ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রথম রোজায় বৃষ্টির পরশে রোজাদারদের স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৮ জুন ২০১৬

প্রথম রোজায় বৃষ্টির পরশে রোজাদারদের স্বস্তি

শাহীন রহমান ॥ প্রথম রজমানের দিনেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা আর মুষলধারে বৃষ্টি রোজাদারদের দেহমনে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার প্রথম রমজানে দিনের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল ঠা-া আবহাওয়া। ভ্যাপসা গরমের লেশমাত্র অনুভূত হয়নি কোথাও। সকাল থেকেই একটানা বাতাস আর আকাশে মেঘের আনাগোনা, দুপুরের পর তা বর্ষার বারিধারার মতো ঝরতে থাকে। প্রকৃতিতে ঠা-ার এই অনূভুতি কষ্টের বদলে স্বস্তিদায়ক হয়ে ওঠে। তাই রোজাদারদের চাওয়া পুরো রমজান মাসের আবহাওয়া যেন এমনি থাকে। তাহলে বাকি রোজাগুলোও উপভোগ্য হয়ে উঠবে। নির্বিঘেœই রোজা রেখে রমজান মাস পার করে দেয়া সম্ভব হবে। তারা বলেন, হঠাৎই প্রথম রোজায় বর্ষার পরিশেষ যেন আল্লাহ্র অশেষ রহমত। মঙ্গলবার প্রথম রোজায় দিনের পরিধিও বছরের অন্য যে কোন সময়ে চেয়ে অনেক বেশি। বাংলায় এখনও বর্ষাই আসেনি। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষদিকের এই সময়টা প্রকৃতি থাকে বেশ রুক্ষ। সাধারণ এই সময়টা প্রকৃতিতে প্রচ- গরমের আবহ। কাঠফাটা রোদ্দুর আর ঘাম ঝরানো গরমে মানুষের ভোগান্তিও চরমে ওঠে। রোজা শুরুর আগে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের চিত্রও ছিল এমনই। কিন্তু রমজান শুরু না হতে প্রকৃতির চরিত্র যেন পাল্টে গেল। প্রথম রোজায় আবহাওয়ার পরিবেশ দেখে মনে হয়েছে প্রকৃতিতে যেন বর্ষা এসে গেছে। ভ্যাপসা গরম আর তাপপ্রবাহ যেন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে। এ কারণে দিনের পরিধি অনেক বড় হলেও দিনভর উপোষে রোজাদারের ভোগান্তি হয়েছে অপেক্ষাকৃত অনেক কম। প্রথম রোজার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মরত শেখ সাদী ( ৫০) বলছিলেন, রোজার আগের দিনের গরমের চিত্র দেখে মনে হয়েছিল এবারের রোজা রাখাটা অনেক কষ্টকর হয়ে পড়বে। প্রথম রোজার সকালে আবহাওয়ার অবস্থাটা তেমনি ছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির চিত্র যেন পাল্টে যেতে থাকে। সকালে গরম রোদের ঝিলিক থাকলেও আকাশে মেঘের আনাগোনা ও ঠা-া বাতাসে আবহাওয়ার পরিবেশটাও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। দুপুরে আকাশের চেহারা রূপ নেয় বর্ষার আকাশের ন্যায়। এ সময় রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টিতে শান্তির পরশ বয়ে আনে। তাই প্রথম রোজা যতটা কষ্ট ভেবেছিলাম দিন শেষে তার উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। সারাদিন উপোষ থাকলেও কখনও মনে হয়নি রোজা রেখেছি। স্বাভাবিক দিনের ন্যায় প্রথম রোজাটাও কেটে গেছে। তিনি বলেন, আবহাওয়ার এমন পরিবেশ যেন মাসজুড়েই থাকে। তিনি প্রথম রোজায় সারাদিন বৃষ্টির ঘটঘটাকে রমজানে আল্লাহ্র বিশেষ রহমত হিসেবেই উল্লেখ করেন। বেরসরকারী চাকরিজীবী তৌদিুজ্জামান বলেন ঠা-া আবহাওয়ার কারণে প্রথম রোজাটা অনেক ভাল কেটেছে। সারাদিন কোন কষ্টই অনুভূত হয়নি। বৃষ্টির কারণে দিনের পরিধি আর গরমের অনুভূতি কোনটিই বোঝা যায়নি। তিনি বলেন, বাকি সময়টায় আবহাওয়ার পরিবেশ এমন থাকলে এবারের রমজানটা উপভোগ করা যাবে। সোমবার সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় ওইদিন রাতে শুরু হয়েছে রমজানের আনুষ্ঠানিকতা। রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দলবেঁধে তারাবির নামাজ আদায় করতে সমজিদে ছুটতে থাকে। তারাবি উপলক্ষে মসজিদগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। এরপর রাতে সেহেরি খাওয়া মাধ্যমে শুরু হয় চূড়ান্ত উপবাস। প্রথম রোজায় সেহেরি খাওয়ার শেষ সময় ছিল রাত ৩টা ৩৯ মিনিট। আর ইফতারের সময় ছিল সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিট। এ হিসেবে প্রথম রোজার পরিধি ছিল ১৫ ঘণ্টা ৮ মিনিট। যা বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। রমজান মাসজুড়ে দিনের পরিধি প্রায় একই থাকবে। মাঝে সময়ের ব্যবধান দু’এক মিনিট হেরফের হবে। তবে চন্দ্র মাসের গণনা অনুযায়ী প্রতিবছর ৯দিন করে এগিয়ে আসে। এভাবে প্রতি তিন বছর পর রোজা একমাস করে এগিয়ে আসছে। আগামী তিন বছর পর রোজা চলে আসবে মে মাসের শুরুতে। তখন দিনের পরিধি আগের চেয়ে কমতে থাকবে। তবে আগামী তিন বছর দিনের পরিধি বড় থাকায় রোজাদারদের একটু বেশি কষ্ট করতে হবে। এদিকে বৃষ্টি রোজাদারদের মনে প্রশান্তি বয়ে আনলেও প্রদীর্ঘ ১১ মাস পর হঠাৎ দিনের বেলায় পানাহার বন্ধ হওয়ায় প্রথমদিনে রোজাদারদের দেহমনে একটু ক্লান্তির ছাপও লক্ষ্য করা গেছে শেষ বেলায়। তবে প্রথম রমজানে নগরবাসীর বিদ্যুত বা পানি সমস্যার মতো বড় কোন সমস্য ছিল না। রাতে সেহেরি খাওয়া থেকে শুরু করে সন্ধ্যায় ইফতার পর্যন্ত নির্ঝঞ্ঝাটা ছিল বিদ্যুত পরিস্থিতি। পানি সঙ্কট নিয়ে নগরবাসীর কোন অভিযোগ ছিল না। তবে দেশের গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিকমতো না থাকায় তাদের ভোগান্তি শহরবাসীর চেয়ে অনেক বেশি ছিল বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। মঙ্গলবার রমজানের প্রথমদিনে অফিস ডে হওয়ায় সেহেরি খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের কর্মস্থলে ছুটতে দেখা গেছে। সরকারী চাকারিজীবী মিরপুরের সোহেল রানা জানান রমজানের সময় অফিস সূচীতে পরিবর্তন আনায় আগেই অফিসে হাজির হতে হয়। তাই সেহেরি খাওয়ার পর নামাজ পড়ে বিশ্রামের সময় পাওয়া যায় কম। আবার অফিস শেষে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ইফতার করতে বসায় ফেরার তাড়াও থাকে বেশি। এ কারণে ভোগান্তি সহ্য করেই বাসায় পৌঁছাতে হয়েছে। এদিকে প্রথম দিনে শেষ বেলায় বাসায় ফেরা মানুষের চাপের কারণে রাস্তায় যানচলের চাপ ছিল দিনের প্রথমভাগের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে অনেকক্ষণ। তবে ইফতারের আগে একই সঙ্গে সবার ঘরে ফেরার তাড়া থাকার কারণেই পরিবহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে। তবে ইফতারের আগ মুহূর্তে নগরে যান চলাচল ছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। যারা সময়মতো বাসায় পৌঁছতে পারেনি তাদেরকে রাস্তায় যানবাহন দাঁড় করে ফুটপাথে ইফতার সারতে দেখা গেছে।
×