ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

১০ বছরেই সাংবাদিক!

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৪ জুন ২০১৬

১০ বছরেই সাংবাদিক!

জান্না জিহাদ আয়াদ। ফিলিস্তিনী শিশু। পশ্চিম তীরের নবী সালেহ গ্রামে থাকে জান্না। বয়স মাত্র দশ। তবে এখনই নিজেকে সাংবাদিক মনে করে জান্না। নবী সালেহ গ্রামের অন্য শিশুদের মতো জান্না ইসরাইলী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে আসছে। মাত্র সাত বছর বয়স থেকেই জান্না তার চারপাশের বিভিন্ন বিষয়ের ভিডিও করছে। পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরাইলের অবিচারের খবরের ছবি তোলাকে নিজের দায়িত্ব মনে করে জান্না জিহাদ। জান্নার পরিবারে কেউ সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত নন। তার চাচা বিলাল তামিনি একজন ফটোগ্রাফার। তিনিও জান্নার মতো ইসরাইলি সহিংসতার ছবি তোলেন। জান্না বলে, ‘আমার চারপাশে যা ঘটছে আমি তাই নিয়ে বলছি। আমি সৈন্য, কামান এবং পুলিশকে খুব কাছ থেকে দেখছি। মাতৃভূমি থেকে আমাদের তাড়াতে তারা অনেক চেষ্টা করছে।’ মুস্তফা তামিমি জান্নার চাচাত ভাই, রুশদি তামিমি তার চাচা। দুজনকেই হত্যা করে ইসরাইলি সেনারা। ওই ঘটনার পর থেকেই নবী সালেহ গ্রামে যা কিছু ঘটছে তা ক্যামেরায় বন্দী করে আসছে জান্না। জান্না জানান, ‘ফিলিস্তিন থেকে অনেক সাংবাদিকই আমাদের বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছান না। তাই আমি ভাবলাম, কেন আমার বার্তা পাঠানো হবে না এবং আমার গ্রামে যা ঘটছে তা দেখানো হবে না।’ জান্না তার কাজের পরিধি বাড়িয়েছে। মায়ের আইফোন ব্যবহার করে জেরু জালেম, হেবরন, নাবলুস এবং জর্ডানের বিভিন্ন দৃশ্য ধারণ করছে। সেনা ছাউনি থেকে সাধারণ মানুষকে আটক করার দৃশ্যও বাদ যাচ্ছে না তার ক্যামেরায়। ফিলিস্তিনী শিশুদের ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ ও শিশুদের প্রতি ইসরাইলী সেনাদের অত্যাচারের দৃশ্যও ধারণ করছে জান্না। একজন শিশু হিসেবে জান্না বয়স্ক সাংবাদিকদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সুবিধা পাচ্ছে। ইসরাইলী সেনারা বড় সাংবাদিকদের আটক করে এবং তাদের ক্যামেরা তুলে নেয়। কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ায় জান্না এক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে। জান্না বলেন, ‘আমার ক্যামেরাই আমার বন্দুক। তিনি বলেন, ক্যামেরা বন্দুকের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ক্যামেরার মাধ্যমে আমি সাধারণ মানুষের কাছে আমার বার্তা পাঠাতে পারছি এবং তারা সেগুলো অন্যকে দেখাতে পারছে।’ জান্নার মা নাওয়াল তামিমি বলেন, ‘আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ভীত এবং গর্বিত। আমি গর্বিত কারণ একজন শিশু হিসেবে সে তার বার্তা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। বিশ্বের কাছে নিজের অনুভূতি এবং স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার চিত্র তুলে ধরছে জান্না। আমার ভয় হয় যখন মধ্যরাতে সেনাবাহিনী আমাদের বাড়িতে আসে এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। ধোঁয়ার কারণে মাঝরাতে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ইসরাইলী সেনারা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালাচ্ছে। কারণ তারা ইসরাইলী দখলদারিত্বের প্রতিবাদ করছে।’ জান্না বড় হয়ে সিএনএন এবং ফক্স নিউজে কাজ করতে চায়। কারণ সিএনএন ও ফক্স নিউজে ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরাইলী সেনাদের অত্যাচারের খবর তেমন প্রচার করা হয় না। তাই সেখানে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে চায় জান্না। ফেসবুকে জান্না নিজেকে একজন সংবাদকর্মী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ফেসবুকে তার ফলোয়ার ২২ হাজার। ফেসবুক পেজে ইসরাইলী সেনাদের বেশকিছু ছবিও পোস্ট করেছে জান্না। সূত্র : ডয়েচ ভেলে, সিএনএন
×