ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্রত্যাশিত সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৮ জুন ২০১৬

অপ্রত্যাশিত সহিংসতা

সহিংসতা, প্রাণহানি, বিশৃঙ্খলা, জাল ভোট দেয়াসহ নানা অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। শনিবার ছিল ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের শেষ ধাপ। গত ২২ মার্চ প্রথম ধাপের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছয় ধাপে ৪ হাজার ৮৪টি ইউনিয়নে চূড়ান্ত নির্বাচন হয়েছে। নানা অনিয়ম আর অভিযোগের কারণে বেশ কয়েকটি ইউপি নির্বাচন হয়নি। কোথাওবা স্থগিত করা হয়েছে। ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই মূলত সংঘর্ষের শুরু। শনিবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১০৮। আহত পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। সহিংসতা দমনে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা বিস্মিত হওয়ার মতো। অবশ্য নির্বাচন কমিশনের দাবি, কিছু অনিয়ম ও সংঘাত ছাড়া সার্বিকভাবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়েছে। তাই আশঙ্কা করা হয়েছিল নির্বাচন সংঘাতপূর্ণ হবে। ২২ মার্চ প্রথম ধাপে ১১ জন, ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ৮, ২৩ এপ্রিল তৃতীয় ধাপে ১, ৭ মে চতুর্থ ধাপে ৬, ২৮ মে পঞ্চম ধাপে ১০ এবং সর্বশেষ শনিবার ষষ্ঠ ধাপে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া ভোটের আগে ও পরে মারা গেছে ৬৮ জন। ২ শতাধিক ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডও গড়েছে এ নির্বাচন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন। অবশ্য কয়েকজন এসপি ও ওসি প্রত্যাহার এবং কয়েকজনকে ডেকে ভর্ৎসনা করা এবং বরগুনার ও রাজশাহীর তিন সাংসদ, শেরপুরের একজন হুইপকে সতর্ক করা এবং সর্বশেষ চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাংসদের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্ষমতার কিছুটা প্রয়োগ দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অনেকের অভিমত নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রোধ করা গেলে অনেক প্রাণ রক্ষা পেত। অবশ্য ইউপি নির্বাচন সহিংস হতে পারে এমন ধারণা আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। তারপরও সহিংসতা রোধ করা যায়নি। সহিংসতা রোধে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলাও হয়েছিল কমিশনের পক্ষ থেকে। নির্বাচনের আগে তালিকা করে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনার কথাও বলা হয় সে সময়। নির্বাচনকালে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তৃত্বে থাকা নির্বাচন কমিশন কেন পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেনি এই প্রশ্ন অবশ্যই করা যায়। বরাবরই স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে সংঘাত, সহিংসতা এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। কারও কারও মতে এবার নির্বাচনে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ দলীয় প্রতীক এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। ভবিষ্যতে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে আরও নির্বাচন আসবে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত-সহিংসতার যে ব্যাপকতা সৃষ্টি হয়েছে তা যেন ওইসব নির্বাচনে ছড়াতে না পারে তার প্রস্তুতি এখনই নিতে হবে। বর্তমান সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হোক। আগামীতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে আরও দায়িত্বপূর্ণ ও কঠোর হতে হবে।
×