ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সোনিয়া গান্ধী, অমিত শাহ, মমতা ব্যানার্জী, প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরি বিমান বসুরা আসতে পারেন

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ৫০ বিদেশী নেতা আমন্ত্রিত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ জুন ২০১৬

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ৫০ বিদেশী নেতা আমন্ত্রিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের এবারের জাতীয় কাউন্সিলের সেøাগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার/এখন সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’। দেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন এই রাজনৈতিক দল তাদের ২০তম সম্মেলনকে স্মরণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ করতে শুরু করেছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেসসহ চৌদ্দটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রায় ৫০ শীর্ষ নেতাকে ইতোমধ্যে সম্মেলনে যোগদানের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, আমন্ত্রিত বিদেশী অতিথিদের ইতোমধ্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে। ওই পত্রে যোগদানের নিশ্চয়তা জানানোর জন্যও আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। দলীয় প্রধানদের উদ্দেশে লেখা আমন্ত্রণপত্রে নিজে উপস্থিত থাকতে না পারলে দলের পক্ষে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে বলা হয়েছে। সম্মেলনে আসা বিদেশী মেহমানদের বিমানের বিজনেস রিটার্ন টিকেট ও বাংলাদেশে থাকা-খাওয়ার সব বন্দোবস্ত আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে করা হবে। শুধু সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্যেই নয়, বিদেশী মেহমানদের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ, সম্মেলনের দিন দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সৌজন্য মধ্যাহ্নভোজ, বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, জাতীয় সংসদ ভবন পরিদর্শন, জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতেরও ব্যবস্থা থাকছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ শনিবার জানান, এবার আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাড়ে ৬ হাজার কাউন্সিলর ও ২০ হাজারের অধিক ডেলিগেট উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিদেশী মেহমানদের আমন্ত্রণ জানানো অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ৫০ রাজনৈতিক ব্যক্তিকে আমন্ত্রন জানিয়েছি। আরও জানানো হবে। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল আগামী ১০ ও ১১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে বিদেশী অতিথি ছাড়াও দেশের ৩০ হাজার ডেলিগেট ও কাউন্সিলর এবং দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অতিথিরা অংশ নেবেন। তবে জামায়াতসহ কোন সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানাবে না আওয়ামী লীগ। সম্মেলনে দলের সভাপতির উদ্বোধনী ভাষণ এবং সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করার পর বিদেশী অতিথিরা বক্তৃতা করতে পারেন। সে ধরনের প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে। এছাড়া দ্বিতীয় অধিবেশনে জেলা নেতাদের বক্তব্য শুনবেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির একাধিক সূত্র জানায়, বিদেশী আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় সর্বাধিক ভারতের রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা থাকছেন। এদের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হতে পারে। দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি, বিরোধী দল কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআইএমসহ বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এমন বেশ কয়েকটি রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। আভাস পাওয়া গেছে, আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী, সিপিএম নেতা প্রকাশ কারাত, সীতারাম ইয়েচুরি, পশ্চিমবঙ্গের বাম নেতা বিমান বসু, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়ারাম, দিল্লীর আদ আদমি পার্টির প্রধান ও সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিয়ালকে দাওয়াত পাঠানো হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি, বিরোধী দল লেবার পার্টি, চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি, অস্ট্রেলিয়ার লেবার পার্টি ও রিপাবলিক পার্টি, কানাডার কনজারভেটিভ পার্টি ও নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, রাশিয়ার ইউনাইটেড রাশিয়া ও রিপাবলিকান পার্টি অব রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস ও ডেমোক্র্যাটিক এ্যালায়েন্স, জাপানের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি ও নেপালি কংগ্রেস, শ্রীলঙ্কার ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি ও আইটিএকে এবং মালয়েশিয়ার ইউএমএনও, পিপলস জাস্টিস পার্টির প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। এদিকে, সম্মেলনকে সফল করতে গঠিত ১১ উপ-পরিষদের নেতারা প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করে প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার অর্থ উপ-পরিষদের বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনের সম্ভাব্য ব্যয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে ঠিক কী পরিমাণ ব্যয় হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরলেই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা করতে আগামী ১১ জুন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরী সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওইদিন সকাল এগারোটায় গণভবনে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সম্মেলনের সব পরিকল্পনা চূড়ান্ত হতে পারে বলে দলের একাধিক নেতা আভাস দিয়েছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনের এক সপ্তাহ আগে থেকেই রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশমুখে রঙ-বেরঙের তোরন, ব্যানার-ফেস্টুন, সরকারের নানা উন্নয়ন ও অর্জিত সাফল্যে নিয়ে বিশাল বিশাল ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে সাজানো হবে। আর সম্মেলনের ১৫ দিন আগে থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে দুই ধরনের পোস্টারসহ আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাফল্যগাঁথা নিয়ে তৈরি করা ডিজিটাল ব্যানারে সাজানো হবে। সম্মেলনের মঞ্চ সাজসজ্জাতেও আনা হবে নতুনত্ব। বরাবরের মতো এবারও মূল মঞ্চ হবে নৌকার আদলেই। এছাড়া সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলর, ডেলিগেটদের থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, নিরাপত্তার জন্য থাকছে সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা। সম্মেলনের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে দুই থেকে আড়াই হাজার দলীয় স্বেচ্ছাসেবক দু’দিন দায়িত্ব পালন করবে।
×