ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফারহানা তাসনিম

আসছে বর্ষা-প্রস্তুতি এখনই

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ৬ জুন ২০১৬

আসছে বর্ষা-প্রস্তুতি এখনই

ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ সবাই। তবে হঠাৎ হঠাৎ কয়েক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে স্বস্তির শীতল হাওয়া। জুড়িয়ে যাচ্ছে দেহমন। তবে খুব শীঘ্রই পুরোদমে বর্ষা শুরু হবে। আষাঢ় মাস মানেই মেঘলা আকাশ। আকাশের মর্জির কোন বালাই নেই। এই হয়ত মেঘের আড়ালে সূর্য উঁকি দিল, আবার পরক্ষণেই কালো মেঘের দাপটে সূর্যের হাসি হারিয়ে গেল। মেঘের কালো চাদরে আকাশ ছেয়ে যায়। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, ক্লান্তিহীন বৃষ্টি। এ না হলে বর্ষকাল! ঘরের জানালা খুলে বাইরে বৃষ্টি পড়া দেখবেন, বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ শুনবেন আপনি। বৃষ্টির হালকা ছটা এসে পড়বে আপনার গায়ে। বৃষ্টি নিয়ে এ ধরনের রোমান্টিক চিন্তা আপনি করতেই পারবেন। তবে ঘরের চার দেয়ালের মাঝে বৃষ্টিকে ঘিরে যতই কল্পনার ফানুস ওড়ান না কেন ঘরের বাইরের বাস্তবতার কিন্তু ভিন্ন। বর্ষার দিনগুলোতে ঘর থেকে বাইরে পা রাখলেই এ বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় ঘটবে আপনার। বৃষ্টি মানেই রাস্তাঘাট কাদায় সয়লাব, যানবাহনের আকাল, তাছাড়া বৃষ্টিতে ভিজে সিজনাল রোগ বালাই সদি-জ্বর-কাশি বাঁধানোর সম্ভাবনা তো রয়েছেই। তবে এসব সমস্যা কোন সমস্যা নয়, যদি বর্ষার জন্য আপনার সঠিক প্রস্তুতি থাকে। বর্ষার দিনে বাইরে যেতে কোন পোশাক পারবেন? হয়ত ভাবছেন, কোন পোশাকটি পরলে আপনার সমস্যা হবে না। দুর্যোগের এ দিনগুলোতে জর্জেট সিল্ক অর্থাৎ সিনথেটিক কাপড়ই হলো আদর্শ পোশাক। সিনথেটিকে বড় সুবিধা হলো কোন কারণে ভিজে গেলে চট করে সেটা শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া এ ধরনের কাপড়ে কাদা বেশিক্ষণ আটকে থাকতে পারে না। ফলে তিলা পড়া, কাপড়ে ভাঁজ পড়া বা দুর্গন্ধ হওয়া ইত্যাদি কাপড় সংক্রান্ত জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় না। বর্ষা হলেই সিনথেটিক কাপড়ই কেবল পরতে হবে এমন কোন কথা নেই। সুতি কাপড়ে আরাম বোধ করলে সেটা বেছে নিতে পারেন। বর্ষার দিনে হাতঘড়ির দিকে একটু বেশি নজর দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন, আপনার ঘড়িটি যেন ওয়াটারপ্রুফ হয়। বৃষ্টির দিন শুরু হওয়া মানেই আপনার নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকায় ছাতার গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া। ঝমঝমিয়ে যতই বৃষ্টি নামুক না কেন, বৃষ্টির অজুহাতে অফিসে যাওয়া, বাজার করা যেমন বন্ধ করা যায় না তেমনি ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে যাওয়া থেকে বিরত রাখা যাবে না। বৃষ্টির দিনগুলোতে প্রতিদিনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিন ছাতাকে। বাজারে এক রঙা ছাতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রিন্টের ছাতা পাওয়া যায়। আপনি আপনার রুচি আর বাজেটের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পছন্দের ছাতা বেছে নিতে পারেন। মহিলারা হালকা গোলাপি, অফ হোয়াইট, বেগুনি, লাল, বাদামি প্রভৃতি রঙের ছাতা কিনতে পারেন। এক রঙা আর প্রিন্টের ফিউশন ছাড়াও এখন বাজারে পাওয়া যায়। তবে প্রিন্ট বা এক রঙা যে ধরনের ছাতা কিনুন না কেন, এখন কিন্তু ফোল্ডিং ছাড়ার কদরই বেশি। ফোল্ডিং ছাতার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি খুব সহজেই ছোট করে ব্যাগের এক কোনায় রেখে দেয়া সম্ভব। ফলে আলাদা করে হাতে ছাতার বোঝা বইতে হয় না। এ ছাড়াও ছাতা যাদের একদমই অপছন্দ তারা রেইন কোট বেছে নিতে পারেন। বর্ষার দিনগুলোতে শখের জুতোর বেহাল অবস্থা কারও সহ্য হয় না। বর্ষাকাল এলেই আপনার সুন্দর জুতোগুলো বাক্সবন্দী করে ফেলুন। চামড়ার সুন্দর জুতোকে আপাতত বিদায় জানিয়ে র‌্যাকসিন, রবার তার প্লাস্টিকের জুতোর আপন করে নিন। বর্ষাবান্ধব এসব জুতো চলার পথে আপনাকে দেবে যেমন স্বচ্ছন্দ তেমন স্থায়িত্ব। এসব জুতোর দামও আপনার আয়ত্বের মধ্যে থাকে। বৃষ্টির দিনগুলোতে মেকআপ সামগ্রীগুলো যাতে ওয়াটারপ্রুফ হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন তা না হলে বৃষ্টিতে ভিজে আপনার মেকআপের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই মেকআপ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। বৃষ্টির দিনে হালকা মেকআপ নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বর্ষা মানেই তো শুধু বৃষ্টি দিনে হালকা মেকআপ নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বর্ষা মানেই তো শুধু বৃষ্টি নয়। বৃষ্টির পরপরই অনেক সময় ভ্যাপসা গরম স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। মেকআপ নেয়ার সময় আবহাওয়ার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্ষার সময় মেকআপ নেয়ার সময় প্রথমে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার পর সারা মুখ বরফ দিয়ে ঘষে নিন। এতে মেকআপ নেয়ার পর ঘেমে যাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে। বর্ষাকালে আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে অনেকেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন না। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। বর্ষার মৌসুমে রুজ বা পাউডার ব্যবহার না করাই ভাল। চোখ সাজানোর জন্য যে আইলাইনার ও মাশকারাটি ব্যবহার করবেন তা ওয়াটারপ্রুফ কিনা দেখে নিন। বৃষ্টির পানিতে আপনার ঘরের ফ্লোর ডুবে যাবে না-এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না। বৃষ্টির পানিতে ঘরের ফ্লোর ডুবে যাওয়ার আগে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। প্রস্তুতি বা সতর্কতা যাই বলুন, প্রথমেই নজর দিতে হবে ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্রের দিকে। কারণ ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে পানি। বৃষ্টির দিনে বাড়িতে পানি ঢোকার সম্ভাবনা দেখা দিলেই ঘরের কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক সামগ্রীগুলো সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করুন। এ ছাড়া কাঠের কিংবা মেলামাইন বোর্ডের তৈরি ঘরের আসবাবপত্রগুলোর নিচে ইট দিয়ে উঁচু করে নিন। এ জন্য বাড়ি তৈরি করার সময় কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখুন। যেমন রাস্তা এবং আপনার বাড়িটির লেভেল যেমন সমান হয়। রাস্তার লেভেলের চেয়ে আপনার বাড়ি নিচু হলে খুব সহজেই ঘরে পানি ঢোকার সম্ভাবনা থাকে। বাড়ির ইলেকট্রিক সুইচ বোর্ডটি একটু উপরে লাগিয়ে নিন। এমনকি পানি তোলার পাম্প মেশিনটির পানি থেকে নিরাপদ দূরত্বে যাতে অবস্থান হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। বৃষ্টির দিনগুলোতে রাস্তায় মৃত্যুকূপ হিসেবে আবির্ভূত হয় খোলা ম্যানহোল। খোলা ম্যানহোলে লম্বা কোন গাছের ডাল কিংবা বাঁশ দাঁড়িয়ে নিশ্চিত করুন-এটা ম্যানহোল, ঢাকনাবিহীন সামনে পা রাখলেই মহাবিপদ, অতএব সাবধান। বর্ষার দিনে রাস্তাঘাটে চলাচলে যানবাহন পেতে বেশি সমস্যা হয়। প্রয়োজনমতো কোন গাড়ি, রিকশা, সিএনজি, ট্যাক্সিক্যাব কিছুই পাওয়া যায় না। এ কারণে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ কারণে একটু বেশি সময় নিয়ে আগেভাগে ঘর থেকে বর্ষার দিনে বেরোতে চেষ্টা করুন। বৃষ্টির দিনে অনেকের ইচ্ছে করেই ভিজতে পছন্দ করেন। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি ইত্যাদি হতে পারে তেমন কিছু হলো তো সব মজাই মাটি। বৃষ্টির দিনে বৃষ্টিজনিত নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে বাঁচতে বৃষ্টিতে ভেজার পর প্রথমে তোয়ালে দিয়ে পুরো শরীরটা ভাল করে মুছে নিন। তারপর শাওয়ার ছেড়ে একটু গোসল করে নিন। বর্ষার দিনে ডেঙ্গুজ্বর আর টাইফয়েডের আশঙ্কা থাকে। এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন। ছবি : মানষ সেন মডেল : সেলিম ও প্রাচী পোশাক : মেনস ক্লাব
×