ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থবছরে সব ধরনের বিনিয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে সকল বাধা দূর করা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৬ জুন ২০১৬

বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে সকল বাধা দূর করা হবে

এম শাহজাহান ॥ উচ্চতর প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাবিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে সরকারী-বেসরকারী খাতে। বিশেষ করে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। এলএনজি আমদানির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রদান করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়াতে ২০১৯ সালের মধ্যে পদ্মাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সেতু এবং ওই সময়ের মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। এছাড়া প্রবৃদ্ধি সঞ্চারী আটটি বৃহৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত এগিয়ে নিতে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে বিনিয়োগে গতিশীলতা ফিরে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এদিকে, মূলধন মজুদ বাড়াতেও এবার বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ ও মজুদ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বর্তমান জিডিপির অনুপাতে মোট বিনিয়োগ ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু মধ্যমেয়াদে কাক্সিক্ষত ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য এ পরিমাণ বিনিয়োগ যথেষ্ট নয়। এছাড়া মূলধন মজুদ তৈরিতে বাজার ব্যবস্থায় ব্যক্তি খাতের ভূমিকা প্রধান হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ খাতে গত কয়েক বছর ধরে জিডিপির ২১-২২ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, মধ্যমেয়াদে কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য এ হার জিডিপির ২৭ শতাংশে উন্নীত হওয়া প্রয়োজন। তবে আশার কথা হলো, সরকারের বেশকিছু উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশকিছু সূচকের ইতিবাচক অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতা কেটে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। জানা গেছে, বিনিয়োগ বাড়াতে ৪৬টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম সাব-জোন এবং মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ চলতি অর্থবছরের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে সম্প্রতি সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছে। এ হারে প্রবৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত ৮০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ দরকার। কিন্তু এ পরিমাণ অর্থ কোথা থেকে আসবে, বাজেটে তা স্পষ্ট করা হয়নি। এটি এবারের বাজেটের বড় দুর্বলতা। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে জিডিপির ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ২৩ দশমিক ৩ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাজেটে স্পষ্ট করে বলা হয়নি বিনিয়োগের টাকা কোথা থেকে আসবে। তার মতে, স্বাভাবিক নিয়মে বিনিয়োগের টাকা তিন খাত থেকে আসে। এর মধ্যে রয়েছেÑ ব্যক্তি নিজে টাকা দেয়, ব্যাংক থেকে ঋণ এবং পুঁজিবাজার থেকে মূলধন সংগ্রহ। কিন্তু বিভিন্ন কেলেঙ্কারির কারণে ব্যাংকিং খাত বিপর্যস্ত। ঋণের সুদের হার কমলেও মানুষ বিনিয়োগ করতে চায় না। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে আস্থার সঙ্কট রয়েছে। তারল্য প্রবাহ একেবারে কম, যে কারণে এ বছরও বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ। এদিকে, বিনিয়োগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ইতোমধ্যে ৩০ দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাইটেক পার্কে বিনিয়োগকারীদের কর অব্যাহতি, হ্রাসকৃত মূল্যে গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য ভ্যাটমুক্ত সুবিধায় দেশের বাজারে বিক্রি ও সরবরাহের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। একই সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশে-বিদেশে রোডশো, বড় আকারে আইটি পার্ক স্থাপন ও সেখানে নারী উদ্যোক্তাদের জমি বরাদ্দের কোটা সংরক্ষণ, জি-টু-জি ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং ১২টি জেলায় আইটি ভিলেজ স্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে। আর এসব নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ১২টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য পৃথকভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাকে জানানো হয়েছে। আগামী বাজেটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে তাগিদ দেয়া হবে। জানা গেছে, ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এ্যান্ড প্রটেকশন এ্যাক্ট-১৯৮০’র মাধ্যমে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীগণের বিনিয়োগের প্রতি সম-আচরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এলাকাভেদে কর অবকাশ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। অনিবাসী বাংলাদেশীদের (এনআরবি) বিনিয়োগকে বিদেশী বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতের অধীনে রফতানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ও ঝুঁকি তহবিল সহায়তা প্রদানের সুযোগ রয়েছে। দ্বৈত কর পরিহারের চুক্তি মতে কর অব্যাহতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেলের মাধ্যমে বিনিয়োগে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা গ্যাস, বিদ্যুত, পানি, টেলিফোন সংযোগের সুবিধা প্রদানের জন্য সুপারিশ সংশ্লিষ্ট দফতর-কর্তৃপক্ষের কাছে উদ্যোক্তাদের চাহিদামতো প্রেরণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
×