ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চাই সাঁড়াশি অভিযান

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৮ জুন ২০১৬

চাই সাঁড়াশি অভিযান

নৃশংসতার সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে জঙ্গী নামধারী নরাধমকুল। এই প্রথম কোন নারীকে টার্গেট করে হত্যা করা হলো! এতদিন কর্তব্যরত পুলিশকেও হত্যা করা হয়েছে। আর পুলিশের কোন কর্মকর্তার স্ত্রীর ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনাও এই প্রথম। চট্টগ্রামে কাপুরুষোচিত এই হত্যাকা-ের সঙ্গে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার জড়িত থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। একই দিনে একই কায়দায় নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া খ্রীস্টানপল্লীতে এক খ্রীস্টান মুদি ব্যবসায়ীকেও হত্যা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে এক পুরোহিতকে। গত দেড় বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গীদের ৪৫ হামলায় ৪৭ জন নিহত হন। এসব ঘটনায় জড়িতদের অধিকাংশই ধরা পড়েনি। এক সময় জঙ্গীরা ব্লগারকে টার্গেট করে। এরপর লেখক, প্রকাশক, শিক্ষক, বিদেশী নাগরিক, পীর, ইউএস এইড কর্মকর্তা, পুরোহিত, বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের টার্গেট করে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনা আমাদের জাতীয় ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের জন্যও অশুভ সঙ্কেত। তদুপরি, বাংলাদেশকে আইএস জঙ্গীদের ঘাঁটিতে পরিণত করার জন্য তৎপরতার অংশও হতে পারে। শক্তিধর দেশগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে এসব ঘটনায় বাংলাদেশে আইএস রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা বলে আইএস যে ধরনের তৎপরতায় জড়িত মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ অন্য দেশগুলোয়, এই হত্যাকা-গুলো সেই ধারার নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নস্যাত করতে, ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাত করতে যারা গত তিন বছর ধরে অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে- এসব তাদেরই তৎপরতার অংশ। বিএনপি-জামায়াত জোটের পেট্রোলবোমায় মানুষ হত্যার ধারাবাহিকতায় এখন এই টার্গেট কিলিং শুরু হয়েছে, যাতে দেশকে অস্থিতিশীল করা যায়। এসব হত্যাকা- তদন্তে গাফিলতি, জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশবাসীকে। জঙ্গীদের অবাধ প্রবাহ অক্ষুণœœ রেখে জঙ্গী নির্মূল করা যে সহজ নয় এটা সবারই জানা। জানেন না সম্ভবত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অথচ বিষয়টি জননিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক। আরও বিস্ময়কর যে, গ্রেফতার হওয়া জঙ্গীরা অনায়াসে জামিন পেয়ে আবার হত্যাকা-ে তৎপর হচ্ছে, অথচ এসবের প্রতিকার নেই। জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগে সন্ত্রাস দমন আইনে করা দুই মামলায় সুপ্রীমকোর্টের এক আইনজীবীর জামিন বহাল রাখা হয়েছে। এই জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ হয়ে গেছে। পাশাপাশি যে কোন হুমকির ব্যাপারে পুলিশ আগাম তেমন কোন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না, ঘটনা ঘটার পর দৌড়ঝাঁপ শুরু করে। অথচ জঙ্গীদের ব্যাপারে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা যে জরুরী তা নিয়ে কারও আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না। জঙ্গীদের হামলায় দায়ের করা ২৪টি মামলারই পুরোপুরি রহসা ভেদ হয়নি। মাসের পর মাস এসব মামলার তদন্ত চলছে এবং তা যেন অনন্তকাল ধরে চলতেই থাকবে। এমনকি ছয় জঙ্গীর ছবি প্রকাশ পূর্বক পুরস্কার ঘোষণা করে তথ্য চাওয়ার দুই সপ্তাহ পার হলেও সাড়া মেলেনি। এমন দুর্বলতর প্রচেষ্টা আর যাই হোক জঙ্গীবাদ নির্মূলে সহায়ক নয়। অবিলম্বে জঙ্গী নির্মূলে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। দক্ষ পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে না পারলে এবং তাদের কাজে লাগানো না গেলে হত্যাযজ্ঞ বাড়তেই থাকবে। চট্টগ্রাম, নাটোর ও ঝিনাইদাহের ঘটনার পর নির্বিকার থাকা কোনভাবেই কাম্য নয়।
×