ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আইন বিচার ও নির্বাহী বিভাগ স্বাধীন হলেও পরস্পর পরিপূরক

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৫ জুন ২০১৬

আইন বিচার ও নির্বাহী বিভাগ স্বাধীন হলেও পরস্পর পরিপূরক

বিডিনিউজ ॥ রাষ্ট্রের স্তম্ভ আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগ নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে স্বাধীন হলেও একে অপরের পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আলোচনার মধ্যে রাষ্ট্রের এই তিন স্তম্ভের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ওপর জোর দিতে গিয়ে শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনসহ জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় এই তিনটি অঙ্গের ভূমিকা অনন্য। জনগণ ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করতে এদের মধ্যে ভারসাম্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। ‘নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে এ তিনটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীন হলেও একে অপরের পরিপূরক।’ বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে দিতে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে গত ৫ মে রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে ক্ষুব্ধ আইনপ্রণেতাদের চাপের মুখে ওই দিনই সংসদে ওই রায়কে ‘সংবিধান পরিপন্থী’ উল্লেখ করে সংসদে বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী। পরে রায় স্থগিত চেয়ে সুপ্রীমকোর্টের কাছে আবেদনও করেছে সরকার। এর আগে ২০১২ সালে স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আবদুল হামিদের দেয়া একটি রুলিং নিয়েও মুখোমুখি অবস্থানে চলে গিয়েছিল আইন ও বিচার বিভাগ। বিকেলে রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আইন কমিশনের ২০ বছর পূর্তির এই অনুষ্ঠানে বিচারকদের নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই বিচার বিভাগ সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এবং বিচারকগণ জনগণের সর্বোচ্চ সম্মানের পাত্র হিসেবে সমাদৃত হচ্ছেন। ‘তাই বিচারকগণ গণতন্ত্র, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন- জনগণ তা প্রত্যাশা করে।’ বিনা অপরাধে কারাভোগ নিয়ে গণমাধ্যমের খবরের কথা উল্লেখ করে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে বলেন আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, কোন নাগরিক যাতে আইনের আশ্রয় থেকে বঞ্চিত না হয় এবং বিচারপ্রার্থীরা যাতে দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার পায় তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ‘শুধু আইনের শাসন নয়, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সুশাসন প্রতিষ্ঠাও অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত।’ জনগণের সুবিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগ ও আইনজীবীদের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি। বিচার বিভাগ জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং ‘বিচারের বাণী বৃথা যাবে না’ এই সেøাগান সামনে রেখে সততা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধান সমুন্নত রাখবেন, এটাই জনগণের প্রত্যাশা। এজন্য বিচারকদের পাশাপাশি নির্বাহী বিভাগ ও আইনজীবীদের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণকে আইন সম্পর্কে সচেতন করার বিষয়ে উদ্যোগী হতে আইন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে আইন ও বিধি-বিধান সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতনতা যত বৃদ্ধি পাবে, সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথও তত সুগম হবে। বিচারক নিয়োগে যাতে যোগ্য ও মেধাবীরা নির্বাচিত হন তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নিয়োগপ্রাপ্ত নবীন বিচারকরাই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আদালতের গুরুত্বপূর্ণ বিচারিক পদে আসীন হবেন। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যাতে প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচিত হন কমিশনের সদস্যগণ তা নিশ্চিত করবেন বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। পেশাগত উৎকর্ষ সাধনে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। শিক্ষার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ মানুষকে দক্ষ ও বিকশিত করে। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ ও আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে রাষ্ট্রপতি বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন।
×