ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;বাদল চন্দ্র সূত্রধরের জবানবন্দী

হোসাইন ও মোসলেম ৩৪ হিন্দুকে শ্মশান ঘাটে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৭ জুন ২০১৬

হোসাইন ও মোসলেম ৩৪ হিন্দুকে শ্মশান ঘাটে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ার দুই রাজাকার সৈয়দ মোঃ হোসাইন ও মোঃ মোসলেম প্রধানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী বাদল চন্দ্র সূত্রধর জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, আসামিদ্বয় আমাদের এলাকায় পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে মিলে হত্যা লুণ্ঠন ও ধর্ষণ চালিয়েছে। তারা ৩৪ জন হিন্দুকে আটক করে শ্মশান ঘাটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া আসামিরা বলেন- হিন্দুরা মুসলমান না হলে তাদের গুলি করে হত্যা করা হবে। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীকে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। জবানবন্দী শেষে পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১২ জুন দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীর জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। আসামিপক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম বাদল চন্দ্র সূত্রধর। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৯/৬০ বছর। আমার গ্রাম দামপাড়া, থানা-নিকলী, জেলা-কিশোরগঞ্জ। আমি পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। বর্তমানে আমি কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৪-১৫ বছর। তখন আমি নিজবাড়ি দামপাড়ায় ছিলাম। তখনও আমি বাবার সঙ্গে দামপাড়ায় কাঠমিস্ত্রির কাজ করতাম। মধ্য দামপাড়াটি হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। মধ্য দামপাড়ার উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিকে মুসলমানরা বসবাস করত। পশ্চিমদিকে নদী ছিল। সাক্ষী বলেন, একাত্তরের আশ্বিন মাসের ৬ তারিখে বেলা আনুমানিক আড়াইটা/তিনটার দিকে নিকলী থানার রাজাকার কমান্ডার মোঃ হোসাইন আনুমানিক ৫০-৬০ জন রাজাকার ও পাকিস্তান আর্মিসহ একটি লঞ্চযোগে দামপাড়া বাজারের ঘাটে আসে। সেই লঞ্চ থেকে ২০-২৫ জন রাজাকার ও পাকিস্তান আর্মি ওই লঞ্চ নিয়ে আমাদের দামপাড়া গ্রামে বনবাসী সূত্রধরের বাড়ির ঘাটে আসে। এরপর তারা বাজারের দিকে যায়। বাজারে গিয়ে ১০-১২ জন হিন্দুকে আটক করে। পাকিস্তান আর্মিরা বনবাসী সূত্রধরের বাড়ির সামনে আটক রাখা ৩৯ জনকে লক্ষ্য করে বলে- এই মালাউনদের নৌকায় করে নিকলী থানায় নিয়ে যাও। নিকলী থানায় আটককৃতদের মধ্যে ৩৫ জনকে শ্মশানঘাটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। যাদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন- আমাদের দামপাড়া গ্রামের বনবাসী সূত্রধর, সুনীল সূত্রধর, মধু সূত্রধর, সুনীল সূত্রধর, সুরেন্দ্র সূত্রধর, অবিনাশ সূত্রধর, আরাধন সূত্রধর, কার্তিক সূত্রধর, সুধীর সূত্রধর, মনিন্দ্র সূত্রধর, শিরিষ সূত্রধর ও রজনী বর্মণ। যে ৩৫ জনকে হত্যা করার জন্য নৌকায় তোলা হয়, তার মধ্যে কামিনী বর্মণ বাড়িতে ফিরে আসে। তাকেও গুলি করা হয়েছিল। বর্তমানে কামিনী বর্মণ মৃত। সাক্ষী বলেন, বাড়ি ফিরে এসে দেখি- আমাদের প্রতিবেশী কমলা বর্মণ, সমলা বর্মণ এবং আরও অনেক হিন্দু নারীর ওপর আগের দিন আর্মি ও রাজাকাররা নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনের কারণে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গ্রামের ধীরেন্দ্র ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা শেষে তারা বলেন, আর্মি ও রাজাকাররা তাদের সম্ভ্রম লুট করেছে।
×