ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৮ জুন ২০১৬

খোশ আমদেদ মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তাবাহী মাহে রমজানুল মুবারকের আজ দ্বিতীয় দিন। আজ মাহে রমজানের অত্যন্ত আলোচিত ও প্রিয় ইবাদত তারাবিহ নামাজ সম্পর্কে দু’চার কথা। কুরআন নাজিলের পুণ্য স্মৃতিবিজড়িত মাহে রমজানে তিরিশ দিনব্যাপী তারাবিহ নামাজ পড়া যেমন সুন্নত, তেমনি এ মাসব্যাপী তারাবিহতে কুরআন খতম করাও সুন্নত। অবসরে যারা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে না বা কুরআন পড়তে জানে না তাদের জন্য তারাবিহতে খতম শোনা, সর্বোপরি পবিত্র নামাজে সকলে সুললিত কণ্ঠে গোটা কুরআন শোনার সুযোগ একটি বড় সুখকর বিষয়। পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষী ও কুরআন বিশেষজ্ঞগণ সমস্ত কুরআনকে পাঁচ শ’ চল্লিশ রুকু নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কুরআনের কপিতে দেয়া এ চিহ্ন মোতাবেক ২৭তম রাতে অনায়াসে কুরআন খতম সম্ভব (ফতোয়া আলমগীরী, আরকানে আরবাআ)। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এই মর্মে বিশিষ্ট ইমাম সাহেবানের প্রতি আহ্বান জানায় যে, তারা যেন তারাবিহ নামাজে খতমে কুরআন শব-ই-কদরের রাত পর্যন্ত কন্টিনিউ করার ব্যবস্থা নেন। এতে প্রতি রজনীতে কী পরিমাণ পড়লে সুবিধা এবং ফলপ্রসূ তাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আমাদের দেশে কিছু কিছু মসজিদ আছে যেখানে এর চেয়ে কম সময়ে এক রকম তাড়াহুড়ার মাধ্যমে খতম তারাবিহ শেষ করা হয়। এতে যেমন কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না, তেমনি গুনাহ হওয়ারও সমূহ সম্ভাবনা থাকে। হাদিসে এসেছে : রুব্বা ক্বা-রিন ইয়াকরায়ূল কুরআনা ওয়াল কুরআনু ইয়াল আনুহুÑ এমন কতিপয় ক্বারী আছে, যারা কুরআন তিলাওয়াত করে অথচ কুরআন তাদের লা’নত দেয়। সূরা মুজ্জাম্মিলে বর্ণিত হয়েছে : ‘তোমরা কুরআন আবৃত্তি কর সুবিন্যস্ত ও স্পষ্টভাবে।’ একই ভাবে কতিপয় মুসল্লি হাফেজ সাহেবের দীর্ঘ তিলাওয়াতের সময় অহেতুক গল্প-গুজব ও আরাম-বিশ্রামে মত্ত থাকে, যা ধৃষ্টতার শামিল। এ আচরণও মোটেই শোভনীয় নয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন : ‘আর যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক...।’ Ñ (৭ : ২০৪)। মাহে রমজানের চাঁদ দেখা রজনী থেকে শুরু করে শাওয়ালের ঈদ-উল-ফিতরের বাঁকা চাঁদ দেখার আগের রাত পর্যন্ত এশার নামাজের ফরজ ও সুন্নাত নামাজের পর তারাবিহর নামাজ বা তারাবিহর জামাত আদায় করতে হয়। এ নামাজ বিশ রাকাত। প্রতি নিয়তে দু’রাকাত করে আদায় করার নিয়ম। প্রতি চার রাকাত পর সামান্য বিশ্রাম করা উত্তম এবং এ বিশ্রামের নামই হলো তারাবিহ। আমাদের দেশে এ বিশ্রামটুকু নেয়া হয় না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দ্রুত রুকু ও সিজদাহ তিলাওয়াত সম্পন্ন করে বিশ রাকাত নামাজ শেষ করা হয়, যা মোটেই সমীচীন নয়। চার রাকাত পর পর একটি সুন্দর মুনাজাতও করা হয়, যা একজন মানুষকে প্রচ- খোদাপ্রেম ও আধ্যাত্মিকতায় উদ্ভাসিত করে তোলে। যেমন বলা হয়, আলাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া নাউযুবিকা মিনান নার...। অর্থাৎ হে আলাহ, আমি তোমার কাছে জান্নাতের ভিখারী আর জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ প্রত্যাশী...। বাকি এগারো মাস এশার নামাজের পর বিতিরের নামাজ একাকী পড়লেও মাহে রমজানে তারাবিহর নামাজের পর বিতিরেরও জামাত করতে হয়। এ পবিত্র নামাজের আনুষ্ঠানিকতা একজন রোজাদারের দেহ-মন থেকে সমুদয় খামখেয়ালিপনা ও অলসতা বিদূরিত করতে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে বলে মাওলানা আশরাফ আলী (রহ) তার যুক্তির নিরিখে শরিয়াতের বিধান বইয়ে উল্লেখ করেছেন। ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে বলা হয়েছে, যদি খতম তারাবিহতে ক্বিরাত দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে জামাতে লোকসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকে সে পরিস্থিতিতে সূরা তারাবিহর ব্যবস্থা করে হলেও প্রচুর মুসল্লি সমাগম ধরে রাখা উচিত। তারাবিহর নামাজ সব সময় এশার নামাজের পরপর পড়তে হয়। এশার নামাজের আগে তারাবিহর নামাজ আদায় করা শুদ্ধ নয়। কখনও কোন মুসল্লি দেরিতে মসজিদে আসার কারণে এশার জামাত হারিয়ে ফেললে তিনি তারাবিহর জামাতে শামিল হওয়ার আগে ইশার নামাজ আদায় করে নেবেন। আর কোন ব্যক্তি ব্যস্ততার কারণে ঘোষিত সময়ে এশা ও তারবিহর জামাত ধরতে ব্যর্থ হলে রাতের যে কোন অংশে তিনি এ মহামূল্যবান বরকতপূর্ণ নামাজ আদায় করে নিতে পারেন। আল্লাহ পাক আমাদের মাহে রমজানের রজনীতে আত্ম গঠনের মহান অনুশীলন পবিত্র সালাতুত তারাবিহ বা জামাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
×