ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিস্তর দুর্ভাগ্যজনক ॥ বুলবুল

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৭ জুন ২০১৬

টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিস্তর দুর্ভাগ্যজনক ॥ বুলবুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রস্তাবনায় আছে ২০১৯ সালের মধ্যেই টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিস্তর প্রণয়ন করা। এর এক স্তরে খেলবে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানীয় ৭ দল আর আরেক স্তরে খেলবে ৫ দল (র‌্যাঙ্কিংয়ের শেষ তিন দল এবং আইসিসির ২ সহযোগী সদস্য দল)। ক্ষুদ্র ফরমেটের ক্রিকেটে বেশ উন্নতি করতে পারলেও টেস্ট ক্রিকেটে সেটা পারেনি বাংলাদেশ। র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান ৯ নম্বরে। এটাকে নিজেদেরই ব্যর্থতা বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তিনি মনে করেন টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও উন্নতি করতে না পারাটা ধারাবাহিক পরিকল্পনার অভাব বলেও দাবি করলেন তিনি। এ কারণে দ্বিস্তর বিশিষ্ট টেস্ট ক্রিকেট চালু হলে বড় দলগুলোর সঙ্গে খেলতে না পারার যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে সেই দুর্ভাগ্যটা নিজেদেরই কর্মফল বলে মনে করেন বুলবুল। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে এক সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের অভিষেক টেস্টেই অবিস্মরণীয় সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ডের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন বুলবুল। কিন্তু ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া দলটি গত ১৬ বছরে এগোতে পারেনি বেশিদূর। এর কারণ হিসেবে কম টেস্ট খেলাকেই বড় অন্তরায় হিসেবে দেখছেন বুলবুল। তিনি বলেন,‘আমি এটা আগেও বলেছি যে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটকে কখনোই সেভাবে মূল্যায়ন করিনি। আমাদের যে অঞ্চলগুলো আছে সেগুলোর কেন্দ্রীকরণ আমরা এখনও গড়ে তুলতে পারিনি। লঙ্গার ভার্সনে অঞ্চলভিত্তক যে ক্রিকেট হয় সেখানে আমরা মনোযোগী ছিলাম না। আমরা যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও বেশি মনোযোগী হতাম, আমরা যদি আরও বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারতাম, সে ক্ষেত্রে হয়ত আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি ৭০-৮০টা টেস্ট ম্যাচ খেলার পরও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম না। এটা আমাদের নিজেদের ব্যর্থতার ফল বলব আমি।’ পুরোপুরি ধারাবাহিক পরিকল্পনার অভাবটাকেই দায়ী করলেন অভিষেক টেস্টে ১৪৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলা বুলবুল। নিজেদের পিছিয়ে পড়ার কারণ এছাড়া অন্য কিছুই দেখেন না তিনি। এ বিষয়ে বুলবুল আরও বলেন, ‘আমাদের সেটআপ বা কৌশল এমন হওয়া দরকার ছিল বা হওয়া উচিত যে সব খেলা নিজস্ব পদ্ধতিতে চলবে, নিজস্ব ক্যালেন্ডারে চলবে। সেটা হলে আজ হয়ত আমরা আক্ষেপ করতাম না যে আমাদের এখানে চারদিনের ম্যাচ কম হচ্ছে, আমাদের অঞ্চলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো সচল না।’ এখন আইসিসি টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিযোগিতা বাড়ানো এবং আকর্ষণ বাড়ানোর লক্ষ্যে দুই স্তরে বিভক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে বিশ্বসেরা দলগুলোর বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে। এ বিষয়ে বুলবুল আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘আমার প্রশ্নটা হচ্ছে ১৬ বছর টেস্ট ম্যাচ খেলার পর আজ কেন আমরা এই চিন্তা করছি এখন? কেন আমরা ১৫ বছর আগে এই চিন্তাটা করিনি। আমাদের ধারাবাহিক পরিকল্পনার যে অভাব ছিল এটা তারই প্রতিফলন।’ আমরা পাঁচ নম্বর দল হলে হয়ত ইংল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সাথে টেস্ট খেলা সম্ভব হবে। এর আগে নিচুসারির দলগুলোর সঙ্গেই খেলতে হবে। এ বিষয়ে বুলবুল বলেন, ‘এটা যদি হয় কিছু সময়ের জন্য আমি বলব, আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। যেহেতু নিচের সারির দল, আমরা মিস করব টেস্ট ম্যাচগুলো। আমাদের উচিত সেই চেষ্টা করা কিভাবে আমরা সামনের দিকে যাব বা তাদের সাথে নিয়মিত টেস্ট খেলতে পারব। এটা যদি হয় আমাদের অবস্থানের কারণে কিন্তু মেনে নিতেই হবে। ১৬ বছর টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর টেস্ট খেলার ব্যাপারে আমরা কতটুকু মনোযোগী ছিলাম, আমাদের পারফরমেন্স কি ছিল তার ফলটাই কিন্তু এখন আমাদের অবস্থান। সেই ব্যাপারগুলোর প্রতিফলনই ঘটতে যাচ্ছে।’ জাতীয় ক্রিকেট দল গঠনের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তনের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। নির্বাচক প্যানেল করা হচ্ছে দুই স্তরের। এ বিষয়ে বুলবুল বলেন, ‘যখন কোথাও কোন সমস্যা হয় তখন আমরা সেটা সমাধান করার চেষ্টা করি। আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের দল ভাল খেলছে। এখানে পরিবর্তনটা কতটুকু দরকার ছিল সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আমরা যে তিনজন নির্বাচককে কাজে লাগাচ্ছি তারা সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন এবং সফল। তাদের ক্রিকেট জ্ঞান নিয়ে কোন প্রশ্ন ওঠা উচিত নয়। আমাদের নির্বাচক কমিটি ভাল করছে। তারা যদি খারাপ করত বা আমাদের দলের পারফর্মেন্স খারাপের দিকে যেত তাহলে হয়ত আমরা এই চিস্তাটা করতে পারতাম। যেহেতু সব কিছু ভাল চলছে তাহলে কেন আমরা তাদের বিরক্ত করছি।’
×