ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে বাড়ছে চিনির দাম

প্রকাশিত: ০৭:০৮, ৫ জুন ২০১৬

আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও দেশে বাড়ছে চিনির দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি, বন্দরে পণ্য খালাসে বিলম্ব হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি, রোয়ানুর প্রভাব, মিলে সরবরাহ কম, আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, সরকারী মিলে চিনির দাম বাড়ানোসহ নানা অজুহাত চিনির বাজারে। আর এতে দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বাড়াচ্ছে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের একাধিক আড়তে খবর নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে প্রস্তুত বিক্রয়যোগ্য চিনির দাম ছিল ১ হাজার ৯২০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এর মূল্য ১০০ টাকা করে বেড়ে এখন প্রতি মণ ২ হাজার ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পরিবহন, অন্যান্য খরচ যোগ করে খুচরা বাজারে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারিতে প্রতি কেজি চিনির দাম ৫০ টাকা ৫০ পয়সা হলেও ভোক্তা পর্যায়ে কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। মিল পর্যায়ে বাজার তদারকি জোরদার না হলে রমজানের সময় চিনির দাম আরও অনেক বাড়তে পারে বলে দাবি করছেন খুচরা ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা। চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের দেশে কেজিপ্রতি অপরিশোধিত চিনির দাম ছিল ৩০ টাকা (শুল্ক ছাড়া)। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে আমদানিকৃত ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৮ টন চিনির প্রতি কেজিতে ব্যয় হয়েছে ২৫ দশমিক ৯১ টাকা (শুল্ক ছাড়া)। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি কেজি চিনির আমদানি ব্যয় ৪ টাকা করে কমেছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমছে। তবে আমাদের দেশে কমার পরিবর্তে বাড়ছে এই পণ্যের দাম। আমদানি মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২০১৫ সালের আগস্টে অপরিশোধিত চিনি বুকিংয়ের জন্য প্রতি পাউন্ডে ব্যয় হতো ১০ দশমিক ৬৭ সেন্ট। এরপর থেকে পণ্যটির দাম বেড়ে চলতি বছরের মার্চে বুকিং দর পাউন্ড প্রতি ১৫ দশমিক ৪৩ সেন্টে পৌঁছায়। সম্প্রতি চিনির বুকিং দর কমতে শুরু করেছে। তবু বিশ্ববাজারের অজুহাতে প্রতিনিয়ত চিনির দাম বাড়াচ্ছে আমাদের দেশের পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। খাতুনগঞ্জের চিনি ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, কয়েক মাস আগে বিশ্ববাজারে চিনির বুকিং দর বাড়লেও বর্তমানে তা অনেক কমেছে। আমাদের দেশে প্রতি মাসে এই পণ্যের গড় চাহিদা ১ লাখ ২৫ হাজার টন। রোজায় বাড়তি চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি চিনি দেশের সরকারী ও বেসরকারী মিলগুলোতে মজুদ আছে। তবু মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে; এটি অযৌক্তিক। রিয়াজউদ্দীন বাজারের ব্যবসায়ী সৈয়দ মুহাম্মদ সালাউদ্দীন অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির জন্য চিনির দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। তারা বলছেন, বন্দরে পণ্য খালাসে ধীরগতির কারণে সরবরাহ অনেক কমেছে। এমন নানা অজুহাতে আমাদের কাছ থেকে বেশি দাম নেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসকের নির্ধারিত মূল্যে কী করে পণ্য বিক্রি করব? তিনি বলেন, দেশের বাজার স্থিতিশীল করতে চিনির মিল মালিক ও আমদানিকারকদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া উচিত জেলা প্রশাসকের। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, চট্টগ্রামের এস. আলম সুগার, সিটি সুগার, আবদুল মোনেম, দেশবন্ধু, মেঘনা, পারটেক্সসহ বেশ কয়েকটি শিল্প গ্রুপ বিশ্ববাজার থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধনের মাধ্যমে বাজারজাত করে। রমজানের আগে নানা অজুহাত দেখিয়ে এই পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে তারা। এ অবস্থায় আমাদের কিছুই করার থাকে না। চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানিকারক ও মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত সরকারের।
×