ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাকারিয়া স্বপন

ধন্যবাদ এলন মাস্ক!

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ৬ জুন ২০১৬

ধন্যবাদ এলন মাস্ক!

গত সপ্তাহে লিখেছিলাম, স্টিভ জবস এবং মার্ক জাকারবার্গের মতো মানুষ আমেরিকা থেকে ভারতের কাঞ্চি আশ্রমে গিয়েছিলেন কেন? মূল কথাটি ছিল, নিজেকে ফোকাস রাখার কোন উপায় হয়ত ওই আশ্রমগুলোতে পাওয়া যায়। মানুষের মন, বুদ্ধি এবং শরীরকে একটি বিন্দুতে ফোকাস করাটা খুব কঠিন একটি কাজ। অনেক যোগীরা এটা পারেন। এগুলো নিয়ে অনেক রকমের মতবাদ রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, সফল মানুষদের এক ধরনের ধ্যান করতে হয়। নিজেকে ফোকাস রাখতে জানতে হয়। অনেকে বলেছেন, ধ্যান তো অবশ্যই কাজ করে। নামাজ পড়লে কাজ হয়; কিংবা মেডিটেশন করলেও কাজ হয়। মূল কথা হলো, নিজেকে ফোকাস রাখা। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি ঘটনাবহুল দেশে আসলেই কি নিজেকে ফোকাস রাখা যায়? এই দেশের মানুষ কিংবা ছেলেমেয়েরা কি প্রকৃতপক্ষে নিজেকে ফোকাস রাখতে পারে? কিংবা পারা সম্ভব? এই এলাকার মানুষদের সবকিছুতেই একটা শর্টকাট পদ্ধতির কথা শোনা যায়। আমরা নাকি কোন কিছু দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি করতে পারি না। আমাদের সেই উদাহরণ নেই। যেমন ভারত বলতে পারে, ২১ বছর ধরে ২১ হাজার মানুষ মিলে তৈরি করা হয়েছে তাজমহল। আমাদের তেমন বড় নয়, ছোটখাটো উদাহরণও নেই। আমরা জাতি হিসেবে খুব শর্টকাট খুঁজি। লেখাপড়া, ক্যারিয়ার, জীবনযাপন- সর্বত্র কিভাবে দ্রুত পাওয়া যায়, তা আমাদের রক্তে ঢুকে গেছে। যে কারণে যে কোন উপায়েই হোক, আমরা খুব তাড়াতাড়ি কোন কিছু পেতে চাই। সেই কারণে আমাদের ফোকাস হওয়ার প্রয়োজন হয়ত পড়েও না। আপনি যদি এক শ’ মাইল বেগে গাড়ি চালান তাহলে কিন্তু ফোকাস না হয়ে উপায় নেই। ফোকাস হারিয়ে ফেললে একদম দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ওপারে যাত্রা। বাংলাদেশের মতো জায়গায় ফোকাস ঠিক রাখা আসলেই খুব কঠিন। অন্তত এই গেল সপ্তাহটার মতো যদি হয় পুরোটা বছর, তাহলে কিভাবে সম্ভব! কয়েকটি ঘটনা বলি, তাহলে হয়তো বোঝা যাবে। ॥ দুই ॥ সপ্তাহটা শুরু হয়েছিল কুফা দিয়ে। মাছরাঙা টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক জিপিএ ফাইভ পাওয়া কিছু ছাত্রছাত্রীর সাক্ষাতকার নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেন। সেখানে দেখা যায়, তারা বেসিক কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না। যেমন- বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কোনটি, শহীদ মিনার কোথায়, ‘আমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছি’- এটার ইংরেজী কী, এমনকি জিপিএ অর্থ কী- ইত্যাদি। পুরো সামাজিক মাধ্যমে এটা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায়। মূলধারার কিছু মিডিয়া এটা নিয়ে টক-শো পর্যন্ত করে ফেলে। জাতি দুইভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকের মানুষ মনে করে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অবস্থা খুব খারাপ এবং আরেকদিকের মানুষ মনে করে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বরাবরই এমন ছিল; বরং এমন একটা রিপোর্ট করে ওই সাংবাদিক উপরন্তু সাংবাদিকতার ইথিক্স ভঙ্গ করেছেন। একটা সময় ছিল যখন বোর্ডে স্ট্যান্ড করার নিয়ম ছিল। প্রতি বোর্ডে মাত্র ২০ জনকে এই সম্মান দেয়া হতো। তারপর স্টার মার্কসপ্রাপ্ত অনেক তারকা থাকত। তারপর প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী এবং পাস। অনেকেই হয়ত বিভিন্ন বিষয়ে লেটার মার্কও পেত। মানুষ মনে করত, যারা বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছে, তারা অন্তত একটি মান বজায় রাখে। যারা তৃতীয় শ্রেণীতে পাস করেছে, তাদের নিশ্চয়ই মানুষ বোর্ডে স্ট্যান্ড করাদের সঙ্গে তুলনা করত না। সেই বোর্ডে স্ট্যান্ড করা কোন ছাত্রছাত্রীকে যদি বলা হয়, ‘আমি বোর্ডে স্ট্যান্ড করেছি’ এটার ইংরেজী করো এবং সে যদি উত্তর দেয় ‘আই বোর্ড স্ট্যান্ড’- তাহলে তো কচুগাছে গলায় দড়ি দিয়ে মরলেও যথেষ্ট হবে না। বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখন মনে করে, জিপিএ ফাইভ পাওয়া একটি ছেলে ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে না পারাটা ঠিকই আছে। কারণ সবাইকে সব উত্তর পারতে হবে, এমন কোন কথা আছে নাকি? তার ওপর বাংলাদেশের সাংবাদিকতা এবং ইথিক্স নিয়ে যখন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লেন, তখন আরেকবার কচুগাছ খুঁজতে বের হওয়ার কথা ভাবছিলাম। ‘বাংলাদেশ’, ‘সাংবাদিকতা’ এবং ‘ইথিক্স’- এই তিনটা শব্দকে পাশাপাশি রেখে একটু তাকিয়ে থাকুন তো! উত্তরটা পেয়ে যাবেন আশা করি। এটা নিয়ে লিখে জায়গা নষ্ট করার কোন অর্থ হয় না। তবে বাস্তবতা তো এই যে, আমাদের শিক্ষার মান ভয়াবহ রকমের অধঃপতন হয়েছে। যারা এটা মানেন না, তাদের সঙ্গে তর্কে যাওয়াটা চরম বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। যারা এই পদ্ধতিটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তারা এখন ইনিয়ে-বিনিয়ে স্বীকার করতে শুরু করেছেন যে, এটা একটা মহাভুল কাজ ছিল। বিদেশে কোন একটি ব্যবস্থা দেখে তার আগে-পিছে বিবেচনা না করেই হুট করে বাংলাদেশে প্রচলন করে দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশাল প্রশ্নবোধক চিহ্নের মুখোমুখি করা হয়েছে। আমি জানি না, তাদের বিবেক এখন কতটা দংশিত হয়! কিন্তু এমন ঘটনায় আমরা হতাশ হয়ে পড়ি। সিঙ্গাপুরে গভীর রাতেও মেয়েরা কোন রকম ভয় ছাড়াই একা একা রাস্তায় যাতায়াত করতে পারে। এটা দেখে একজন মনে করলেন বাংলাদেশেও তো এটা করা যেতে পারে। যেই ভাবা, সেই কাজ। ফল হতে পারে গণহারে ধর্ষণ। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থারও একই অবস্থা। ॥ তিন ॥ ছোট বোনকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছি। ভোর বেলা। ভাবলাম মুহূর্তের মধ্যেই বের হয়ে আসবে। লাগেজ নিয়ে বের হতে লাগল পুরো আড়াই ঘণ্টা। এতটা সময় কাঁচের দেয়ালের বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। চারপাশে আমার মতো অসংখ্য মানুষ, তাদের প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা করছেন। বিমানবন্দর জায়গাটা এমনিতেও বেশ মজার- নানান কিসিমের মানুষজন দেখা যায়। ওত্তো ভোরে আর মানুষ দেখার মেজাজ ছিল না। কিন্তু হঠাৎ পাশের একজন টেলিফোনে চিৎকার করে কথা বলছেন। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায়। সেটায় কান না দিয়ে পারলাম না; কারণ পুরোটাই বিনোদন। আমি নোয়াখালীর ভাষা বলতে পারি না। তবে মোটামুটি বুঝতে পারি। যেটুকু মনে আছে, সেটা প্রচলিত ভাষায় লেখার চেষ্টা করি। এখানে বলে রাখি সব আঞ্চলিক ভাষাকে আমি সমানভাবে সম্মান করি। যেহেতু আরেক পাশের শব্দ শুনতে পাইনি, তাই এপাশের কথাগুলো লিখে দিচ্ছি। ভদ্রলোক চিৎকার করে বলছেন- - ভাইজান, আপনার নাতিরা নামছে। ওই দ্যাখা যায়। - না না, আমারে দ্যাখে নাই। আমি দেখছি। হাত নাড়লাম, তাও দ্যাখেনি। - ভাইজান, আপনি তোরণ বানাইছেন? নাতিরা ঢাকা থেকে যাবে, গ্রামে তোরণ বানাতে হবে তো। কোনদিন বাংলাদেশের গ্রাম দ্যাখেনি। - হুম, বড় করে বানাবেন। দু’দিন ঢাকায় রেখে, তারপর নিয়ে আসব আপনার ওখানে। - নির্বাচন তো ভাই ঠিকই আছে। আবুলরে বসায় দিছি। - জি, জি। ওরে বললাম, তোর সঙ্গে কেউ আছে? কাউকে তো দেখি না। দু’তিনজন তো খুঁজে পাই না। - জি। আবুল বলে, তাও নির্বাচন করবে। আমি বললাম, কালাম মেম্বার নির্বাচন করবে, নইলে তুই করবি। নির্বাচন একজন করবে। নিজেদের মধ্যে ভোট ভাগ হওয়া যাবে না। - দু’দিন লাফালাফি করল। তারপর বসিয়ে দিয়েছি। - নাহ, নির্বাচন আর কি হবে? বিনা ভোটেই তো জিতে গেছে। ভোট তো হতে দেইনি। আর হলেও তো সমস্যা ছিল না। বাক্স নিয়ে আসতাম। - হো, হো, হো... জি, জি। নির্বাচন মানে তো ওই। - কী যে নির্বাচন হচ্ছে, ওয়াজতাগফিরুল্লাহ, ওয়াজতাগফিরুল্লাহ। এ তো আল্লাহও মাফ করবেন না। - জি জি ভাইজান, সব কথা ফোনে বলা যাবে না। আমি বাড়ি এসে আপনাকে বলব। আমি থ হয়ে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কালাম মেম্বারকে জেতানোর জন্য তিনি ব্যালট বাক্স দখল করতে পারেন, আবার একই সঙ্গে ওয়াজতাগফিরুল্লাহ বলছেন! এটাই কি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের রূপ? গ্রাম থেকে শহরে কতটা পথ পেরুলে দেখা মিলবে গণতন্ত্রের? নির্বাচন নির্বাচন খেলায় প্রাণ যাবে আর কত মানুষের? ॥ চার ॥ বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার ঘণ্টাখানেকের ভেতরই সংবাদটি পেলাম। মাছরাঙা টেলিভিশনের সিইও ফাহিম মুনয়েম মারা গেছেন। রাতে ঘুমিয়েছিলেন। সকালে তার স্ত্রী খেয়াল করলেন ঘুমের ভেতর ম্যাসিভ হার্টএ্যাটাক। কেউ কিছু টের পাননি। ফাহিম মুনয়েমের ডাক নাম টিপু। আমরা সবাই তাকে টিপু ভাই নামেই ডাকি। যদি পাল্টা প্রশ্ন আসে, কোন্ টিপু, তাহলে উত্তর হলো ফুজির বাবা। তার ছোট ছেলের নাম ফুজি। টিপু ভাইকে চিনি সেই বুয়েট জীবনের পর পরই, যখন পাস করে কিছুদিন ডেইলি স্টারে কাজ করেছিলাম। তখন ধানম-িতে অফিস ছিল। এস. এম আলী সাহেব নেই। মাহফুজ আনাম দায়িত্ব পালন করছেন। সঙ্গে টিপু ভাই। আমার দায়িত্ব ছিল সেই ১৯৯৪ সালের দিকে ডেইলি স্টারের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ওপর পাতা করা। তখন মূল পত্রিকার সঙ্গে অর্ধেক পাতা বরাদ্দ ছিল। প্রতি সপ্তাহেই টিপু ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হতো। ওই অফিসে আর কারও সঙ্গে তার মিল ছিল না। খুব সহজেই আমাকে কাছে টেনে নিলেন। পরবর্তী সময়ে বৈবাহিক সূত্রে তিনি আমার আত্মীয় হয়ে যান। মিডিয়া জগতে আমি প্রচুর মানুষ দেখেছি। টিপু ভাইয়ের মতো স্মার্ট মানুষ আমি খুব একটা দেখিনি। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একধরনের টিপিক্যাল একটা ব্যাপার আছে, যার বাইরে তারা খুব একটা যেতে পারেন না। টিপু ভাইকে আমার কখনই সেই অর্থে সাংবাদিক মনে হতো না। তার লেখাপড়া এবং জ্ঞানের মাত্রা আমাকে এত বেশি মুগ্ধ করে রাখত যে, টিপু ভাইকে কখনই আমি মিডিয়া জগতের সঙ্গে মেলাতে পারতাম না। গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে চেনা সেই মানুষটার মৃত্যু সংবাদ আমাকে ভেতর থেকে ভেঙ্গে দিয়েছে। এর জন্য কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতে হবে, সেটা আমি বুঝে উঠতে পারছি না। মাত্র সপ্তাহখানেক আগে বাচ্চাদের স্কুলে লিমি আপার (টিপু ভাইয়ের স্ত্রী) সঙ্গে দেখা। কিছু মানুষ থাকে, যাদের একটা খুব সুন্দর মিষ্টি ব্যক্তিত্ব থাকে। লিমি আপা হলেন সেই রকম একজন শিক্ষক। এই মানুষটি কিভাবে কী করবে, সেটা মনে করে আমার সব এলোমেলো হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারছিলাম না, এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে কী করা উচিত? আমি এমনিতেই মৃত মানুষের বাড়ি যেতে পারি না। তাদের কষ্ট দেখে নিজেকে সামলানো খুব মুশকিল হয়ে ওঠে। টিপু ভাইয়ের মৃত্যুতে তাই চুপ করে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। ॥ পাঁচ ॥ এমন গোলমেলে অবস্থায় মাথা নষ্ট হওয়ার জোগাড়। কোথাও মন বসানো যাচ্ছিল না। ঠিক সপ্তাহের শেষ দিন এলন মাক্স আর শহিদুল আহসান সাহেব এসে আমাকে উদ্ধার করলেন। যারা এলন মাস্ককে চেনেন না, তারা অবশ্য বিষয়টি ধরতে পারবেন না। তবে গত বৃহস্পতিবার যে কথাগুলো বলেছেন, সেটা কেউ কেউ অনুধাবন করতে পারেন। বর্তমান সময়ে যারা কম্পিউটারে গেম খেলেন, তারা জানেন যে বিগত কয়েক বছরে কম্পিউটার গ্রাফিক্স কতটা উন্নত এবং জীবন্ত হয়ে উঠেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। আজ থেকে ১ হাজার বছর পর এই গেমগুলো আরও কতটা জীবন্ত হবে কেউ কি চিন্তা করেছেন? এই গ্রহেই হয়ত কয়েক বিলিয়ন মানুষ পর্দায় সেই গেম খেলবে। যারা গেমটি খেলবে তারা ওই ক্যারেক্টারগুলোকে নিজের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করবে। কিন্তু গেমের ক্যারেক্টারগুলো কি কখনই জানবে যে তারা কারও দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে? কেউ পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পাবে, কেউ ফেল করবে, একজন সাংবাদিক আবার সেটা নিয়ে রিপোর্ট করবে, তাতে তার পয়েন্ট যোগ হবে, তারপর সেই টিভির সিইও হঠাৎ করেই মারা যাবেন, সেই একই খেলায় নির্বাচন হবে, ব্যালট নিয়ে কেউ চলে যাবে, কিছু ক্যারেক্টার নির্বাচনী হানাহানিতে মারাও যাবে, মানুষের মতো দেখতে কিছু ক্যারেক্টার সবকিছুকেই জাস্টিফাই করার চেষ্টা করবে এবং সেটা নিয়ে মন খারাপ করে আমার মতো কেউ লিখতে বসবেন। সবকিছুই হবে সেই কম্পিউটার গেমে। এলন মাস্ক বলেছেন, যদি তাই হয়, তাহলে তো আমাদের গ্রহে আমরা যা করছি সেগুলো আবার অন্য কোন গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীর গেমের অংশ হওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ হলেও হতে পারে। কম্পিউটার বিজ্ঞানে এই ধরনের একটি তত্ত্ব অনেকদিন ধরেই আছে। সেখানে বলা হয়ে থাকে, আমাদের এই পুরো গ্রহটাই হয়ত অন্য কারও গেমের অংশ। তারা যেভাবে চালাচ্ছে, আমরা শুধু সেভাবেই পরিচালিত হচ্ছি। তবে এলন মাস্কের মতো একজন মানুষ যখন এটাকে আবার বলেন, তখন বিষয়টির নতুন মাত্রা পেয়েছে। এটা ভেবে যখন একটু শান্তি পাচ্ছিলাম যে, তাহলে তো সবকিছু অন্য কেউ ঘটাচ্ছে- তখন কথা হচ্ছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান শহিদুল আহসান সাহেবের সঙ্গে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এই জায়গায় আসতে আপনার নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট করতে হয়েছে? তিনি স্বভাবসুলভ হাসতে হাসতে যা বললেন, তা আমার জন্য ছিল একদম নতুন। তিনি বললেন, ‘আমার বাবা একটা কথা বলেছিলেন। এই পৃথিবীর ওপর অনেক কিছু আসে- ঝড়, বৃষ্টি, খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়। এতকিছুর পরেও এই পৃথিবী টিকে আছে। কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে। এই পৃথিবীর প্রাণী হিসেবে আমাদের ওপর দিয়েও একই রকম ঝড়, বৃষ্টি, খরা যাবে। পৃথিবী যেভাবে টিকে আছে, মানুষও তেমনি টিকে থাকবে। আমি আমার বাবার সেই কথাকে মনে রেখে চলি। জীবন এটাই।’ আসলেই তো, এটাই জীবন। চারপাশের হাজারো অঘটনের মধ্যে নিজেকে ফোকাস রাখার নামই হলো জীবন। ৩ জুন, ২০১৬ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ys@pri“o.com
×