ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যবসায়ীদের মতে ভ্যাট দ্বিগুণ করা হয়েছে

প্রস্তাবিত প্যাকেজ ভ্যাট দিতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৭ জুন ২০১৬

প্রস্তাবিত প্যাকেজ ভ্যাট দিতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা

এম শাহজাহান ॥ প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে প্যাকেজভিত্তিক ভ্যাট প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। ভ্যাটের (মূল্য সংযোজন কর) বাড়তি এই টাকা গুনতে রাজি নন ব্যবসায়ীরা। আর আগামী বছর থেকে ভ্যাট আইনটি পুরোপুরি বাস্তবায়নে অনড় অবস্থানে রয়েছে সরকার। তাই বাজেটে প্যাকেজভিত্তিক ভ্যাট দেয়ার ব্যবস্থা বহাল থাকলেও ভ্যাট নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা সহসা দূর হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা আবারও রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের দাবি, চলতি বাজেটে যে হারে ভ্যাট নেয়া হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটেও সেটি বহাল রাখতে হবে। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্যাকেজভিত্তিক ভ্যাট বহাল রাখা হয়েছে। আগামী একবছর পর আইনটি পুরোপুরি কার্যকর হবে। একটি বছর ব্যবসায়ী সমাজ যে অতিরিক্ত সময় পেলেন সেই সময়ের মধ্যে তারা সকল স্তরে হিসাব রক্ষণের ব্যবস্থাটিকে পাকাপাকি করবেন। এই কাজটি মূলত সকলের জন্য একটি উইন অবস্থান প্রস্তুত করবে। এদিকে, ক্ষুদ্র ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সাধারণত প্যাকেজভিত্তিতে ভ্যাট প্রদান করে থাকেন। এক্ষেত্রে যারা ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর প্রদানে আগ্রহী নন, তাদের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এলাকাভিত্তিক করহার ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা যে হারে কর দেন সেটা ৩ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে এলাকাভিত্তিক যথাক্রমে ৭ হাজার টাকা, ৭হাজার ২০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৪ হাজার টাকা, ১০ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০ হাজার টাকা এবং ১৪ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার অন্যান্য সকল পর্যায়ে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের বিদ্যমান ব্যবস্থা বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে যেসব ব্যবসায়ী প্রকৃত ভ্যাটের ভিত্তিতে কর দিতে আগ্রহী হবেন-তাদের জন্য উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের সুযোগসহ প্রমিতহারে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও টাঙ্গাইল চেম্বারের প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী ভ্যাট প্রদানে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়বেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ীরা। ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থে চলতি বাজেটের বিদ্যমান ভ্যাট বহাল রাখা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আন্দোলন নয়, ভ্যাট নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। যেহেতু আগামী বছর থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে তাই ব্যবসায়ী সমাজকে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এমনকি সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও বিষয়টি উপস্থাপন করা যেতে পারে। এদিকে, বিদ্যমান ভ্যাট হার বহাল রাখার দাবিতে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের নেতারা আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলছেন, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যেভাবে প্যাকেজ মূসক ব্যবস্থা রেখেছেন, তা অরাজকতা তৈরি করবে। প্যাকেজ মূসক বহাল রাখার নামে তিনি মূলত ব্যবসায়ীদের ফাঁকি দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, প্যাকেজ মূসকের দাবিতে গত ৩০ মে সারা দেশে এক ঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখে মানববন্ধন করেছিল ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম। এরপর জাতীয় সংসদে গত ৪ জুন উপস্থাপিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের প্যাকেজ মূসক ব্যবস্থা বহাল রাখেন। বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেন, যারা ৩ শতাংশ হারে লেনদেন কর দিতে চান না, তারা প্যাকেজ মূসক দিতে পারবেন। তবে আইন অনুযায়ী, ৮০ লাখ টাকা লেনদেন সীমা পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ৩ শতাংশ লেনদেন কর দিতে পারেন। আর ফোরামের দাবি, প্যাকেজ মূসক প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বাৎসরিক লেনদেনের পরিমাণ ৮০ লাখ টাকার বেশি। তাই বাজেটে প্যাকেজ মূসক ব্যবস্থা রাখা হলেও তা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ফোরাম চায় খুচরা ব্যবসায়ী বা দোকান পর্যায়ে লেনদেনের পরিমাণ-নির্বিশেষে প্যাকেজ মূসক ব্যবস্থা বহাল রাখা হোক। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এসএ কাদের কিরণ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্যাকেজ ভ্যাট দ্বিগুণ করা হয়েছে। ৩ হাজার ৬০০ টাকার স্থলে ৭ হাজার টাকা এবং বাড়ি ভাড়ার ওপর ভ্যাট ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভ্যাটের হার দ্বিগুণ করা হয়েছে। চলতি বাজেটে ১৫০ স্কয়ারফিটের দোকান পর্যন্ত ভ্যাট মওকুফ ছিল, এখন সেটা তুলে দেয়া হয়েছে, আর ম্যাক্সিমাম ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০০ ভাগ ভ্যাট বেড়েছে। এই পরিমাণ ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব নয়। তাই ভ্যাটের হার কমানোর দাবিতে আবারও সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। আশা করছি, বাজেট পাস হওয়ার হওয়ার আগেই ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব মেনে নেয়া হবে। এদিকে, সম্প্রতি ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের ক্ষেত্রে কেবল উৎপাদন পর্যায়ে ৩৬ লাখ টাকার উর্ধে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের ওপর ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর পরিশোধের বিধান করার দাবি করা হয়েছে। উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণে অসমর্থ ব্যক্তির করযোগ্য পণ্য বা সেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ হিসাবে গণনা করে তার ওপর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ সরবরাহ মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ হারে মূসক পরিশোধের বিধান করা। এছাড়া ব্যবসায়ী পর্যায়ে তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্তিযোগ্য ব্যক্তি যারা ইসিআর কিংবা পাস ব্যবহার করে নির্ধারিত মূল্যে পণ্যে বিক্রয় করে থাকে তারা টার্নওভারের পরিমাণ নির্বিশেষে মূল্য সংযোজন কর ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ হিসাবে গণনা করে তার ওপর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ সরবরাহ মূল্যের ওপর ২ শতাংশ হারে টার্নওভার কর পরিশোধের বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব ব্যবসায়ীদের এই দাবি পূরণে আবারও আল্টিমেটাম দিয়েছেন। আগামী ২০ জুনের মধ্যে এ দাবি পূরণ না হলে ধর্মঘট কর্মসূচী দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
×