ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রায়ান ফুং

চালকহীন গাড়ি ॥ চীনে গুগলের শত কোটি ডলার বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৪ জুন ২০১৬

চালকহীন গাড়ি ॥ চীনে গুগলের  শত কোটি ডলার বিনিয়োগ

এ্যাপল সম্প্রতি চীনের একটা গণপরিবহন কোম্পানির পেছনে ১শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তটা নজিরবিহীন এবং হেঁয়ালিপূর্ণ মনে হতে পারে। প্রশ্ন উঠতে পারে গাড়ির পেছনে কেন এই বিনিয়োগ। আর বিনিয়োগ যদি করতেই হয় সেই অর্থটা নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রেই করা নয় কেন? প্রশ্ন যেটাই থাক, সিদ্ধান্তটা যে হঠাৎ করেই বা দৈবাৎ নেয়া হয়েছে তা নয়। অটোমেশনের মতো যুগান্তকারী প্রযুক্তির বদৌলতে আজ মোটরগাড়ি শিল্পে দ্রুত ও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এ্যাপলের ওই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে পরিবহন শিল্পে প্রতিষ্ঠানটির ক্রমবর্ধমান আগ্রহের পরিচয়ই শুধু পাওয়া যাচ্ছে না, এর দ্বারা এমন একটি দেশের ওপর বাজিও ধরা হয়েছে যে, দেশটা ভবিষ্যতে মোটরগাড়ির উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। চীন আগামী প্রজন্মের মোটরগাড়ি প্রযুক্তির জন্য নিজেকে তৈরি করতে বিস্ময়কর গতিতে এগিয়ে চলেছে। সে দেশের সরকারী কর্মকর্তারা ২০২০ সাল নাগাদ মহাসড়কে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ শহরের রাস্তায় সম্পূর্ণরূপে চালকহীন গাড়ি নামানোর একটি খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল আইন, রাজ্য সরকারের আইনও স্থানীয় মোটরযান আইন একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে এমন এক জট বেধে আছে যে মোটরযান অটোমেশনের ক্ষেত্রে সেখানে ঝট্ করে কিছু করতে যাওয়া সম্ভব নয়। এদিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের পার্থক্য আছে। চীনে অধিকতর কেন্দ্রীভূত সরকার থাকায় সেই সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তেই অনেক কিছু করে ফেলা সম্ভব। আর তার ফলেই চীন মোটরগাড়ির অটোমেশন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছন থেকে এসে টপকে যেতে পারে। চীনে মোটরগাড়ির মালিকানার হার এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সামান্য অংশ মাত্র। সেখানে এক হাজার লোকের জন্য গাড়ি আছে ২শ’রও কম। তথাপি চীনের বিশাল জনসংখ্যার কারণে পরিবেশ দূষণ, যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুÑ এইসবই দেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে ২০১৩ সালে চীনে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছে। অথচ একই সময় যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে ৩৪ হাজার। চীনের কোথাও কোথাও যানজট কয়েকদিন ধরে থাকে। ২০১০ সালে এমনি যানজটের একটা রেকর্ড হয়েছিল। যাই হোক, এ্যাপলের সম্প্রসারণ শেষ পর্যন্ত অটোমোবাইল শিল্পেও বিস্তৃত হয়েছে এই নিয়ে নানা ধরনের গুজব এখনও চলছে। সেই গুজবের মধ্যে কোম্পানির দিক থেকে এটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ যে বিশ্বে গাড়ির সবচেয়ে বড় বাজার কিভাবে কি করতে হবে তা নিয়ে কি ভাবছে। এ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম বুক সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে এ কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আভাস দিয়ে বলেছিলেন যে ইউবার কোম্পানির চীনা সংস্করণ ডিডি চুজিংয়ে বিনিয়োগ থেকে চীনের বাজারের নির্দিষ্ট কিছু অংশ সম্পর্কে আরও কিছু জানবার সুযোগ পাওয়া যাবে। গণপরিবহন কোম্পানিতে এ্যাপলের এই সহায়তা নানা দিক দিয়ে যথেষ্ট অর্থবহ। এর মধ্য দিয়ে যে অংশীদারিত্ব গড়ে উঠছে তাতে আমেরিকার এই বিশাল হাইটেক কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী আইফোন বিক্রির ক্ষেত্রের মন্দার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এতে করে চীনে এ্যাপল আরও বৃহত্তর পরিসরে দৃশ্যমান হতে পারে। অন্যান্য বিদেশী টেক কোম্পানিকে চীনে দৃশ্যমান দেখা না গেলেও এ্যাপলকে বেশ কয়েক বছর ধরে দৃশ্যমান থাকতে দেখা গেছে। এই সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছে তাতে উন্নততর অনলাইন সার্ভিস কিভাবে গড়ে তুলতে হয় এ্যাপল তা বুঝতে পারবে। বলাবাহুল্য এই অনলাইন সার্ভিসের ক্ষেত্রে এ্যাপল মিশ্র সাফল্য ভোগ করে এসেছে তবে এ্যাপল পে ও এ্যাপল মিউজিকের মতো বিষয়গুলোর সম্ভাবনাও তারা উত্তরোত্তর পরীক্ষা করে দেখছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এ্যাপলের ২৩ হাজার ৩শ’ কোটি ডলারের নগদ অর্থ ও সিকিউরিটিজের সিংহভাগই গচ্ছিত আছে বিদেশে। সেই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করলে মোটা অঙ্কের কর গুনতে হবে। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে এ্যাপল ডিডির মাধ্যমে প্রতিদিন যে ১ কোটি ১০ লাখ ট্রিপ হচ্ছে সে সম্পর্কে মূল্যবান উপাত্ত লাভের সুযোগ পাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। সেই তথ্যগুলো প্রভূতরূপে কাজে লাগবে। সেটা শুধু চীনে এ্যাপলের ফোন ও কম্পিউটার বিক্রির গতানুগতিক ব্যবসার জন্যই কাজে লাগবে তা নয়, উপরন্তু এমন একটা গাড়ির ডিজাইন তৈরির উদ্যোগেরও সহায়ক হবে যা একদিন সারাবিশ্বের চালকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। কেলী ব্লু বুকের এনালিস্ট টনি লিম বলেন, ‘পুরোদস্তুর স্বয়ংসম্পূর্ণ ভবিষ্যত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আগ্রহী সকল প্রস্তুতকারকের কাছে এইসব মূল্যবান উপাত্ত অতি গুরুত্বপূর্ণ। চীনের কাছ থেকে অর্জিত এই শিক্ষা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শিল্পায়িত দেশেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।’ মোটরগাড়ি শিল্প এবং সেই সঙ্গে গুগল ও গণপরিবহন ফার্ম ইউবারের মতো টেক কোম্পানিগুলো মনে করে যে চালকের আসন থেকে মানুষকে বের করে আনা হলে যানজট কমবে এবং জীবন রক্ষা পাবে। মানুষের ভুলের জন্য শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি মোটরগাড়ির দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। মানবচালিত যানের বদলে স্বয়ংচালিত গাড়ির বহর চালু করা হলে চালকরা নিজেদের ভ্রান্তি লাঘব করতে পারে। বলতে গেলে প্রতিটি বড় ধরনের গাড়ি প্রস্তুতকারীরাই স্বয়ংচালিত গাড়ির ক্ষমতা ও সামর্থ্য নিয়ে গবেষণা করে আসছে। কেউ কেউ আবার গাড়ি ব্যবহারের নতুন রূপ নিয়ে গবেষণার জন্য গণপরিবহন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্র জেনারেল মোটরস মোটরগাড়ির অটোমেশনে গবেষণার অংশ হিসেবে লিফটে অর্ধ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ব্যবসায় মহল ও সরকার উভয় পরিসরের চীনা কর্মকর্তারাও চালকহীন গাড়ির ধারণাটি সাদরে গ্রহণ করেছেন। গত এপ্রিল মাসে স্থানীয় কোম্পানি চ্যাংঅ্যান অটোমোবাইলের তৈরি দুটি স্বয়ংচালিত গাড়ির প্রথম দূরপাল্লার পরীক্ষা চালান হয়। গাড়ি দুটো মাহসড়ক দিয়ে চোংকিং থেকে বেজিং পর্যন্ত প্রায় ১২৫০ মাইল পথ চারদিনে পাড়ি দেয়। একই মাসে ভলভো ঘোষণা করে যে তারা শীঘ্রই তাদের একশ প্রোটোটাইপ গাড়ি চীনের রাস্তায় ছাড়বে। বাইদু ও আলীবাবার মতো চীনের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে জনপ্রিয় কয়েকটি দেশীয় ফার্ম স্বয়ংচালিত গাড়ি প্রযুক্তির পেছনে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। বাইদু তার নিজস্ব প্রোটোটাইপ এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করবে। এটা হবে গুগলের প্রতি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে। চীনের মোটরগাড়ি কোম্পানিগুলো গুগল ও ডেইমলার এজির মতো পাশ্চাত্য কোম্পানির কাছ থেকে মেধা চালান করে নিয়ে আসার জন্য ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করছে। অনুবাদ ॥ এনামুল হক ষ সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
×