ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

জয় বাংলা যেভাবে ছিনতাই হয়ে যায়

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ৬ জুন ২০১৬

জয় বাংলা যেভাবে ছিনতাই হয়ে যায়

(গতকালের পর) বাংলাদেশের মুসলমানরা সব সময় ইহুদী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। যারা এখন ইসলামের নামে ব্লগার হত্যা করছে, পাঠ্যবই থেকে হিন্দু লেখকদের লেখা প্রত্যাহারের দাবি করছে, মুক্তমনাদের হুমকি দিচ্ছে, শেখ হাসিনাকে উৎখাতের চেষ্টা করছে, শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করাচ্ছে তাদের একজনও এজন্য বিএনপির নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয়নি। মিছিল দূরের কথা। এমনকি তরিকত ফেডারেশন ছাড়া যারা জামায়াতে বিশ্বাস করে না তারাও নিশ্চুপ। যদি আওয়ামী লীগের কেউ এমন কাণ্ড করত তাহলে কল্পনা করুন কি অবস্থা হতো। এখন ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে এ রকম যে, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে না পারলে উৎখাত করতেই হবে এবং সে জন্য ইহুদীদের সঙ্গে নিলেও আপত্তি নেই। ধর্ম ব্যবসায়ীদের মনোভাব এখন এ রকম এবং এর কারণ আগের সেই দৃঢ় স্থান থেকে আওয়ামী লীগের সরে আসা। ইহুদী কানেকশন অস্বীকার করে বরং বিএনপি নেতা রিজভী বক্তব্য রাখছেন, ভারতের কাছে বাংলাদেশ বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। পাকিস্তানী রাজনীতির কারা ধারক তার বোধহয় প্রমাণের দরকার নেই। রিজভী বলেছেন, “আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত যে ল্যান্ড ট্রানজিট দেয়া হচ্ছে, এটা একেবারেই দুরভিসন্ধিমূলক এবং অল্পদামে দেশের স্বাধীনতা বিক্রি করে দেয়া। সরকার আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে পার্শ¦বর্তী দেশের কাছে।... একই দেশের মাল আবার একই দেশে যাবে আমার দেশের মধ্য দিয়ে। এটা ট্রানজিট না, এটা করিডর। করিডর মানেই হচ্ছে বিপর্যয়কর বিষয়। ভারতের সাতটি প্রদেশে কেউ স্বাধীনতা দাবি করছেন, কেউ স্বায়ত্তশাসন দাবি করছেন। এগুলো দমন করার জন্য নাকি অস্ত্র-শস্ত্র যাবে, তা’হলে দেশের নিরাপত্তা কোথায় থাকবে?” (প্রথম আলো, ২৮.৫.১৬)। এক সময় খালেদা জিয়াও এ ধরনের কথাবার্তা বলেছেন। ইঙ্গিতটা হলো- ভারত থেকে ইসরাইল ভাল এবং তারা ক্ষমতায় গেলে ভারতে যারা স্বায়ত্তশাসন দাবি করছে বা ‘য্দ্ধু’ করছে তাদের সাহায্য দেয়া হবে। হিন্দুদের থেকে ইহুদীরা ভালো। এখন যে ইউপি নির্বাচন চলছে তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে যেসব কথাবার্তা চলছে তাতে নেতারা কর্ণপাত করেন না। যোগাযোগ মাধ্যমে যা বলা হচ্ছে তাও তারা মানতে চান না। যদিও জনমত গঠনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বড় ভূমিকা রাখছে, বিশেষ করে তরুণদের মাধ্যমে। একটি বার্তা এ রকম যে- নৌকা অনেকটা মায়ের মতো। নৌকা বেয়েই স্বাধীনতা। এখনতো তা বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামে এক কর্মী জানালেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতা চাইছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীকে জেতাতে। ভোটের দিন দেখা গেলো আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রধান এজেন্টকে থানায় নিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর এজেন্টরা বেশ কয়েকটি কেন্দ্র দখল করেছে। আবার এও দেখা গেছে, স্থানীয় নেতা টাকা খেয়ে যাদের মনোনয়ন দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের আওয়ামী লীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন এবং জিতেছেন। এসব আওয়ামী লীগের সংহত অবস্থা তুলে ধরে না। এভাবে জয় বাংলা ছিনতাই হয়ে গেছে। জয় বাংলা বলে সব দুষ্কর্ম জায়েজ করা হচ্ছে। এভাবে জয় বাংলা বলে জিয়াউর রহমানের সমন্বয়ের রাজনীতিকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। আর এ সবই হচ্ছে টাকা খেয়ে। টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জয় বাংলা! ॥ পাঁচ ॥ আপাতদৃষ্টিতে সব শান্ত বা ঠিকঠাক মনে হলেও সব ঠিকঠাক নেই। জয় বাংলা যেভাবে ছিনতাই হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কমে আসছে। অপরীক্ষিত যারা আওয়ামী লীগে আসছেন তারা আওয়ামী লীগ করতে আসছেন না। বাজার অর্থনীতি রাজনীতিতেও মুক্তবাজার অর্থনীতি চলছে। টাকাই হচ্ছে সব যার কোন বর্ণ ধর্ম দল নেই। জিয়াউর রহমান তাহলে ঠিকই বলেছিলেন, কতো টাকা লাগে একজনকে কিনতে? তিনি কেনাবেচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন যেখানে আদর্শ নিজের উদ্দেশ্য লুকোবার একটি ঢাল মাত্র। আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য দলের একমাত্র পার্থক্য শেখ হাসিনা যাকে এখনও কেনা যাচ্ছে না। শেখ হাসিনাকে কেনা না যাক, কিন্তু তার দল বা সরকার তো নষ্ট করে দেয়া যেতে পারে। এবং তা না হলে তাকে কেনা না গেলেও তিনি আর থাকবেন না। এখন বোধ হয়, না, এখন সময় এসেছে এসব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার। আমরা মনে করি, হেজাবি ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সরকার যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন সে কঠোর অবস্থানে ফিরে যাওয়া। ধর্ম ব্যবহারে কেউ উদ্যত হলেই তাকে কঠোরভাবে দমন করা। তাদের যে কোন প্ররোচনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। মাদ্রাসার ব্যাপারে দ্রুত সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। দেশের অর্ধেক তরুণ মাদ্রাসায় শিক্ষিত হলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়া দূরে থাকুক নিম্নগামী হতে বাধ্য। নেতার ক্যারিশমা সেখানে কাজ দেবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ঠিক রাখার জন্য তখন আদম রফতানিরই চেষ্টা করতে হবে। এবং সিঙ্গাপুরের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পাবে যা আবার আদম রফতানিতে অভিঘাত হানবে। মাদ্রাসার পাঠ্যসূচী কেন সংস্কার হবে না? কেন তাদের দেশবিরোধী পাঠ্যসূচী অব্যাহত থাকবে? মসজিদ এবং ওয়াজে দেশ বা ধর্মবিরোধী প্রচার কেন অব্যাহত থাকবে? মিসরে এখন সমস্ত মসজিদের ইমামকে লাইসেন্স নিতে হয়। প্রতি সপ্তাহে ওয়েবসাইটে খুতবার বিষয় বেঁধে দেয়া হয়। তার বিচ্যুতি হলেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। ওয়াজ নসিহতের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এ কারণে মিসরে এখন ব্রাদার হুডের অবস্থা পড়তির দিকে। ধর্ম মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে যদি না আনে সে ধর্মে তখন মানবিকতা থাকে না। সব ধর্মেই মানবতার কথা গুরুত্ব পেয়েছে। আমাদের ঠিক করতে হবে আমরা জামায়াতী বা হেজাবি ইসলাম চাই না নবীজীর ইসলাম চাই। সরকারকেও তা ঠিক করতে হবে। ইসলাম মানলে সংবিধান মানলে যারা এর বিচ্যুতি ঘটাবে ভোটের নামে তাদের প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। দলে যদি সাংস্কৃতিক বিপ্লব না ঘটানো যায় তাহলে এ দলে আর বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রনীতির দর্শন থাকবে না। যদি দলের নেতারা চান যে জয় বঙ্গবন্ধু জয় বাংলা স্লোগানেই থাকুক, আমরা ধর্ম ও ত্রাসের উৎপাদনে মনোযোগী হব তাহলে সেটি তাদের ইচ্ছা এবং তাহলে যে বড় সংখ্যক মানুষের সমর্থন আওয়ামী লীগ হারাবে তা বলতে আর দ্বিধা নেই। দলের নেতার পদ যদি সব পর্যায়ে বিক্রি হয় তখন সেখানে আর জয় বাংলার আধিপত্য থাকে না, জিন্দাবাদই এক সময় স্লোগান হয়ে দাঁড়াবে। আদর্শে দৃঢ় না হলে এবং এক্ষেত্রে পিছু হটলে বা আদর্শহীনদের তোষামোদ করলে তাতে লাভ কিছুই হয় না, ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল। ইতিহাস তার সাক্ষ্য। এক সময় না এক সময় তোষামোদী চিন্তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হয়। চেম্বারলিন যদি হিটলারকে তোষামোদ না করতেন তাহলে সর্বগ্রাসী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতো না। সরকারে নেতাদের ধারণা, প্রশাসন বোধ হয় সম্পূর্ণ তাদের আদর্শে বিশ্বাসী। মোটেই না। আমরা এর ভূরি ভূরি উদাহরণ দিতে পারব যারা জয় বাংলা বলে পদ পাচ্ছে আসলে মনে-প্রাণে বিশ্বাসী তারা বাংলাদেশ জিন্দাবাদে। আসলে অন্তিমে সব যুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় সাংস্কৃতিক যুদ্ধ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের তিনি প্রশংসা পাচ্ছেন, যার জন্য আমরাও আনন্দিত। কিন্তু তা কতোটা টেকসই হবে? টেকসই হওয়াটা মূল বিষয়। যে বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিলাম সেগুলো বৃদ্ধি পেলে কি অর্থনীতি টেকসই হবে? মোটেও না। এক নারায়ণগঞ্জের ঘটনা সারা বিশ্বে বাংলাদেশের কী ইমেজ তুলে ধরে? মানসিক জগতে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারলে সেলিম ওসমানদের সংখ্যাও বাড়বে। যেখানে কেন্দ্রের মন্ত্রী/নেতারা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছেন সেখানে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সমস্ত সংগঠন, হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি পরিষদ সবাই সেলিমের পক্ষে। এটি কি কেন্দ্রের বা দলের সম্মান বৃদ্ধি করে না খাটো করে? এটিও বোধহয় বোঝার সময় এসেছে। সে কথাটাই বার বার বলছি, হেজাবি ধর্ম ব্যবসায়ীদের আইনগতভাবে দমন একটি পন্থা বটে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ সাফল্য আনবে না। সম্পূর্ণ সাফল্য আসবে মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করতে পারলে। সেনাবাহিনী থেকে সংস্কৃতিতে বিনিয়োগ অনেক লাভজনক। সেনাবাহিনীতে বিনিয়োগের মাত্রা কী পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তা নতুন ডিওএইচএসগুলো দেখলেই বোঝা যাবে। এই বিনিয়োগের রিটার্ন সামান্য, তাৎক্ষণিক, টেকসই কিছু না। এর সামান্য পরিমাণ বিনিয়োগ শিক্ষা সংস্কৃতিতে লাভের পরিমাণ বৃহৎ, তাৎক্ষণিক নয় এবং টেকসই অর্থনৈতিক বুনিয়াদ নির্মাণে সহায়তাকারী। যেভাবে হেজাবিপন্থী স্থানীয় আওয়ামী লীগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেলিম ওসমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মনে হয় কিছুদিনের মধ্যে জয় বাংলা ছিনতাই হয়ে যাবে। জয় বাংলা বলে নৌকায় হেজাবিরা চলে যাবে। জয় বাংলার সমর্থনকারী মানুষজন নদী পার হবে কিভাবে? নেতারাতো বিদেশ পাড়ি দেবেন। সমর্থনকারীদের কী হবে সেটা সমর্থনকারীদেরও ভেবে দেখা উচিত। প্রশ্নটা দাঁড়াচ্ছে জয় বাংলাকে ছিনতাই হতে দেয়া যাবে? এ প্রশ্ন শুধু আওয়ামী লীগারদের কাছেও নয়, অন্যদের কাছেও। কারণ, জয় বাংলা বলে শুধু আওয়ামী লীগের কর্মীরাই নয়, অন্যরাও ১৯৭১ সালে লড়েছে এবং তাদের সংখ্যাই বেশি। নারায়ণগঞ্জের কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, নারায়ণগঞ্জের কথাতেই ফিরে আসি। সেলিম ওসমান যেভাবে ধর্ম ব্যবসায়ী ও জয় বাংলার মানুষজনকে তার পক্ষে একত্রিত করেছেন সেখানে অনুমান করে নিতে পারি, সরকার এক্ষেত্রে পুরনো নীতি অনুযায়ী নীরবই থাকবে। সাইলেন্স ইন গোল্ডেন এবং এরশাদের ভাষ্য অনুযায়ী সেলিম ওসমান ওলিতে পরিণত হবেন। সংসদ সদস্য তার না থাকলেও চলবে। পীরদের অবস্থা রমরমা। তাদের করও দিতে হয় না। এক্ষেত্রে শ্যামল কান্তির পুরনো কর্মস্থলে ফেরত না যাওয়াই বেহতর হবে। আনন্দিত হবো যদি আমার অনুমান ভুল হয়। তাহলে বুঝতে হবে, দল ও সরকার জয় বাংলা যাতে ছিনতাই না হয় সেক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছেন। ॥ ছয় ॥ শিক্ষকদের কথাই বলি। গল্প উপন্যাসে দেখেছি দরিদ্র শিক্ষকও সমাজে মর্যাদার দাবিদার। কিন্তু বাজার অর্থনীতিতে প্রভাবিত হয়ে শিক্ষকদের একাংশ লোভী ও উচ্চাকাক্সক্ষী হয়ে উঠেছেন। বুদ্ধিজীবীরা (শিক্ষকরাও এর অংশ) যখন রাজদ্বারে মুখাপেক্ষী হন তখন তাদের আর সম্মান থাকে না। আগে শিক্ষকরা রাজদ্বারে যেতেন না। এখন উপাচার্য হওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ধরনা দিতে হয়। যিনি ধরনা দিয়ে পদ লাভ করেন প্রতিষ্ঠানে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাছাড়া বর্তমান যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে প্রায় সবাই সমাজের সবচেয়ে নিরীহ ও নিরস্ত্র প্রাণী শিক্ষকদের মাথায় একটি চাটি দিয়ে যেতে কার্পণ্য করেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন নিয়ে নীতিনির্ধারকদের অপমানসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি এর প্রমাণ। শিক্ষকদের সম্পর্কে তারা যা বলেছেন, তার এককণাও পুলিশ, সেনাবাহিনী বা আমলাতন্ত্র সম্পর্কে তারা বলতে পারতেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতো আর সে স্রোতে এখনও গা ভাসাননি। তাই রক্ষে। না হলে দরিদ্র সংখ্যালঘু এক শিক্ষকের মানহানিতে সারাদেশের মানুষ কান ধরে ‘সরি স্যার’ আন্দোলনে যোগ দিতেন না। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার আগে যারা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে অপকর্ম করেছে তাদের শাস্তি হয়নি কখনও। এ প্রশ্রয় তাদের শক্তিশালী করেছে। মসজিদের মাইকের অপব্যবহার হলে এখানে ব্রাদার হুড বা জামায়াত সমর্থকরা অবশ্যই নিজেদের শক্তিশালী করে তুলতে পারবে। সিভিল সমাজে এত আবেদন সত্ত্বেও জামায়াত যখন এখনও নিষিদ্ধ হয়নি তখন প্রকাশ্যে মাইকের অপব্যবহারে ক্ষতি কী? এত কথা সত্ত্বেও একটি কথা বলবো। উনিশ শতককে ওয়াহাবীরা পূর্ববঙ্গের মানসজগত নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে, পারেনি। কেননা, সমাজের অন্তর্নিহিত শক্তি এর বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জ মুক্ত এলাকা বটে, সেখানে ওসমান ট্রাইব শক্তিশালী বটে, কিন্তু সারাদেশে মানুষ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে শ্যামল কান্তির পক্ষে রাস্তায় নেমে এসেছেন, এমনকি নারায়ণগঞ্জেও, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন, হাইকোর্ট রুল জারি করেছে। সিভিল সমাজের এই অন্তর্নিহিত শক্তিকেই আমাদের দৃঢ় করতে হবে। আওয়ামী লীগ বা সরকার যখন নিজেদের বর্তমান ভুল বুঝবে তখন ভবিষ্যতে এই সিভিল সমাজের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া তাদের কোন উপায় থাকবে না। আমরাই আসলে জয় বাংলা রক্ষা করার শক্তি। এ প্রসঙ্গে কবি তারিক সুজাতের সাম্প্রতিক একটি কবিতার কয়েকটি পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করছি- “আমিতো ইতিহাসের গহিন অরণ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছি এক জীবনে দুইবার আমায় মরতে হবে এমনতো কথা ছিল না ... রায়ের বাজার কেন আবার ফিরে এল রাজশাহীতে কলাবাগান, কুমিল্লা আর শাহবাগে ফিরে আসে জগন্নাথ হল, চুকনগর আর মীরপুরের কসাইখানা... দেখতে দেখতে ছুটির ঘণ্টাও বেজে গেল খালি ক্লাস রুমে বেঞ্চের উপরে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি বাংলাদেশ ... এই ক্লান্ত পায়ে নিজের মাটিতে আরও একবার একসঙ্গে দাঁড়াই এক জীবনে দুইবার আমরা মরতে পারি না।” হ্যাঁ, এক জীবনে আমরা দুইবার মরতে পারি না একথা অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে। ২৮.৫.২০১৬
×