ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের কেনাকাটা

পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর কেরানীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৮ জুন ২০১৬

 পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর কেরানীগঞ্জ

রহিম শেখ ॥ জমে উঠেছে পোশাকসহ সব ধরনের পাইকারি বাজার। উপলক্ষ ঈদ-উল-ফিতর। কিন্তু এই উৎসবের এখনও ঢের বাকি। কেবল শুরু হয়েছে রমজান মাস। যদিও রোজার অনেক আগে থেকে পাইকারি বাজার সরগরম। ক্রেতারা দেশের দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন রাজধানীর পাইকারি সব বড় বড় মার্কেটে। থান কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশই পূরণ হয় ইসলামপুরের আশপাশের মার্কেট থেকে। সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার এগুলেই চোখে পড়বে সারাদেশের পাইকারি ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত এক হাট। নাম কেরানীগঞ্জ। এখানে বিরতিহীন চলছে কারিগরদের কর্মব্যস্ততা। চলছে দিন-রাত কারখানায় সেলাই মেশিন । তৈরি হচ্ছে ভিন্ন রং ও ডিজাইনের প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, থ্রি পিসসহ বাহারি সব পোশাক। ব্যবসায়ীরা জানালেন, এ এলাকার বাজার জমতে শুরু করেছে মূলত শব-ই-বরাতের পর থেকেই। পোশাকের পাশাপাশি যে কোন উৎসবে কদর রয়েছে জুতার। সারাদেশের জুতার চাহিদা মেটাতে রাজধানীর পুরান ঢাকার কারখানা ও গুলিস্তানের পাইকারি বাজারে চলছে জোর প্রস্তুতি। মঙ্গলবার রাজধানীর ইসলামপুরের কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কাপড়ের গজ মাপা, খাতায় পরিমাণ তোলা, টাকা গুণতি, মাল বোঝাই করে ট্র্যাক-কাভার্ড ভ্যান, লঞ্চ কিংবা ঠেলাগাড়ি করে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ক্রেতারা। কোন কোন দোকানে বেচাকেনার চাপে দম ফেলার সময় নেই এখানকার বস্ত্র ব্যবসায়ীর। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, থান কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশই ইসলামপুর থেকে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার ঈদ সামনে রেখে শবেবরাতের পর থেকেই মূলত ইসলামপুরে বেচাকেনা শুরু হয়। চলবে আগামী ১০ থেকে ১২ রমজান পর্যন্ত। ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা জানান, নরসিংদীর মাধবদী ও বাবুরহাট, ঢাকার সাভার, কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মিল থেকে শাড়ি ও লুঙ্গি তৈরি করিয়ে এনেছেন তারা। রাজধানীসহ রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা আসছেন এবং কাপড় কিনছেন। ইসলামপুর রোডের প্যারাডাইস ভবনের নীচ তলায় কথা হয় ময়মনসিং ও বগুড়ার ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ও হামিদ মিয়ার সঙ্গে। দোকানের জন্য রোজার আগেই দু’বার ইসলাপুরে এসেছিলেন এই দুই ব্যবসায়ী। তাঁরা জনকন্ঠকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পাইকারিতে দাম একটু বেশি। ফলে ঈদে খুচরা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হবে বলে জানান তারা। কুমিল্লার দাউদকান্দির ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম দোকানের কর্মচারীদের নিয়ে কাপড় কিনতে এসেছেন ইসলামপুরে। তিনি জানালেন, মূলত দেশি পোশাকই তিনি এখান থেকে কিনে থাকেন। এবার বাচ্চাদের ও নারীদের পোশাকে বৈচিত্র্য এসেছে বেশ। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, একসময় বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড়ের পাইকারি বাজার ছিল ইসলামপুরে। এখন আর সে রকম নেই, চিত্র পাল্টে গেছে। ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসার বড় অংশই এখন দেশি কাপড়ের দখলে। এখানকার পাকিজা ফেব্রিক্স কালেকশনের সহকারী ম্যানেজার দীপক চন্দ্র ভৌমিক জনকন্ঠকে বলেন, ইসলামপুরে তাদের মোট ছয়টি শোরুম রয়েছে। মূলত শবেবরাতের পর থেকে দশ রমজান পর্যন্ত তাদের বেচাবিক্রি হয়। তারা মূলত থ্রিপিস, লুঙ্গি, বিছানার চাদর, শাড়ি ইত্যাদি বিক্রি করে থাকেন। থ্রিপিস বিক্রি করছেন ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। ফেব্রিক্স ফ্যাশনের আজিজুর রহমান জানালেন, ৪০-৮০ টাকা দামে লেডিস আইটেমের গজ কাপড় বিক্রি করছেন তারা। মূলত নিম্নবিত্তদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা কাপড় সরবরাহ করেন। এখান থেকে নিয়ে কাপড় যান টেইলার্স ব্যবসায়ীরা। তারা সেলাই করে আবার দোকানিদের কাছে বিক্রি করেন। এজন্য তাদের ঈদ ব্যবসা শুরু হয় শবেবরাতের আগেই। শবেবরাতের পর থেকেই দেশের সর্ববৃহৎ পোশাক তৈরির পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, আগানগর ও শুভাঢ্যা এখন সারাদেশের ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫০ শতাংশ বেচাবিক্রি রমজান শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়। আগামী ২০ রমজান পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি ও চাঁদ রাত পর্যন্ত খুচরা বিক্রি করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার দশেক কারখানা এবং দুই হাজারের মতো শোরুম রয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মফস্বল শহরগুলোর বিপণিবিতান তো বটেই, রাজধানীর অভিজাত শপিংমলগুলোতেও এখন বিদেশী কাপড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ক্রেতাদের হাতে উঠছে এখানকার তৈরি পোশাক। পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, স্যুট-ব্লেজারসহ সব ধরনের শীতবস্ত্র, শিশুদের কাপড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের গার্মেন্ট আইটেম পাওয়া গেলেও এই ক্ষুদ্র গার্মেন্টপল্লী বিশেষভাবে বিখ্যাত জিন্স ও গেভাডিন প্যান্ট ও ফ্যাশনেবল পাঞ্জাবির জন্য। কেরানীগঞ্জের জিলা পরিষদ মার্কেট, তানাকা মার্কেট, এস আলম সুপার মার্কেট, নুর সুপার মার্কেট, চৌধুরী মার্কেট, আলম সুপার মার্কেট, ইসলাম প্লাজা, আনোয়ার সুপার মার্কেট, কদমতলী গোলচত্বর এলাকার লায়ন সুপার মার্কেট, জিঞ্জিরার ফ্যামিলি শপিং মলসহ বেশ কয়েকটি পাইকারি মার্কেটে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানকার মার্কেটগুলোতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। তবে ঈদে স্বাভাবিক সময়ের বেচাকেনার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। এদিকে উৎসবে পোশাকের পর জুতার চাহিদা ব্যাপক। এখন চলছে জুতার পাইকারী বেচাকেনা। রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা গুলিস্তানসংলগ্ন ফুলবাড়ীয়ায় বেশ কয়েকটি পাইকারি জুতোর মার্কেটে পাইকারী ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। ফুলবাড়ীয়া সিটি সুপার মার্কেট, জাকের সুপার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, সিদ্দিক বাজার সমবায় মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখানে আসছেন জুতো সংগ্রহ করতে। রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরার বড় বড় শপিংমল এবং ফ্যাশন হাউসে যেসব জুতো স্যান্ডেল শোভাবর্ধন করছে তার প্রায় ৬০ শতাংশের যোগান দেন এখানকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এদিকে ঈদের পাইকারি বাজার ধরতে বিরামহীন কাজ চলছে পুরান ঢাকার পাদুকা পল্লীতে। ক্রেতাদের পছন্দসই নতুন নতুন ডিজাইনের জুতা তৈরি করছেন কারিগররা।
×