ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পূরক বাজেটের সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী

ব্যাংকিং খাতে লুটপাট পুকুরচুরি নয়, সাগর চুরি

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৮ জুন ২০১৬

ব্যাংকিং খাতে লুটপাট পুকুরচুরি নয়, সাগর চুরি

সংসদ রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দুর্নীতি প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। প্রকল্প ব্যয় প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে বেশি হয়ে যাওয়ায় মঞ্জুরি দাবি এসেছে। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে লুটপাট হয়েছে, সেটা শুধু পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি। তবে এমন কিছু হয়নি যে পুরো প্রতিষ্ঠানকেই ধুয়ে মুছে ফেলে দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়ে গেছে। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসের অনেক পরে মেগা প্রকল্প নিয়েছি। অনেক দেরিতে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। তবে আমাদের অগ্রগতির যে লক্ষ্য, আমার মনে হয় মেগা প্রকল্প আমরা এখন গ্রহণ করতে পারি। আমরা এখন মেগা প্রকল্পের দিকে নজর দিয়েছি। বেশ কয়েকটা মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ০৫ থেকে কখনও কম হবে না। মঙ্গলবার ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সমাপনি বক্তব্যে এবং মঞ্জুরি দাবির বিপরীতে আনা ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যে রাখতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ‘আমলাতন্ত্রের কারণে বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না’- এমন অভিযোগের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দোষ দেয়া যায়, কিন্তু আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই এইজন্য যে, আমরা যে বাজেট দিয়েছি তা তাদের (আমলা) জীবনে এত বড় বাজেট দেখেননি। যা গত ৭ বছরে ৯১ হাজার কোটি থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়, সেটার সঙ্গে যে তারা চলতে পারছে- এর জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। ৭ ভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থা এবং বিভিন্ন জনের মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক সংস্থাগুলো বিভিন্ন ধরনের যে হিসাব দেয়, সেটা সব সময়ই একচ্যুয়াল (প্রকৃত) থেকে কম হয়। সেজন্য কোন প্রজেকশন (লক্ষ্যমাত্রা) ৭ দশমিক ৫ কম করা উচিত না। আমি নিশ্চিত প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ থেকে কম কখনও হবে না। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যুরো অত্যন্ত উৎকৃষ্ট প্রতিষ্ঠান। তারা যে হিসাব দেয় সেটা সত্যিই। এ সময় স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনি (স্পীকার) তিন মাস পরেই দেখবেন অন্যান্য বিদেশী সংস্থা লক্ষ্যমাত্র ৭ দশমিক ০৫-ই গ্রহণ করবে। আসলে বিদেশী সংস্থাগুলোর প্রজেকশনের ধারণা স্ট্যাডি করে হয় না। প্রজেকশন দেয়ার দরকার তাই দেয়। একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, লক্ষ্যমাত্রা ৭ থেকে ৭-এ উপণীত হয়েছে। তাহলে আপত্তি কেন? আপত্তির কোন কারণ নেই। অর্থমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদে টানা ৮ বার এবং জাতীয় পার্টির আমলে দুইবার বাজেট দেয়া নিয়েও মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আমি জাতীয় পার্টির বাজেট দিয়েছি বলে যে কথা বলা হয়, তা সর্ববৈই মিথ্যা। আমি জাতীয় পার্টির কোন বাজেট দেইনি। আমি জাতীয় পার্টির জন্মের আগে সব বাজেট দিয়েছি। এটা আপনারা ভাল করে মনে রাখবেন। আমি জেনারেল এরশাদ সাহেবের বাজেট দিয়েছি, যেটা নির্দলীয় সরকার ছিল। অর্থমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের কড়া জবাবও দেন আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, একজন বিশিষ্ট নেতা আমরা রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও ঐতিহ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন। তার করাটাই স্বাভাবিক। কারণ তার জন্মের আগে আমি একজন প্রসিদ্ধ রাজনীতিবিদ ছিলাম। আমার সময় আমি ছাত্র নেতৃত্বের অন্যতম শীর্ষতম ব্যক্তি ছিলাম। এটা উনার অবশ্য জানার সুযোগ হয় নেই। তিনি বলেন, সম্পূরক বাজেট সম্পর্কে কয়েকজন সংসদে বক্তব্যে রেখেছেন যে, হিসাব ঠিক থাকে না সেজন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা দাবি নিয়ে এসেছি, এখানে পাস করে নিব। আসলে এ সম্পর্কে তাদের ধারণাটা ভাল করা উচিত। তাদের মনে রাখা উচিত, আমাদের দাবিটা অতি সামান্য। মূল বাজেটে যখন দাবি করবেন তখন সেগুলো ৫০-৬০ হাজার কোটি মতো হবে। তিনি বলেন, আমরা এখানে যে দাবি উত্থাপন করেছি, তা প্রাক্কলিত ব্যয় থেকে বেশি করেছি। কম যখন হয় তখন দাবি বা প্রার্থনা করতে হয় না। আমি বলতে পারি বেশি খরচ হয় নেই, কমই হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তার আগের বছরগুলোতে সব সময় কম হয়েছে। আমি এটা আমলে নেইনি, এই ঘটনা আমলে না নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে হিসাব করেছি। কারণ এই যে স্থবিরতা বা একটুখানি শৈথিল্য, এটা সাময়িক। তবে এটার পরিবর্তন করা জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে এটা সত্যি কথা দুর্নীতি ‘কষ্ট অব প্রজেক্ট’ (প্রকল্প ব্যয়) বাড়িয়ে দেয়। সব জিনিস নিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে সব সময় তুলনা করা উচিত নয় উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা মনে রাখা উচিত এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের তুলনা সব সময় ঠিক হয় না। যেমন- বাংলাদেশে পাথর আমদানি করতে হয়, ভারত বা অন্য দেশে পাথর আমদানি করতে হয় না। তাই অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে বাজেটে হিসাবে নিলে চলবে না। অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্পূরক বাজেট নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। এটার পরিবর্তন আনতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। এখানে আমার কিছু করার নেই। তবে যারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন এভাবেই সম্পূরক বাজেট পাস করিয়েছেন। তবে সংবিধানে সম্পূরক বাজেটের যে অধিকার রয়েছে, আমি মনে করি এটা সরকারের পাওয়া উচিত। এটা অত্যন্ত শক্তভাবে আমি সমর্থন করি। তাই সম্পূরক বাজেটে যুক্তিগুলো যথাযথ নয়।
×