ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চাহিদা সামাল দেয়াও কঠিন হচ্ছে

রমজানেও থাকবে বিদ্যুতের ভোগান্তি

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৭ জুন ২০১৬

রমজানেও থাকবে বিদ্যুতের ভোগান্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সর্বোচ্চ উৎপাদনের মধ্যেও বিদ্যুত ভোগাবে রমজানে। প্রায় ৮ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন করেও চাহিদা সামাল দেয়া কঠিন হচ্ছে। এর উপর তাপমাত্রা একটু বাড়লেই গ্রাহক ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও রমজানে গ্রাহক সন্তষ্টি ধরে রাখা বিদ্যুত বিভাগের জন্য চ্যালেঞ্জিং মনে করা হচ্ছে। পিডিবি রবিবার রাত ১০টায় সর্বোচ্চ আট হাজার ৪৮২ মেগাওয়াট উৎপাদনের কথা বলছে। অন্যদিকে দেশে এখনও এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করতে সিএনজি স্টেশনে বাড়তি রেশনিং এবং সারকারখানা বন্ধ করে বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বলছে গত রবিবার পিক আওয়ারে তাদের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল চার হাজার ৪২১ মেগাওয়াট অন্যদিকে সরবরাহ করা হয়েছে তিন হাজার ৫২৬ মেগাওয়াট। অর্থাৎ সারাদেশের পল্লীবিদ্যুতের এলাকায় ৮৯৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। ডিপিডিসি, ডেসকো, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং পিডিবির নিজস্ব বিতরণ এলাকার লোডশেডিং মিলিয়ে হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। তবে অতিরিক্ত সংযোগ দেয়ার ফলে চাহিদা এবং উৎপাদনের ঘাটতিতে এবার গ্রাহক ভোগান্তি বেড়েছে। সোমবার বিদ্যুত জ্বলানানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সাংবাদিকদের বলেন, সিএনজি স্টেশনে বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গ্যাস রেশনিং করে বিদ্যুত উৎপাদনে দেয়া হবে। এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঈদে ২৪ ঘণ্টা সিএনজি স্টেশন খোলা রাখার বিষয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে কোন আলোচনা না করেই ঘোষণা দিয়েছে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এ সময় তিনি বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারে গ্রাহকদের আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন। বিদ্যুত উৎপাদনের চেয়ে সাশ্রয়ের অপরচুনিটি কষ্ট বেশি, ফলে গ্রাহক ও বিদ্যুত প্রদানকারী উভয়েই লাভবান হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, যে কোন মূল্যে সেহরি এবং ইফতারের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করতে হবে। এজন্য পিডিবি এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চেয়েছে। যদিও পেট্রোবাংলা এ বিষয়ে কোন অঙ্গীকার করেনি। তবে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গত রমজানেও পিডিবির চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে পেট্রোবাংলা। গত রমজানে গড়ে এক হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হয় বিদ্যুত উৎপাদনে। এখন পিডিবি ৯৫০ থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বিদ্যুত উৎপাদনে সরবরাহ করছে। অতিরিক্ত আরও ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ পেলে ৪৫০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করছে পিডিবি। এতে উৎপাদন নয় হাজার মেগাওয়াটের উপরে হলে রমজানে পরিস্থিতি সহনীয় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার রমজানে বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত গ্যাস রেশনিং করবে। রবিবার এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সোমবার এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর বাইরে দেশের বৃহৎ গ্যাস ব্যবহারকারীদের মধ্যে আবুল খায়ের গ্রুপ এবং বিএসআরএমকে পিক আওয়ারে উৎপাদন না করার জন্য সরকার অনুরোধ করবে। এতে অন্তত ২০০ মিলিয়ন গ্যাস সাশ্রয় হবে। আজ বা কাল তাদের সঙ্গে একটি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। তবে সাশ্রয় হওয়া গ্যাসের পুরোটাই বিদ্যুতে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে যেসব জায়গাতে বাসাবাড়ি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে তার অবস্থার উন্নীতি হবে। যদিও সিএনজি ফিলিং স্টেশন সাত ঘণ্টা বন্ধ থাকলেও রমজানে বাসাবাড়িতে গ্যাস সঙ্কট থাকবে কিনা সে বিষয়ে কোন নিশ্চিয়তা দিতে পারেননি বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, তবে কিছুটা সঙ্কট হতে পারে। ইতোমধ্যে সার উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করা হচ্ছে। চালু একমাত্র সারকারখানা যমুনাকেও সরকার গ্যাস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এতে অন্তত ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হবে।
×