ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমে নয় গাছে এবার ব্যবহার হচ্ছে কেমিক্যাল

প্রকাশিত: ০৪:২২, ৭ জুন ২০১৬

আমে নয় গাছে এবার ব্যবহার হচ্ছে কেমিক্যাল

ডি.এম. তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ এবার আমে নয়, গাছে দেয়া হচ্ছে কেমিক্যাল। আমের ফলন বৃদ্ধি ও প্রতিবছর অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী মুখিয়ে থাকে। তারা মালিক না হলেও বাগান ইজারা নিয়ে মালিক হয়ে বসে। কখনও এক বছরের জন্য, কখনও কয়েক বছরের জন্য। তাদের লক্ষ্য মুনাফা। বাগান কিংবা পরিবেশের ভাল-মন্দের কথা তারা ভাবে না। মূলতঃ কয়েক বছরের জন্য ইজারা নিয়ে এসব ব্যবসায়ী তথা চাষীরা দ্রুত লাভের আসায় রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে থাকে। এতে প্রথম দু’তিন বছর খুব ভাল ফলন হয়। প্রতি বছর মৌসুম যেমন থাকুক না কেন, মুকুল ও গুটি আসে। এখানকার কৃষিবিদদের মতে এখন পর্যন্ত এদেশে এ ধরণের হরমোন বা কেমিক্যাল ব্যবহার বা প্রয়োগের বিধান নেই। যদিও বিশ্বের অনেক দেশেই প্যাকলোবিউট্রাজন রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। এতে তারা আম উৎপাদনে যুগান্তকারী ফলাফল নিয়ে এসেছে। কিন্তু আবহাওয়াগত কারণে এ দেশে পাকলোবিউট্রাজন জাতীয় রাসায়নিক ব্যবহার নিসিদ্ধ। এখানে এ জাতীয় রাসায়নিক আম চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। এতে আমের গুনগত মান কমে যায়। স্বাদ ও পুষ্টিমানেও টান পড়ে। তারপরেও ভারতে এ ধরণের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করায় বহুজাতিক কোম্পানীগুলো এ দেশে তা বাজারজাত করার চেষ্টা করলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) প্যাকলোবিউট্রাজন নিয়ে গবেষণা করে। এতে ধরা পড়ে এর বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া। ফলে এর অনুমোদন আটকে যায়। বারি বিজ্ঞানী বা গবেষকদের উপেক্ষা করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ইঙ্গিতে চোরাকারবারীদের মাধ্যমে নানা নামে ‘প্যাকলোবিউট্রাজন’ ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে। জানা যায়, ‘কালটার’ নামে এ দেশে প্যাকলোবিউট্রাজন আনা হয়। অনুমোদন না থাকা সত্বেও চোরাকারবারীদের মাধ্যমে আনা ‘কালটার’ ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর অঞ্চলে। পরে বিস্তৃতি ঘটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরেও। লাগাতার কালটার ও সঙ্গে বস্তা বস্তা লবন ব্যবহারে প্রথম দশ বছরে কয়েক লাখ আম গাছ মারা গেলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ নড়ে চড়ে বসে। বারির গবেষকরা অনেক আগেই প্যাকলোউিট্রাজন ব্যবহারে কি ধরণের ক্ষতি হতে পারে, তার আগাম বার্তা দিয়েছিল। ২০১০ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিষিদ্ধ কালটার ব্যবহারে আম গাছ মরা শুরু হলে নড়ে চড়ে বসা কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি গবেষণা পৃথকভাবে মাঠে নেমে কালটার ব্যবহার না করতে প্রচার শুরু করে। যার অংশ হিসাবে ২৭/০৯/১১ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৩/৯০/১২৪ স্মারকে উপজেলা কৃষি অফিস, শিবগঞ্জে চিঠি ইস্যু করেছিল প্যাকটোবিউট্রাজল বা কালটার ব্যবহার ও গাছের উপর কিরূপভাবে প্রভাব ফেলে তা জানিয়ে। কালটার হচ্ছে গাছের বৃদ্ধি নিরোধক রাসায়নিক দ্রব্য। এটি তরল ও পাউডার উভয় অবস্থাতে পাওয়া যায়। দেশ ও কোম্পানী ভেদে এর নাম বিভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন ভারতের সিনজেনটা কোম্পানী এটি কালটার নামে বাজারজাত করে থাকে, থাইল্যান্ডের কোম্পানী এটি প্যাকলোবুটাজল নামে, অষ্ট্রেলিয়া এটি অসটার নামে বাজারজাত করে থাকে। এটি গাছের পাতার ভড়ষরধৎ ংঢ়ৎধু হিসাবে অথবা মাটিতে ঝড়রষ ফৎবহপযরহম পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। প্যাকলবুট্রাজলের মুল উপাদানের উপর ভিত্তি করে পাচ্ছে পড়সঢ়ধহু ভেদে এর প্রয়োগ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এটি গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত কারক হরমোন এরননবৎবষষরহং ঝুহঃযবংরং এর নিরোধক (ওহযরনরঃড়ৎ) হিসেবে কাজ করে। এটি যখন আম গাছে প্রয়োগ করা হয়, গাছের দৈহিক বৃদ্ধিকে দমিয়ে রেখে ফুল ও ফল আনয়নে সাহায্য করে। বাংলাদেশ থেকে কোন কোম্পানী এটির নিবন্ধন না পাওয়ায় বাংলাদেশে ‘প্যাকলোবুট্রাজল’ এর বাজারজাত হয় না। তাই চোরাকারবারীরা বিভিন্ন নামে প্যাকলোবিউট্রাজন আনা শুরু করে। এটি প্রয়োগ করলে গাছ খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে গাছ ফলন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এর প্রভাবে গাছের ডগার পর্ব সন্ধির দৈর্ঘ্য কমে যায়। ফলে অল্প বয়সের গাছে প্রয়োগ করলে গাছ খাটো হয়ে যায় এবং গাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যায়। মুকুল খাটো হয়ে যায়। প্রয়োগ মাত্রা বেশি হলে অনেক সময় গাছের চিকন ডগা মারা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় ব্যবহারে গাছ মারা যেতে পারে। বাগান মালিকদের অজান্তে ইজারা নিয়ে ব্যবসায়ী চাষীরা আম গাছে এসব কেমিক্যাল প্রয়োগ করছে।
×