ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রীর বাড়ির সামনে লাশ ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল ॥ নাসিম

‘ওরা সরকার উৎখাতের চক্রান্ত হিসেবেই বেকার নার্সদের আন্দোলনে নামায়’

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ৭ জুন ২০১৬

‘ওরা সরকার উৎখাতের চক্রান্ত হিসেবেই বেকার নার্সদের আন্দোলনে নামায়’

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বেকার নার্সদের দিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত এখনও বন্ধ হয়নি। নির্বাচিত সরকার পতনের জন্য এবার বেকার নার্সদের উস্কানি দিয়ে মাঠে নামানো হয়। তারা চেয়েছিল বিক্ষোভের নামে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে একটি লাশ ফেলতে। আর এই লাশ নিয়ে নতুন করে সরকার উৎখাতের আন্দোলনে নামার চক্রান্ত ছিল। কিন্তু তাদের সেই লাশ ফেলার চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেছে। সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ পরিষদ আয়োজিত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয় বাস্তবতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরও বলেন, নার্সরা কেন আমার বাড়ির সামনে যাবে? এটা তো আমার ব্যক্তিগত বাড়ি। কোন আন্দোলন দরকার হলে সেটা সরকারী বাসভবনের সামনে যেতে পারতেন। আসলে তারা হেফাজতের মতো করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, লাশ ফেলার ষড়যন্ত্রের নেপথ্য নায়কদের মুখোশ উšে§াচন হয়ে গেছে। ধানম-ির এক বেসরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ড্যাবের এক নেতা, এনজিও কর্মী ও বিদেশী একটি গবেষণা সংস্থার এক কর্মকর্তা কয়েক দফা বৈঠক করে এই ষড়যন্ত্র প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কলকাঠি নাড়ান। তারা (ষড়যন্ত্রকারীরা) নার্সদের বলেছিল, এগিয়ে যাও আমরা আছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। শেখ হাসিনা সরকারকে আর কোনভাবে পতন ঘটানো যাবে না ভেবেই নিরীহ নার্সদের দিয়ে আন্দোলন করিয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শহীদ এম মনসুর আলীর বাসায় যেমন জাসদ নামে একটি দল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল, তেমনি সম্প্রতি নার্সদের উস্কে দিয়ে তারা সরকার উৎখাতের জন্য একটা পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র আমি সফল করতে দেইনি। তিনি বলেন, ‘আমি খালেদা জিয়ার দলকে বলতে চাই শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।’ বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশে স্বাস্থ্য খাতের অভূতপূর্ব সাফল্যে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। এ জন্য এ খাতের উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয় তাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়। তারা অর্থের বিনিময়ে বেকার নার্সদের আন্দোলনে নামায়। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বাসভবন ঘেরাওয়ের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির এই ষড়যন্ত্রে বেকার নার্সরা ছিল অল্প জন। বেকার নার্স নামধারী বহিরাগতদের হাতে ছিল ইটের টুকরা। তিনি বলেন, যারা এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের তালিকা আছে। ষড়যন্ত্রে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। গ্রামীণফোন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মোবাইল ফোনের ব্যবহারের মধ্য দিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। ১৯৯৬ সালে আমি যখন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম, তখন আমাদের ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী তিনটি লাইসেন্স দেয়া যেত, মোরশেদ খানের শুধু লাইসেন্স ছিল। আর কাউকে লাইসেন্স দেয়া যেন না যায়, তাই মোরশেদ খান মামলা করে রেখেছিলেন। তখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণফোনের চেয়ারম্যান ছিলেন। অনেকবার আমার কাছে এসেছিলেন। উনি (ইউনূস) ছিলেন ৪ নম্বর আবেদনকারী। উনার একটা অভ্যাস ছিল, উনি মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের দিয়ে চিঠি পাঠাতেন। আমাকে একদিন প্রধানমন্ত্রী বললেন, নাসিম ভাই আপনি ইউনুস সাহেবকে লাইসেন্স দিয়ে দেন, তদ্বিরে অতিষ্ঠ করে তুলছে। আমি উনাকে গ্রামীণফোনের লাইসেন্স দিলাম। সেই লাইসেন্সের বদলে উনি নোবেল প্রাইজ পেয়ে গেলেন। সভাপতির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদ চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, অনেকে উচ্চাভিলাষী বাজেট বলে ঠাট্টা করেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত, উচ্চ আকাক্সক্ষা না থাকলে, বড় হওয়ার ইচ্ছা না থাকলে কেউ বড় হতে পারে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা কেউই রুখতে পারবে না। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ছত্রছায়ায় দেশে টার্গেট কিলিং হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে এ হত্যাকা-। আর খালেদা জিয়ার আঁচলতলে রয়েছেন হত্যাকারীরা। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া এমনিতেও ম্যাট্রিক পাস করেননি। বায়োমেট্রিক পাসও তিনি করেননি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দাবি করেছেন, তার মোবাইল নেই। শুনেছি, তিনি ল্যান্ডফোনে কথা বলেন। তাহলে তিনি তো এনালগ সিস্টেমেই রয়ে গেছেন। এখন তিনি যদি নতুন করে সিম কেনেন, তাহলে তাকে ভ্যাট-ট্যাক্স ও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করে কিনতে হবে। বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কারণে অপরাধ কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট করা হচ্ছে। ২ লাখ ৫০ হাজার নারীকে আমরা আইসিটি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আইসিটি ডিভিশন থেকে ৪৫ লাখ মানুষ ২০০ ধরনের সেবা গ্রহণ করছে। ২ লাখ তরুণকে আইসিটি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রায় ২০ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বেসিস সভাপতি শামীম আহসানসহ দলের অন্যান্য নেতা।
×