ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মদিনায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময়

খুনীরা রেহাই পাবে না

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ জুন ২০১৬

খুনীরা রেহাই পাবে না

চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী এই গুপ্তহত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমি শুধু এটুকু বলতে পারি যারা এই হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেব না, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সোমবার সন্ধ্যায় মদীনায় হিলটন হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। ঢাকার পুলিশ হেড কোয়ার্টারে সংযুক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে রবিবার সকালে চট্টগ্রামে মোটরবাইকে আগত অজ্ঞাতনামা কয়েক সন্ত্রাসী উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত এবং গুলি করে হত্যা করে। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর কোন দোষ ছিল না। বাচ্চাকে স্কুলে পৌঁছে দেয়ার পথে সন্তানের চোখের সামনেই খুন করা হলো, এটা খুবই দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর সরকারের সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা কোন ধরনের সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। আমরা চাই এ ধরনের আর কোন ঘটনা যেন বাংলাদেশে কখনও না ঘটে। শেখ হাসিনা বলেন, যারা একসময় বাস, ট্রেন লঞ্চে বোমা ছুঁড়ে মেরেছে, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তারাই এখন গুপ্ত হত্যায় নেমেছে। এ সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য জাতীয় সংসদে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছে। এতে বিপুল অঙ্কের বাজেট প্রণয়ন অতীতের কোন সরকারের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। এ সময় দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলেধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ একে ‘বিস্ময়কর’ বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু আমি বলি এতে বিস্ময়ের কিছু নেই, এটা আমাদের দেশের জনগণের জন্য ভালবাসা ও কর্তব্যবোধ। আমরা সব সময়ই জনগণের কল্যাণের বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করি। যে কারণে প্রয়োজনে আমরা আমাদের সেরাটা দিতে পারি। আওয়ামী লীগ ব্যতীত আর কেউ জনগণের কল্যাণের বিষয়টা সবসময় মাথায় রেখে কাজ করে না। দেশের মানুষকে একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়ার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিরলস পরিশ্রমের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকলে বাংলাদেশ অন্তত আরও ২০ বছর আগে উন্নত হয়ে যেত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশের জনগণের কল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে শুরু করার পর থেকেই দিন দিন দেশের উন্নতি হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উন্নত হলে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও মাথা উঁচু করে চলতে পারবে এবং এই সুনাম অর্জন করতে পারাটাও আমাদের জন্য একটা বিরাট সম্পদ। বাংলাদেশকে যেন আর কেউ অবহেলার চোখে না দেখে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন সমগ্র বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সৌদি বাদশাহের সঙ্গে বৈঠকসহ সৌদি আরব সফরের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর দিকেই তাঁর লক্ষ্য থাকবে। এ সময় জেদ্দা চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্র্রি (জেসিসিআই) নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর বৈঠককেও প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ফলপ্রসূ বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ সব সময়ই সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থা প্রতিরোধে তাঁর দেশ ইসলামী জোটে শরিক হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অবদানের কথাও এ সময় প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমরা দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হয়ে এসেছি এবং আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আমরা আরও অনেক এগিয়ে যাব। প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে, জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৪শ’ ৬৬ ডলার হয়েছে, দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে, ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, সরকার বিভিন্ন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং সেগুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। তিনি সৌদি আরবের আইনকানুন মেনেই সেখানে বসবাসেরও আহ্বান জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। মহানবীর (সা) রওজা জিয়ারত ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার রাতে সৌদি রাজকীয় আনুষ্ঠানিকতার মাঝে পবিত্র মদিনা নগরীর মসজিদ-ই-নববীতে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা)’র রওজা মোবারক জিয়ারত করেন। খবর বাসসর। তিনি মসজিদে নববীতে এশা এবং তারাবিহ্র নামাজ আদায় করেন এবং দেশের জনগণ, সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি, প্রগতি ও উন্নয়ন কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এবং পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীসহ সফরসঙ্গীরাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হজরত মুহম্মদ (সাঃ)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।
×