ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উজান থেকে আসা বালি ও পলি জমে তলদেশ ভরাট

সিলেটে অর্ধশত নদী বিপন্ন হওয়ার পথে

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ৫ জুন ২০১৬

সিলেটে অর্ধশত নদী বিপন্ন হওয়ার পথে

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত নদী বিপন্ন হওয়ার পথে। নদীর স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের পরিবেশ। উজান থেকে পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে নেমে আসা পলিতে নদীর তলদেশ ভরাট ও বর্জ্য-আবর্জনার পাশাপাশি দখলের কারণে সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ায় নদীর প্রকৃত অবস্থান হারিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বিলীন হচ্ছে জলজ জীব-বৈচিত্র্য, ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে দেশীয় মাছের উৎপাদন, ব্যাহত হচ্ছে ফসলি জমিতে সেচকাজ। অকাল বন্যায় আক্রান্ত হচ্ছে তীরবর্তী অঞ্চল। নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি হাওড় অঞ্চলে প্রবেশ করার ফলে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিশাল হাওড় এলাকা দখলের কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পলিতে ভরাট হয়ে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক বিল-ফিশারিগুলো মাছ শূন্য হয়ে যাচ্ছে। সিলেট অঞ্চলের নদীগুলোর উৎসস্থল হচ্ছে ভারতের উজানে। সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারা, পিয়াইন, গোয়াইন, সারী, রাংপানি, চেঙ্গেরখাল, বাসিয়াসহ অনেক নদী এখন বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পিয়াইন নদীর প্রায় ৩০কিলোমিটার পথ সম্পূর্ণরূপে ভরাট হয়ে গেছে। পিয়াইনের বুকজুড়ে এখন বালুচর। এই নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকালের পাহাড়ী ঢলে ভেসে আসা পলিতে উপজেলার ছোট-বড় শতাধিক ফিশারি বিপন্ন হয়ে গেছে। সিলেটে প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারার বিভিন্ন স্থানে শুষ্ক মৌসুমে চর জেগে ওঠে। সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমা ছাড়াও কালনী, যাদুকাটা, পইন্দা, বৌলাই, কামারখালি, মহাসিংসহ অনেক শাখানদী ভরাট হয়ে গেছে। মৌলভীবাজার জেলার প্রধান নদী মনু, ধলাই এবং হবিগঞ্জের খোয়াই নদী বিভিন্ন এলাকায় ভরাট হয়ে গেছে। এসব নদীর বুকে জেগে উঠেছে বালুচর। এ তিনটি প্রধান নদীর নাব্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবার কারণে শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোতে পানি প্রবাহ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। মৌলভীবাজার জেলার বিপন্ন হয়ে পড়া নদীগুলো হলো মনু, গোপলা, বরাক, কচুয়াখাড়া, উদনা, লাগাটা, বিলাস, করাঙ্গী, ধলাই, কন্টিনালা, ফানাই, জুড়ি। ১৯৭৭ সালে মৌলভীবাজার জেলার ৫৬ হাজার একর কৃষিজমি ও জনবসতিকে বন্যার তা-ব থেকে রক্ষা এবং শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে মনু নদী প্রকল্প করা হয়। কিন্তু শতাধিক কাটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ প্রকল্প কোন কাজেই আসেনি। হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদী খোয়াই, কুশিয়ারা, বিজনা, সুতাং, রতœা, শুটকি, সোনাই, করাঙ্গী, ঝিংড়ি, ভেড়ামোহনা শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায়। নদীর এই রুগ্ন দশার ফলে নদী তীরবর্তী জনপদে তৈরি হচ্ছে মরুভূমির পরিবেশ। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, নদীগুলোর উৎস হচ্ছে ভারতের বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকা। উৎসমুখগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভারত বাঁধ নির্মাণের ফলে এসব নদ-নদীর পানি প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তাদের হাতে। ফলে শুকনো ও বর্ষা উভয় মৌসুমেই নদীর স্বাভাবিক স্রোত ব্যাহত হচ্ছে । বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে বন্যার পানির সঙ্গে লাখ লাখ টন পাহাড়ি বালি ও পলিমাটি ভেসে এসে নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়েছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
×