতেছেন বিরল প্রজাতির এই বক্সার, যেখানে ৩৭ বারই প্রতিপক্ষকে সরাসরি নকআউট করেন। ১৯৭৪ সালে মধ্য আফ্রিকার জায়ারের কিনশাসাতে জর্জ ফোরম্যানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক লড়াই ‘র‌্যাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ নামে পরিচিত। তার বিখ্যাত লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে- ১৯৭১-এ জেব ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’, ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’। ওদিকে শোকে কাতর ল্যারি হোমস প্রিয় আলী সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য দিয়েছেন। এই সেই হোমস, যিনি ছিলেন তার অনুশীলনের সঙ্গী, বন্ধু এবং প্রতিদ্বন্দ্বীও। তিনি বলেছেন, ‘কোথায় থামতে হবে, এটাও আলী জানতেন না।’ এই হোমসই পরবর্তীতে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত হেভিওয়েট বক্সিয়ের খেতাব জিতেছিলেন। রিংয়ে আলী নিজের শরীরে আঘাতের পর আঘাত নিতেন। সঙ্গী হোমস তাকে অনেকবার এই কাজটা কমিয়ে দিতে বলেছিলেন, ‘আমি আলীকে বলেছিলাম, মাথায় আঘাত নিয়ো না। মাথা আঘাত নেয়ার জন্য নয়।’ এই জন্য বন্ধুর ওপর তার অভিমান হয়। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আলী আসলে বুঝতে পারেনি কখন তাকে শেষ করতে হবে। ঘুষির আঘাতগুলো শরীরের অনেক ক্ষতি করেছে। ওকে আমি দারুণ ভালবাসি। তাই এই কথাগুলো বলছি।’
×