ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুয়াকাটার কথা বলে নামিয়ে দেয়া হয় মাঝপথে

বাস শ্রমিকদের কাছে ॥ জিম্মি পর্যটক

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৬ জুন ২০১৬

বাস শ্রমিকদের কাছে ॥ জিম্মি পর্যটক

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৪ জুন ॥ কুয়াকাটা-কলাপাড়া-পটুয়াখালী-বরিশাল রুটের মিনিবাস মালিক-শ্রমিকদের কাছে কুয়াকাটাগামী পর্যটক-দর্শনার্থীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। যুগ ধরে এ জিম্মিদশা চলে আসছে। বরিশাল থেকে ছেড়ে যাওয়া যে কোন রুটের বাসে কুয়াকাটাগামী যাত্রীদের তোলা হয়। নামিয়ে দেয়া হয় মাঝপথে। কুয়াকাটায় বাসে যাওয়া-আসায় এখন চরম ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন কিংবা মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ পর্যটক-দর্শনার্থীকে এমন জিম্মিদশা থেকে উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে কুয়াকাটায় বেড়াতে আসা পর্যটক-দর্শনার্থী চরম নেতিবাচক ধারণা নিয়ে ফিরছে। তারা হারিয়ে ফেলছে কুয়াকাটায় যাওয়ার আগ্রহ। সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল-পটুয়াখালী-ঝালকাঠী-কলাপাড়া-বরগুনার সকল বাসের সামনে স্থায়ীভাবে লেখা রয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা। প্রতিঘণ্টায় বরিশাল-রূপাতলী বাসটার্মিনাল থেকে কুয়াকাটা, কলাপাড়া,পটুয়াখালীর বাস ছেড়ে যাচ্ছে। একইভাবে বরগুনা, আমতলী, তালতলী, পটুয়াখালী, বাকেরগঞ্জ, বাউফল, দুমকি, গলাচিপাসহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করছে। কুয়াকাটাগামী যাত্রীদের অন্যরুটে চলাচলকারী শ্রমিকরা প্রতারণা করে কুয়াকাটার কথা বলে তাদের বাসে তোলে। পরবর্তীতে বাউফলগামী বাসের শ্রমিকরা লেবুখালী ফেরিঘাটে নামিয়ে দেয়। একইভাবে পটুয়াখালীর বাসশ্রমিকরা কুয়াকাটার যাত্রীদের পটুয়াখালী বাসস্ট্যান্ডে, বরগুনাগামী বাসশ্রমিকরা আমতলী শহরে নামিয়ে দেয়। ফলে এসব যাত্রীকে ফের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে কুয়াকাটাগামী সঠিক বাসটি পেলেও দ্বিতীয় দফায় টিকেট কেটে সিট পায় না। দাঁড়িয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ সহ্য করে কলাপাড়া কিংবা কুয়াকাটায় পৌঁছতে হয়। বহু নারী পর্যটক এমন প্রতারণার শিকার হয়ে ফেরত যেতে বাধ্য হয়েছে। নিয়ম রয়েছে যখন যে রুটে বাস চলাচল করবে তখন ঠিক ওই বাসের সামনে ওই রুটের নাম লেখা স্টিকার থাকবে। যেমন বরিশাল-কুয়াকাটা, বরিশাল-পটুয়াখালী, বরিশাল-বরগুনা, বরিশাল-বাউফল, বরিশাল-গলাচিপা, বরিশাল-মির্জাগঞ্জ। কিন্তু সব রুটের বাসের সামনে স্থায়ীভাবে লেখা রয়েছে বরিশাল-কুয়াকাটা। ফলে যাত্রীরা প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে। যাত্রী আলিমুজ্জামান জানান, তিনি বরিশাল থেকে কুয়াকাটায় যাচ্ছিলেন। কলাপাড়া পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ১৯০ টাকায় টিকেট করে বাসে ওঠেন। আমতলী যাওয়ার পরে তিনি বুঝতে পারলেন ওই বাসটি বরগুনায় যাবে। দশটি টাকা ধরিয়ে দিয়ে নামিয়ে দেয়া হয়। চরম দুর্ব্যবহারের শিকার হন তিনি। একইভাবে এক মহিলা যাত্রীকে শিশুসন্তানসহ কুয়াকাটার কথা বলে পটুয়াখালী নিয়ে অন্য বাসে তুলে দেয়া হয়। তাকে দাঁড়িয়ে কুয়াকাটায় যেতে হয়েছে। একইভাবে কুয়াকাটা থেকে ফেরার পথেও। পটুয়াখালী কিংবা অন্য রুটের বাসে বরিশালের কথা বলে যাত্রী তোলার পরে মাঝপথে নামিয়ে দেয়া হয়। বছরের পর বছর ধরে ্এমন জিম্মিদশা চলছে। শ্রমিকদের এমন হয়রানির প্রতিবাদ করলে যাত্রীদের গালাগাল করা হয়। এমনকি মারধর পর্যন্ত করা হয়। এমনসব প্রতারণা-নৈরাজ্য বন্ধে সাধারণ যাত্রী বহু দেন-দরবার করেছে কিন্তু কোন প্রতিকার হয়নি। কুয়াকাটায় আসা পর্যটকের নিরাপদ এবং সাচ্ছন্দে বাস চলাচল নিশ্চিত করতে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে কুয়াকাটা ভ্রমণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে সবাই। নাগরিক উদ্যোগ কলাপাড়ার আহ্বায়ক নাসির তালুকদার জানান, কুয়াকাটার উন্নয়নে পর্যটকদের প্রথমে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বরিশাল-পটুয়াখালী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, বিষয়টি নিরসনে সমিতির সদস্যভুক্ত বাস মালিকদের নোটিসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পটুয়াখালী বাস মালিক সমতির নেতৃবৃন্দের বক্তব্য এটি থাকা উচিত নয়। যখন যে রুটে চলাচল করবে সেই রুটের স্টিকার লাগানো প্রয়োজন। পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক একেএম শামীমুল হক বলেন, শীঘ্রই পর্যটকসহ যাত্রীদের এ দুর্ভোগ লাঘবে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে এক শ্রমিক নেতা জানান, বরিশালের স্ট্যান্ডে কুয়াকাটাগামী নির্দিষ্ট বুকিং কাউন্টার থেকে টিকেট কাটলে আর এ সমস্যা হবে না।
×