ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা

মোটরসাইকেলে তিন আরোহী চলতে পারবেন না

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৭ জুন ২০১৬

মোটরসাইকেলে তিন আরোহী চলতে পারবেন না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মোটরসাইকেল বিশেষ নজরদারিতে নেয়া হচ্ছে। এখন থেকে এক মোটরসাইকেলে তিন আরোহী চলতে পারবেন না। শনিবার চট্টগ্রামে একটি মোটরসাইকেলের তিন আরোহীর হামলায় এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য গোয়েন্দা বাহিনী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশপতœী হত্যাকা-ের ‘মোটিভ’ থেকে শুরু করে এর সঙ্গে জড়িত এবং পরিকল্পনাকারীদের বের করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কতগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছি। তিনজন আরোহী যে মোটরসাইকেলে চলবে তাকে আমরা বাধা দেব, ধরব ও চেক করব। তিনজন নিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে দেয়া হবে না। অনেকে ফ্যামিলি নিয়ে যায় এজন্য পুলিশ কিছুটা রিল্যাক্স থাকে। কিন্তু এখন পরিষ্কার নির্দেশ দেয়া হবে। তিনজন কোন মোটরসাইকেলে কোনভাবেই উঠতে পারবেন না। কারণ যতগুলো ঘটনা ঘটছে, সন্ত্রাসীরা এ মোটরসাইকেলে করেই যাচ্ছে। আমরা অগ্নি-সন্ত্রাসের সময় বলেছিলাম, দুইজনও কোন মোটরসাইকেলে উঠতে পারবে না। তখন অগ্নি-সন্ত্রাস কমেছিল। এখন আমরা আবার মোটরসাইকেলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করছি। রবিবার ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে করে আসা তিন হামলাকারী চট্টগ্রামের জিইসি মোড় সংলগ্ন একটি মিষ্টির দোকানের সামনে এসপি বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রথমে ছুরি মারে এবং পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়। ওই মোটরসাইকেলটি এর মধ্যে জব্দ করা হয়েছে বলে পুলিশ যে দাবি করছে, তার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বললেন, ওই মোটরসাইকেলটি এর মধ্যেই আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। কার নামে মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন আছে, কারা এটি ব্যবহার করেছে সবই পেয়ে যাব। গোয়েন্দা বাহিনী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছে এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য। পুলিশপতœী হত্যাকা-ের ‘মোটিভ’ থেকে শুরু করে এর সঙ্গে জড়িত এবং পরিকল্পনাকারীদের বের করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। এদিকে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, এ হত্যাকা-ে সন্দেহভাজন হিসেবে জেএমবির সংশ্লিষ্টতাকে প্রধান্য দিয়ে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, জেএমবির সংশ্লিষ্টতাকে প্রাধান্য দিয়ে খতিয়ে দেখছি, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। শুরুতে একটি বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে হচ্ছে না। সব কিছু নিয়ে আমাদের এগোতে হচ্ছে। রাতভর অভিযানের মধ্যে একটি মোটরসাইকেল জব্দ করার কথা তিনিও বললেন। এ হত্যার ঘটনায় পাঁচলাইশ থানার এসআই ত্রিরতন বড়ুয়া রবিবার রাতে একটি মামলা করেছেন, যাতে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। সিএমপি কমিশনার ইকবাল বলেন, মূলত ডিবি (গোয়েন্দা শাখা) এই তদন্ত করবে সব বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে। পুলিশের মনোবল ভাঙতেই এই হত্যা ॥ বাবুল আক্তারকে চৌকস কর্মকর্তা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের পৈশাচিক হত্যাকা-, জঘন্য হত্যাকা- ঘটবে- মহিলাদের ওপর এ ধরনের আক্রমণ হবে- তা ধারণার বাইরে ছিল। ‘টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশের মনোবল যাতে নষ্ট হয় সেজন্য জঙ্গীরা এ ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে। যে পর্যন্ত খুনীকে না পাব সব ধরনের প্রচেষ্টা চলবে। সব খুনীকেই ধরছি, কোন খুনীই বাদ যাবে না। পুলিশ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে সে বিষয়ে কিছু না জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আলাপ করব, আমরা চিন্তা করব তাদের (পুলিশ) পরিবার-পরিজনরা যেন সেইফ থাকে। এ ধরনের হত্যার ঘটনায় তিনটির বিচার চলছে এবং ছয়টির অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই দুটি হত্যাকা-ের আগে ৩৭টি ঘটনা ঘটেছিল, যার ৩৫টি শনাক্ত করা হয়েছে। ৪৯ জন ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করেছে। সন্দেহভাজন হিসেবে আটক আছে ১৪৪ জন। মন্ত্রী বলেন, টার্গেটেড কিলিং হচ্ছে। এতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ষড়ষন্ত্র আছে। আমরা হাতেনাতে দেখিয়েও দিয়েছি কারা ষড়যন্ত্র করছে। আমরা এখন সেই জায়গায় কাজ করছি। এগুলো বন্ধ করতে যা করা দরকার তা করছি। ‘টার্গেটেড কিলিং’ বন্ধ করতে গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব হত্যাকা-ের ঘটনায় আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত রয়েছে। যার প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তাকে কিন্তু গ্রেফতার করেছি। আমরা প্রমাণ ছাড়া কাউকে এ্যারেস্ট করি না। আর কারা কারা জড়িত সেই প্রমাণের অপেক্ষায় আছি। আমাদের কাছে অনেক তথ্য আছে। অনেকেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত আছে। গোয়েন্দারা অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে খুনীদের পরিকল্পনার তথ্য দিতে পারছে না বলেও স্বীকার করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আইএস বায়বীয় ॥ বাংলাদেশের বিভিন্ন হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে আইএস বিবৃতি দিলেও দেশে এই জঙ্গী সংগঠনের কোন অস্তিত্ব নেই বলে আবারও জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আইএসের কোন প্রশ্নই ওঠে না। আমাদের দেশে আইএস নেই। এটা বায়বীয় জিনিস, খালি মুখে মুখেই বলছে। আমি তো সারাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি কোন আইএসের চিহ্ন নেই। তারা বলে, আইএস মানে ইসলামিক স্টেট। ইসলামিক স্টেটের কর্ম এটা নাকি- একটা নিরীহ মহিলাকে হত্যা করা, ধর্ম যাজককে হত্যা করা, নামাজরত অবস্থায় মুয়াজ্জিনকে হত্যা করা, একজন বিদেশী নাগরিককে হত্যা করা? এগুলো ইসলামিক স্টেটের কাজ হতে পারে নাকি? কাজেই এগুলো স্পষ্ট, এগুলো পরিষ্কার যে এটা একটা ষড়যন্ত্র।
×