ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আশার বাণী শোনাননি ক্রুইফ-মামুনুল

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৭ জুন ২০১৬

আশার বাণী শোনাননি ক্রুইফ-মামুনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাই উৎরানোর স্বপ্ন শেষ। এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বের বাছাইপর্বে খেলার সুযোগটাও প্রায় নিভু নিভু। যদি বাছইপর্বে খেলার সুযোগটা কাজে লাগাতে হয় এ জন্য আজ স্বাগতিক বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে বেশ বড় ব্যবধানে জিততে হবে প্রতিপক্ষ তাজিকিস্তান দলের বিরুদ্ধে। ব্যবধানটা কত? কমপক্ষে ৬-০ গোলের জয়। ৫-০ গোলে জিতলে খেলা গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় ম্যাচ শুরু হবে। সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতারে। এই ম্যাচ উপলক্ষে সোমবার দুপুরে ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের কনফারেন্স রুমে উভয় দলের ম্যানেজার, প্রশিক্ষক ও অধিনায়কের উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের পক্ষে উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বাফুফে নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রূপু, প্রধান প্রশিক্ষক লোডভিক ডি ক্রুইফ, দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম, তাজিকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের পক্ষে দলের ম্যানেজার করিমভ উলুগবেক, প্রধান প্রশিক্ষক খাকিম ফুজাইলভ ও অধিনায়ক দাভরনভ নুরিদ্দিন। খেলার টিকেট পাওয়া যাবে ভিআইপি ১০০ এবং গ্যালারি ৫০ টাকায়। আজকের ম্যাচে অবশ্য বাংলাদেশ যদি ৬-০ গোলে জেতে, তাহলে তারা সরাসরি চলে যাবে বাছাইপর্বে। আর যদি হারে বা ড্র করে, তাহলেও আরেকটা ‘লাইফ লাইন’ পাবে তারা। সেক্ষেত্রে আগামী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে তাদের প্লে-অফের আরও দুটি ম্যাচ খেলতে হবে প্রতিপক্ষ ভুটানের বিরুদ্ধে। ভুটানকেও যদি হারানো না যায়, তাহলে আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০১৯ সাল পর্যন্ত এএফসি আয়োজিত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। যদি তাই হয়, তাহলে অবশ্যম্ভাবীভাবে সেটা হবে বাংলাদেশ দলের জন্য চরম অশনি সঙ্কেত! আর তাই তো আজকের ম্যাচ জেতাটা (৬-০ গোলে) বাংলাদেশের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দলের সার্বিক শক্তিমত্তার নিরিখে সেটা কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে যথেষ্টই। তাই পয়েন্ট পেতে বদ্ধপরিকর ১৮১ র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও তাজিকিস্তান ১০ ম্যাচে পরস্পরের মোকাবিলা করেছে। তাজিকিস্তান জিতেছে ৬ ম্যাচে, বাংলাদেশ ১ ম্যাচে। ড্র হয়েছে ৩টি ম্যাচ। ক্রুইফের অধীনে আড়াই বছরে বাংলাদেশ জাতীয় দল ও অলিম্পিক দল মোট ম্যাচ খেলেছে ৩১টি। জিতেছে ৭টিতে, ড্র ৮টিতে, হার ১৬টিতে। ২০০৩ সালের ২৬ নবেম্বর বিশ^কাপ প্রাক-বাছাইয়ের ম্যাচে তাজিকিস্তানের কাছে ০-২ গোলে হেরেছিল। ৩০ নবেম্বর ফিরতি ম্যাচেও একই ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশ হারে ১-৬ গোলে। ২০০৭ সালের ১০ আগস্ট বিশ^কাপ বাছাইপর্বে জুমরাতুল ইসলাম মিঠুর গোলে তাজিকদের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। ওই বছরই ২৮ আগস্ট ফিরতি ম্যাচে ০-৫ গোলে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ। ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কলম্বোতে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপে ২-১ গোলে জেতে বাংলাদেশ। গোল করেছিলেন এনামুল ও মিশু। ২০১৫ সালের ১৬ জুন বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ে এমিলির গোলে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ প্রাক-বাছাইয়ে তাজিকদের কাছে আবারও ০-৫ গোলে হারে বাংলাদেশ। সর্বশেষ গত ২ জুন এশিয়ান কাপের বাছইপর্বের প্লে-অফ পর্বে স্বাগতিক তাজিকদের কাছে আবারও ৫-০ গোলে হারে বাংলাদেশ। ‘ফুটবলে সবই সম্ভব। আমরা জয়ের জন্যই নামব। তবে ৫ গোলে জেতা তাজিকিস্তানের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জেতাাটা খুব কঠিন।’ বাংলাদেশের ডাচ্ কোচ লোডভিক ডি ক্রুইফের মন্তব্য। তার এ কথা থেকেই অনুমান করা যায়, আজকের ম্যাচের ফল কেমন হতে পারে! অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘কোন আশার কথা বলতে চাই না। এর আগে অনেক কিছুই বলেছি। করতে পারিনি। এবার আর কিছু বলব না।’ তাজিকিস্তান এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের মূল পর্বে এক পা দিয়ে রেখেছে। ফলে তারা বাংলাদেশের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তারপরও দলটির কোচ খাকিম ফুজায়লভ বেশ সতর্ক। তিনি বলেন, ‘আগের ম্যাচের জয়কে ভুলে যেতে চাই। ফুটবলে যেকোন কিছুই হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ও তাজিকিস্তানের আবহাওয়া ভিন্ন। বেশ গরম এখানে। হোটেলে খাবারে কিছু সমস্যা হয়েছে। আগের দুই বার বাংলাদেশে এসে ড্র করেছি। এবার আশা করছি আমরা ভিন্ন কিছু করব।’ গত বছর ১৬ জুন বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচে তাজিকিস্তানকে ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এক বছর পর তাজিকিস্তান আবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের মুখোমুখি। এর মধ্যে আরও দুই বার তাজিকিস্তান বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছে। তাজিক অধিনায়ক নুরিদ্দিন বলেন, ‘এক বছরের মধ্যে তিন বার মুখোমুখি হলেও দুই দলের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। তাজিকিস্তান বাংলাদেশ দুবারই ০-৫ গোলে হারলেও তারাও গোলের সুযোগ পেয়েছিল অনেক।’ ক্রুইফও বড় হারের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একই কথা বলেন, ‘১-০ গোলে পেছানোর পর আমরা ১-১ করতে পারিনি। তারা ২-০ করেছে। এরপর ২-১ করতে পারিনি। তারা ৩-০ করেছে। এভাবে ম্যাচটা হাতছাড়া হয়েছে।’ আজকের ম্যাচে তাজিকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ দলকে খেলতে হবে একাধিক কার্ড সমস্যা নিয়ে। কেননা গত ২ জুন দুশানবেতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে মোনায়েম খান রাজু, জামাল ভূঁইয়া এবং সোহেল রানা হলুদ কার্ড পেয়েছেন। এই ম্যাচেও কার্ড পেলে তারা ভুটানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবেন না। রাজু হাল্কা ইনজুরিতে। তাই একাদশে পরিবর্তন আনতে পারেন ক্রুইফ। দলের অবস্থা যাই হোক, ক্রুইফের বিশ্বাস গত ম্যাচে হারলেও এই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবে তার শিষ্যরা, ‘সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছি। তারা শতভাগ দিয়ে খেলবে। সেট পিস নিয়ে গত দু’দিন কাজ করেছি।’ তাজিক এই কোচ মনে করছেন ঘরের মাঠ আর আবহাওয়া বাংলাদেশের পক্ষেই। আবহাওয়ার কন্ডিশনটা ভিন্ন। তবে তার দল বেশি আত্মবিশ্বাসী। এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ভাবছেন না তারা। আর বাংলাদেশকে সমীহও করছেন তিনি। তাজিক অধিনায়ক দাভরনভ বলেন, ‘ম্যাচ নিয়ে কোচই সব বলে ফেলেছেন। দলের মোটিভেশন ভাল আছে। নিজেদের সেরাটা দিয়ে সেরা ফলটা আনতে চাই।’ এখন দেখার বিষয়, আজকের ম্যাচে কেমন ফল করে বাংলাদেশ দল।
×