ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শুক্রবার উন্মুক্ত শেষকৃত্য, আমেরিকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম, প্রিয় মানুষকে হারিয়ে স্তব্ধ স্বজনরা

আলীকে খুঁজে ফিরছে লুইসভিল

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৬ জুন ২০১৬

আলীকে খুঁজে ফিরছে লুইসভিল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দ্য গ্রেটেস্ট- মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুতে আমেরিকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। কিংবদন্তি বক্সারের জন্মশহর কেন্টাকির লুইসভিলে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন ভক্ত-অনুরাগী। এখানেই শুক্রবার তার ‘উন্মুক্ত শেষকৃত্য’ অনুষ্ঠিত হবে। আলীর পরিবারের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এ খবর জানানো হয়েছে। শেষকৃত্য ছোট-বড় সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে যে বা যারা চান আলীকে শেষ বিদায় জানানোর সুযোগ পাবেন। আলীর পরিবার মনে করে, তিনি ছিলেন গোটা বিশ্বের নাগরিক, তার চলে যাওয়ায় সবাই কাতর। সবাইকেই তাই বিদায় জানানোর সুযোগটা দিতে চান তারা। তার আগে বৃহস্পতিবার হবে পারিবারিক অনুষ্ঠান। পরদিন শেষকৃত্য, চূড়ান্ত স্মরণসভা। মুসলিম রীতিতে শেষশয্যায় আলীকে মাটির কবরে শুইয়ে দেয়া হবে। ইমাম জানাজা পড়ানোর পরই সকল বর্ণ-ধর্মের মানুষ শ্রদ্ধা জানাবেন। উল্লেখ্য, খ্রীস্টান পরিবারে জন্ম হলেও আলী পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। শেষকৃত্যে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। আলীর পারিবারিক মুখপাত্র বব গানেল বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী গণমানুষের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। শেষ বিদায়ে তাই সব গ্রোত্র-বর্ণ-ধর্ম-শ্রেণীর মানুষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাবেন।’ দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পারকিনসন রোগে ভোগার পর শনিবার আমেকিরার এক হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বক্সিংয়ের এই মহানায়ক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনিই ইতিহাসের প্রথম বক্সার, যিনি তিন-তিনটি বিশ্বসেরার খেতাব জয় করেন। ১৯৪২ সালের ১৭ জুন কেন্টাকির ছিমছাম লুইসভিলে জন্ম মোহাম্মদ আলীর। জন্ম, বেড়ে ওঠা, বিশ্ব কাঁপানো প্রস্তুতি, ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে বক্সার, দ্য গ্রেটেস্ট হয়ে ওঠা- জীবনের বড় একটা সময় কেটেছে যেখানে, সেই লুইসভিলে চলছে শোকের মাতম। যে শোকের আবহ আমেরিকা হয়ে ছড়িয় পড়েছে গোটা বিশ্বে। কেন্টাকির সিটি হলে ইতোমধ্যে পতাকা অর্ধনমিত করা হয়েছে। শুক্রবার মহানায়কের চিরবিদায়ের প্যারেডের জন্য শহরটা তৈরি হচ্ছে। এ্যারিজোনা রাজ্যের ফিনিক্স হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আলী সেপটিক শকে মারা গেছেন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে শরীরের রক্তের চাপ বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে আসে। ব্যতিক্রম তথ্য দিয়েছেন তার মেয়ে বিখ্যাত লেখক হানা আলী, চিকিৎসা বিজ্ঞানে শরীরের সব অঙ্গ বিকল হয়ে গেলে মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু সকল অঙ্গ বিকল হওয়ার পরও ৩০ মিনিট পর্যন্ত তার বাবার হৃদকম্পন ছিল! কেমন ছিল ইতিহাসের সর্বকালে সেরা বক্সারের চলে যাওয়ার সময়টা? সেদিন প্রিয়জনের সঙ্গে ছিলেন হানাও। ‘আমাদের হৃদয় আক্ষরিক অর্থেই ক্ষতবিক্ষত। তবে বাবা এখন মুক্ত। সবাই শক্ত থাকতে চেষ্টা করছি। আমি তাকে কানে কানে বলেছি, বাবা এবার তুমি যেতে পার’- বলেন তিনি। হানা আরও যোগ করেন, ‘আমরা তাকে জড়িয়ে ধরলাম, চুমু খেলাম, হাত ধরে থাকলাম, ইসলামী দোয়া-দরুদ পড়তে থাকলাম। সব অঙ্গ বিকল হয়ে গেল, কিন্তু হৃদস্পন্দন চলল ৩০ মিনিট পর্যন্ত! এটা তার স্পিরিট ও ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ।’ চারবার বিয়ে করেছেন, রেখে গেছেন নয় সন্তান। তার মধ্যে সাত মেয়ে ও দুই ছেলে। হানা শেষ স্ত্রীর সন্তান। আলীর আত্মজীবনী ‘দ্য সোল অব এ বাটারফ্লাই ও মোর দ্যান এ হিরো লাইফ লেসন্স ফ্রম আলী’ বইয়ের লেখকও তিনি। একবাক্যে হানার মূল্যায়ন, ‘বাবা ছিলেন নম্র একটি পাহাড়!’ লুইসভিলে আলীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে তৈরি জাদুঘর ‘মোহাম্মদ আলী সেন্টারে’ অনেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। সেখানে আর্নল্ড মাথিস নামের ৩৯ বছর বয়সী একজন বলেন, ‘আমি কাঁদলাম। খবরটি শোনার পর বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কাঁদলাম। এটা খুবই পরাবাস্তব অনুভূতি। জানি তিনি নেই। কিন্তু মন থেকে মেনে নিতে পারছি না।’ স্থানীয় টেলিভিশন, রেডিও, পত্র-পত্রিকায় একটাই খবর, যার পুরোটা জুড়ে ‘আলী দ্য গ্রেটেস্ট।’ লুইসভিলের মানুষ আলীকে নিয়ে কতটা গর্বিত ছিলেন শহরটির মেয়র গ্রেগ ফিচসারের বক্তব্যে সেটিই ফুটে ওঠে, ‘মোহাম্মদ আলী গোটা বিশ্বের, কিন্তু তার জন্মশহর একটাই। সেই শহরের বাসিন্দা হিসেবে আমরা অনেক বেশি গর্বিত।’ লুইসভিলের প্রায় সব বাসিন্দারই আলীকে নিয়ে নিজের একটা গল্প আছে, আছে অভিজ্ঞতা। আলীর শৈশবের বাড়িটিকেই জাদুঘর বানানো হয়েছে, যেটি এখন উন্মুক্ত। ইন্টেরিওর সেটিকে এমনভাবে সজ্জিত করেছেন, দেখে মনে হবে ৫০-এর দশকের ছোট্ট আলীও বুঝি সেখানে আছেন।
×