ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় পর্বের ইউপি নির্বাচন ॥ শেষ ধাপেও সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৫ জুন ২০১৬

ছয় পর্বের ইউপি নির্বাচন ॥ শেষ ধাপেও সহিংসতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সহিংসতার মধ্য দিয়েই শেষ হলো ৬ পর্বের ইউপি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা। শনিবার শেষ দফা নির্বাচনে সহিংসতায় ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগসহ তিনজনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ফেনী, ময়মনসিংহ ও নোয়াখালীতে একজন করে নিহত হন। এর বাইরে বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতায় অনেকে আহত হয়েছেন। প্রার্থীদের ভোট বর্জন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টেদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ও প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে কিছু কিছু জায়গায়। তবে এসব কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোট হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশে। শনিবার দেশের ৪৬ জেলায় ৯২ উপজেলায় ৬৯৮ ইউপিতে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বেলা চারটায় ভোট গ্রহণ শেষে গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এদিকে ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীব উদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন সব ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তিনি বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। নির্বাচনে সহিংসতা এবং অনিয়ম প্রতিরোধে সমাজে সংস্কার আনতে হবে। এজন্য সামাজিক দায়িত্বও আছে। আমরা সব ধাপেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। তাই ৬ষ্ঠ ধাপের আগের রাতে সিল মারার ঘটনা একদমই ঘটেনি বলে উল্লেখ করেন। নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী থেকে জানান, সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের চরভৈরব তোফায়েল আহম্মদ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নুর হোসেন শিপন নামের এক যুবক নিহত, পুলিশ সদস্যসহ ৭ জন আহত হয়েছে। সকাল সাড়ে দশটা দিকে কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোশারফ হোসেন মিলন ও বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সামছুদ্দিন খোকনের সমথকরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা চালায়। ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ককটেল বিস্ফোরণের এক পর্যায়ে পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের এক পর্যায়ে বহিরাগতরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে হামলা ভাংচুর চালিয়ে তিনটি ব্যালট বাক্স লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ঘটনা স্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সংঘর্ষে নুর হোসেন শিপন নামের এক যুবক নিহত হয়। নিহত নুর হোসেন চরচান্দিয়া গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। ঘটনার স্থল থেকে পুলিশ নুরুল আলম নামে এক যুবককে আটক করেছে। এদিকে নিজস্ব সংবাদদাতা নোয়াখালী থেকে জানান, সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে এক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। নেয়াজপুর ইউনিয়নের ভেলানগর এবতেদায়ী মাদ্রাসা কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইয়াসিন আরাফাত (২৩) ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ভেলানগর গ্রামের মোঃ সেলিমের ছেলে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, কেন্দ্রের বাইরে দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ইয়াসিন আরাফাতসহ চার জন আহত হন। ঢাকায় নেয়ার পথে ইয়াসিনের মৃত্যু হয় নিজস্ব সংবাদদাতা গফরগাঁও থেকে জানান, ইউনিয়ন পরিষদের শেষ ধাপের নির্বাচনে ১৫ ইউনিয়নে ব্যাপক সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, পুলিশ-বিজিবির গুলি ও এক আওয়ামী লীগ কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটনা ঘটেছে। সকাল সাড়ে দশটার দিকে সালটিয়া ইউনিয়নের পুখুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে দুইজন আহত হয়। দুপুরে এই ঘটনার জের ধরে মেম্বার প্রার্থী মোশারফ ও আব্দুল করিমের সমর্থকেরা পুনরায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ও কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে এসময় উপস্থিত পুলিশ-বিজিবি সদস্যরা গুলি ও লাঠিচার্জ করে। এতে ছাত্রলীগ নেতা নাজমুলসহ ৫জন গুলিবিদ্ধ হয়। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে এদের মধ্যে শাহজাহান (৪৫) নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মী মারা যায়। উপজেলার পাঁচবাগ ইউনিয়নে আ. লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের সংঘর্ষে ৩জন আহত হয়েছে। ষষ্ঠ ধাপের নির্বাচন নিয়েও ইসিতে বিএনপির অভিযোগ ॥ এদিকে ষষ্ঠ দফায় নির্বাচন কমিশনের গিয়ে ইউপি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযেগ দাখিল করেছে বিএনপি। শনিবার দুপুরে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকীব উদ্দীন আহমদের কাছে অভিযোগ করেন। সিইসির সঙ্গে আধা ঘণ্টার বৈঠক শেষে সেলিমা রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সিইসিকে বলেছি এ ইউপি ভোটে বিএনপির উপলব্ধি হয়েছে আপনাদের ও এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রমাণ হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এখন দরকার নির্দলীয় ব্যবস্থা। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয় উল্লেখ করে বলেন, এ সরকারের অধীনে কাজ করছে ইসি। কমিশন যদি স্বাধীনই হতো তাহলে এ সহিংসতা রোধ করা যেত। ভোটে সব অনিয়ম সহিংসতার দায় নির্বাচন কমিশনের ও সরকারের বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রথম থেকেই প্রতিবারই সিইসির কাছে অভিযোগ জানানো হলেও কোন সুরাহা হয়নি। সিইসি বরাবরের মতো বলতে থাকেন আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, আগামীতে উন্নতি হবে পরিস্থিতি। বাস্তবে সেই একই চিত্র। সহিংসতা, অনিয়ম, দখল অব্যাহত রয়েছে। এদিকে শেষ ধাপের নির্বাচনে সহিংসতায় ফেনীর সোনাগাজী, নোয়াখালী সদর ও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে একজন করে মৃত্যুর ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ভোট দিতে বাধা প্রদান, ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে। এসব অভিযোগে ঝিনাইদহের শৈলকুপা, ঢাকার সাভার, মাদারীপুরের শিবচর এবং নড়াইলের লোহাগড়ায়, পাবনা সদরে পতিপক্ষ বিদ্রোহী ও বিএনপি প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে হামলা ও গোলাগুলির ঘটনায় ৩০ জন আহত হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রামের উত্তর ও দক্ষিণের ৪১ ইউপি নির্বাচনে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ গোলাগুলি ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে দেশের বেশিরভাগ কেন্দে নির্বাচন ছিল উৎসব মুকুল পরিবেশে। নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ও ছিল লক্ষণীয়। তবে ষষ্ঠ দফায় নির্বাচন চলাকালে কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, পাঁচ ধাপের চেয়ে চলমান ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণকে তুলনামূলক ভাল বলে হয়েছে। আগের ধাপগুলোর চেয়ে ষষ্ঠ ধাপে সহিংসতা-অনিয়ম কম হচ্ছে। অন্য ধাপগুলোর চেয়ে তুলনামূলক পরিস্থিতি ভাল বলেও মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সাংবাদিকদের বলেন, পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভাল। চট্টগ্রাম ॥ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, গোলাগুলি, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, নির্বাচন বর্জন, কয়েকটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণার মাধ্যমে শনিবার দক্ষিণ ও উত্তর চট্টগ্রামের ৪১ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গুলি ও সহিংসতার ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী অস্ত্রসহ আটক হয়েছে। আনোয়ারার বারশত ইউনিয়নের দুধকুমড়ায় চারটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। মীরসরাইতে ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষ হয়েছে। এখানে এক প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। সব মিলিয়ে নির্বাচন অফিস সূত্রে ৪১ ইউপিতে গড়ে ৭০ থেকে ৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, আনোয়ারায় নির্বাচনপূর্ব সহিংসতায় শুক্রবার একজন নিহত ও ৭ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এদিন বিজিবি অস্ত্রসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে। জনকণ্ঠের পটিয়া, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, আনোয়ারা ও মীরসরাই থেকে প্রতিনিধিদের প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৬ষ্ঠ দফার ইউপি নির্বাচনে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ৩৪ ইউনিয়নে বিক্ষিপ্ত গোলযোগ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শনিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সহিংসতার কারণে সাতকানিয়া ও আনোয়ারা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে, দুই পক্ষের গোলাগুলির পর বিজিবি সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস কেন্দ্র থেকে মোঃ এমরান আহমেদ নামের এক বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে। তার কাছ থেকে দেশী এলজি উদ্ধার করা হয়েছে। সকালে পটিয়া উপজেলার শোভনদ-ী ইউনিয়নের আরফা করিম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশ থেকে বিজিবি ১১২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। সকাল সাড়ে এগারোটায় ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে বিএনপির প্রার্থী শামসুল আলম নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। অপরদিকে, ব্যাপক সংঘর্ষের কারণে আনোয়ারা উপজেলার হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ মোহছেন আউলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব বটতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষের ঘটনায় ১০ জন আহত হয়েছে। লক্ষ্মীপুর ॥ রামগঞ্জ উপজেলার ভোলাকোট ইউনিয়নের ভোলাকোট স. প্রা. বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বশির আহম্মদ মানিক ও আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী জাহিদ হোসেন জুয়েলের গ্রুপের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া সংঘর্ষে অন্তত বিশজন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠানো হয়েছে। দুপুর প্রায় সোয়া একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মানিকের সমর্থকরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে বিদ্রোহী গ্রুপের লোকজন দেশী ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কেন্দ্রে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে রামগঞ্জ ভোলাকোট সড়কে গাছ কেটে ও বিভিন্ন বস্তু ফেলে সড়ক ব্যারিকেড দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে লোকজন মসজিদের মাইকে অস্ত্রশস্ত্র ভোট কেন্দ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ প্রদান করেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি চলে। পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। এ নিয়ে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। যশোর ॥ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুই উপজেলার ২১ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শার্শা উপজেলার কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুর স্কুল কেন্দ্রে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার শিকার হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাসান ফিরোজ আহমেদ টিঙ্কু। এ সময় প্রার্থীর গাড়ি ভাংচুর ও তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। একই ইউনিয়নে ভোট দিতে যাওয়ার পথে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। চৌগাছায় দুই কেন্দ্রের বাইরে দু’টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া কিছু কিছু কেন্দ্রে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী, আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিএনপি প্রার্থী তাদের পোলিং এজেন্টকে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন। কায়বা ইউনিয়নের রুদ্রপুর স্কুল কেন্দ্রে যান ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হাসান ফিরোজ আহমেদ টিঙ্কু। এ সময় দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী আলতাফ হোসেনের কর্মী সমর্থকরা তার গাড়িতে হামলা চালায়। হামলায় আ’লীগ প্রার্থী টিঙ্কুর গাড়ির সামনের ও পেছনের গ্লাস ভেঙ্গে যায়। হামলার মুখে গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে লাঞ্ছিত হন প্রার্থী। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত, পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গাইবান্ধা ॥ গোবিন্দগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় বিভিন্ন কেন্দ্রে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এ তিনটি উপজেলার মোট ২৩টি ইউনিয়নে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। গোবিন্দগঞ্জের গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের বালুভরা উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ২টি কক্ষের ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাই, ভোটার ও প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, সাঘাটার জুমারবাড়ি ও কামালেরপাড়া ইউনিয়নে ভোট কারচুপি, ব্যালট পেপারে সীল মারা ও ফুলছড়ি উপজেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে গোলযোগের কারণে গুলির খবর পাওয়া গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে নিয়ে আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় ও জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পরে। বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। ৩টায় আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের বিওসি ঘাট এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ সালাহ উদ্দিন ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী মোঃ নূরুল ইসলামের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে র‌্যাব, পুলিশ সংঘর্ষ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ময়মনসিংহ ॥ ত্রিশালের কানিহারি ইউনিয়নের ছাপানহলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নৌকার প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা শনিবার দুপুরের বুথের ভেতর থেকে ১টি ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় পুলিশ ৪ জনকে আটক করেছে। এ সময় পুলিশ ৮ রাউন্ড ফাকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও পরে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। উদ্ধার করা হয়েছে ব্যালট বাক্স। এছাড়া বালিপাড়া বিয়ারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিয়ারা পাটুলি রহমত উল্লাহ উচচ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রেও ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। ময়মনসিংহ পুলিশ সুপারের মুখপাত্র নূর আলম ত্রিশালের ৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিতের কথা নিশ্চিত করেছেন। পাবনা ॥ সদর ও চাটমোহর উপজেলায় ৯ জন প্রার্থী ভোট বর্জন করেছেন। এছাড়া একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। কুমিল্লা ॥ ৪৪টি ইউনিয়নে গতকাল শনিবার ভোটগ্রহণ অনেকটা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার দাউদকান্দি উপজেলার ঝিংলাতলী ইউনিয়নের গলিয়ারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা কেন্দ্র দখলে ব্যর্থ হয়ে ১৫-২০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একটি ভোট কক্ষ থেকে ৪টি সিল লুটে নিয়েছে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৮ রাউন্ড গুলি চালায়। দুপুর ১২টার দিকে জেলার এ ঘটনা ঘটে। বিকাল ৩টার দিকে একই উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের সরকারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ ও বহিরাগতদের মধ্যে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে গৌরীপুর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই তপন বাগ্চীসহ ৫ পুলিশ আহত হয়। এ সময় একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আহত হন। এছাড়া উপজেলার গঙ্গাপ্রাসাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০জন আহত হয়েছে। নওগাঁ ॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬ষ্ঠ ও শেষ দফায় শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নওগাঁ সদর উপজেলাসহ ৩ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ২৭৭টি কেন্দ্রে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকেই ভোট কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের উপচেপড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসব মুখর পরিবেশে কেন্দ্রে ভোট দিতে আসেন নতুন ভোটররাও। জীবনের প্রথম ভোট দিতে পেরে তাদের চোখে-মুখে আনন্দের ছটা ছিল অন্যরকম। সাভার ॥ অনিয়ম ও ভোট চুরির অভিযোগে সাভার উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিরুলিয়া, পাথালিয়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহামুদুল হাসান আলাল, বাছেদ দেওয়ান ও সারোয়ার হোসেন নির্বাচন বর্জন করেছেন। একই অভিযোগে আশুলিয়ার ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বর প্রার্থী ফজলুল হকও নির্বাচন বর্জন করেন। এছাড়া, এদিন বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও মারধরে আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক। ঈশ্বরদী ॥ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাবুলচারা কেন্দ্রে সৃষ্ট সহিংসতায় আহত আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম (৪১) শনিবার সকাল নয়টায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রামেক হাসপাতালে মারা গেছেন। সে ওই গ্রামের সাহাদত হোসেনের ছেলে। গত ২৮ মে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলাকালে মোরগ মার্কা প্রতিকের মেম্ম¦র প্রার্থী হাসেম ও ফুটবল মার্কা প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী মিন্টুর সমর্থকদের মধ্যে ভোট কাটাকাটি নিয়ে সহিংসতা বাঁধে । এসময় হাসেম, মিন্টু ও সিরাজুল ইসলামসহ ১৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে সিরাজুলকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
×