ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক দাস!

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৫ জুন ২০১৬

আধুনিক দাস!

ধারণা করা গিয়েছিল যে, মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশ ও উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মধ্যযুগীয় দাসপ্রথার অবলুপ্তি ঘটেছে। মঙ্গলবার লন্ডনে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল সেøভারি ইনডেক্স-২০১৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রমাণ করেছে সেই ধারণা ভুল। আধুনিক দাসত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ২০১২ সালে অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ও সমাজসেবক এ্যান্ডু ফরেস্ট প্রতিষ্ঠা করেন ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন। গবেষণায় ৫৩টি ভাষায় ৪২ হাজার সাক্ষাতকার এবং সরকারের প্রতিক্রিয়াসহ ১৬৭টি দেশের তথ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, বিশ্বের ৪ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি পুরুষ, নারী ও শিশু আধুনিক দাসত্বের শিকার। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৫৮ লাখ। তার মানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতি সত্ত্বেও গত দু’বছরে দাসের সংখ্যা বেড়েছে ২৮ শতাংশ। গ্লোবাল সেøভারি ইনডেক্সের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ আধুনিক দাসের জীবন কাটাচ্ছে, তাদের ৫৮ শতাংশের বসবাস ভারত, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানে। তালিকার শীর্ষে থাকা ভারতে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার লোক এই শ্ঙ্খৃলে আবদ্ধ। দশম স্থানে অবস্থানরত বাংলাদেশে এই সংখ্যা ১৫ লাখ ৩১ হাজার, যা জনসংখ্যার শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ। আধুনিক দাসত্ব বলতে শোষণের এমন পরিস্থিতি বোঝানো হয়েছে, যেখানে কোন ব্যক্তি হুমকি, সহিংসতা, নিগ্রহ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ছলচাতুরীর কারণে সেই কাজ অনিচ্ছাসত্ত্বেও করতে বাধ্য থাকে। যারা শিল্পকারখানা, খনি বা কৃষি খামারে নামমাত্র মজুরিতে দাসের মতো শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন, দালাল বা মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌনদাসীর জীবনযাপনে, এ যুগেও যারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয়ে কাটাচ্ছেন গোলামের জীবন, সর্বোপরি বাবা-মার ঋণের দায় মাথায় নিয়ে যাদের জন্ম হচ্ছে ক্রীতদাসের মতো, তাদের সংখ্যা ধরেই রচিত হয়েছে এই সূচক। সম্প্রতি মানুষের বাস্তুচ্যুতি, তা সে জলবায়ু পরিবর্তন অথবা যুদ্ধবিগ্রহের কারণেই হোক না কেন, বিশ্বজুড়ে দেশান্তরী হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর ফলেও মানুষ আগের তুলনায় বেশি করে বাধ্য হচ্ছে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে। প্রসঙ্গত বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের আইএস, নাইজিরিয়ার বোকো হারাম, সোমালিয়ায় আল শাবাব জঙ্গীগোষ্ঠী কর্তৃক মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ক্রীতদাসের জীবনযাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের এই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙ্গন এবং দুর্নীতি ভারতীয় উপমহাদেশ ও বাংলাদেশে আধুনিক দাস বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এর বাইরেও যুদ্ধবিগ্রহ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-সংঘাত এর জন্য দায়ী অনেকাংশে। নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও শিশুশ্রম এখন পর্যন্ত বন্ধ করা যায়নি। তবে আশার কথা এই যে বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যার সমাধানে সাড়া দিতে উদ্যোগী হয়েছে। ওয়াক ফ্রি’র প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে এর জন্য ‘বি’ রেটিং দেয়া হয়েছে। দারিদ্র্য নিরসনে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী সম্প্রসারণে আন্তরিক। ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচীও মানুষকে ক্রমশ স্বনির্ভর করে তুলছে। ইউএন ট্রাফিকিং প্রটোকল অনুযায়ী বাংলাদেশও মানবপাচারকে অপরাধ বলে গণ্য করে থাকে। আধুনিক দাসত্ব নিরসনে এসবই ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হতে পারে। সরকার এসব কর্মসূচী আরও বেগবান করবে বলেই প্রত্যাশা।
×