ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৪ জুন ২০১৬

জঙ্গীদের ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ জামিনে ছাড়া পেয়েই লাপাত্তা হয়ে যাচ্ছে জঙ্গীরা। এ সংখ্যা ৮শ’ ছাড়িয়েছে, যাদের অনেকেই পালিয়ে বিদেশ চলে গেছে। এর মধ্যে বিশ্বের অন্যতম একটি ক্ষমতাধর দেশেই রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছে অন্তত দুই শ’। আত্মগোপনে থেকে জঙ্গীরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষক, লেখক, প্রকাশক, ব্লগারসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আর হত্যার দায় স্বীকার করে সাইট ইন্টেলিজেন্সের নামে বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ হত্যাকারী ও কুশীলব গ্রেফতার হচ্ছে না। এজন্য সকল গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও কারা অধিদফতরের সমন্বয়ে জঙ্গীদের প্রযুক্তিনির্ভর ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। জঙ্গী তৎপরতা এবং নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে তথ্য পেতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই ডাটাবেজের আওতায় আনা হয়েছে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের, যার সংখ্যা দুই শ’ ছাড়িয়ে গেছে। ডাটাবেজে জঙ্গী ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলোর তৎপরতা, তাদের মদদদাতা দেশী-বিদেশী জঙ্গী ও রাজনৈতিক সংগঠন, আর্থিক বিষয়াদি, অস্ত্র-গোলাবারুদ, প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয় সম্পর্কিত তথ্য অন্তর্র্ভুক্ত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানা গেছে, সরকারী নথিপত্র অনুযায়ী সম্প্রতি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকেই ছাত্রশিবির নেতাকর্মী পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ১২৭ জন এবং নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ১৬ জঙ্গী জামিনে ছাড়া পেয়েছে। জামিন পেয়েই তারা লাপাত্তা। আর কারাগারটিতে বন্দী থাকা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ৩২ জন এবং ছাত্রশিবিরের ১৯ জন জামিনে ছাড়া পেতে নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রশিবিরের পরিচয়ে ছাড়া পাওয়া ১২৭ জনের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্য। অদ্যাবধি তাদের সম্পর্কে আর কিছুই জানা যায়নি। তাদের অনেকেই আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে গেছে। অনেকেই আবার ছাত্রশিবির, বিভিন্ন ইসলামী দল ও সরকারী দলের লেবাসে প্রকাশ্যেই তৎপর রয়েছে। আত্মগোপনে চলে যাওয়া জামিনপ্রাপ্তরা আদালতে হাজির হয় না। তাদের হয়ে কতিপয় আইনজীবী আদালতে আইনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। জামিনপ্রাপ্তদের অধিকাংশই একাধিক মামলার আসামি। পুুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের চারজন এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রথম সারির পাঁচ নেতা বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়া থেকেও তারা আনসার আল ইসলামের নামে প্রচার-প্রোপাগান্ডা ও কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইতোমধ্যেই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হয়ে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে অপতৎপরতা চালানোর সময় কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে। তারা জঙ্গী সংগঠনটির আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানীকে কারামুক্ত করতে দেশে অর্থ পাঠাত বলে স্বীকার করেছে। জামিনে ছাড়া পেয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে জামায়াতে ইসলামীর একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, শুধু ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নয়, দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছে ছাত্রশিবিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের জামিনে ছাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রকাশ্যে না আসতেও দলীয় নির্দেশ রয়েছে। জামিনপ্রাপ্তরা আদালতে হাজিরা দেয় না। এটি আত্মগোপন নয়। দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক এটি তাদের কৌশলগত অবস্থান। গত কয়েক বছরে জঙ্গীদের হাতে নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনার তদন্তকারী সংস্থাগুলো সূত্রে জানা গেছে, জামিন পেয়ে আত্মগোপনে থাকা অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। দেশে আত্মগোপনে থাকা অনেকের নামই শিক্ষক, ব্লগার, লেখক, প্রকাশক ও মুক্তমনা মানুষ হত্যার ঘটনায় নানাভাবে ঘুরেফিরে আসছে। তাদেরই একজন শফিউর রহমান ফারাবী। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক প্রকৌশলী আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার পর নানাভাবে আলোচনায় আসে তার নাম। রাজীবের জানাজা আদায়কারী ইমামকে হত্যার হুমকি দিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেন তিনি। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অনিয়মিত ছাত্র ফারাবী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরে যোগ দেন। নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ২০১০ সালে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়েই গ্রেফতার এড়াতে ছাত্রশিবিরের লেবাসে চলাফেরা করতে থাকেন। বর্তমানে তিনি ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি টিএসসিতে মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক লেখক-প্রকৌশলী ড. অভিজিত রায় হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিজিত হত্যায় ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ আছে। শুধু অভিজিত রায় নয়, গত বছরের ১২ মে সিলেটে মুক্তমনা ব্লগের লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যায়ও ফারাবীর ইন্ধন থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিজয় হত্যায় জড়িত ছয়জনের মধ্যে তিনজনই গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। অনন্ত হত্যায় জড়িতরা সবাই শিবিরের সাবেক সদস্য। তারা ফারাবীর একান্ত অনুসারী। অনন্তর হত্যাকারীদের একজন ফারাবীর কাছে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে চেয়েছিল, অনন্তকে কী করা যায়? উত্তরে ফারাবী লিখেছেন, অনন্তকে থাবা বাবার কথা স্মরণ করিয়ে দিলেই হয়! প্রসঙ্গত, গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক ব্লগার রাজীবই থাবা বাবা নামে লিখতেন। তাকে রাজধানীর পল্লবীর নিজ বাড়ির সামনেই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একই কায়দায় সিলেটে নিজ বাড়ির সামনে হত্যা করা হয় অন্তত বিজয়কে। অনন্ত হত্যা মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকার সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী জানান, অনন্ত হত্যার আসামিরা ফারাবীর একনিষ্ঠ ভক্ত ও অনুসারী। অনন্তকে হত্যার আগে হত্যাকারীদের সঙ্গে ফারাবীর যোগাযোগ থাকার প্রমাণ রয়েছে। সিআইডির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে একটি অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল উদ্ধার হয়, যে রাইফেলটি বিশ্বের একটি সুপার পাওয়ারের দেশের রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাই শুধু ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া পৃথিবীর কোন দেশেই ওই রাইফেলের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়নি। রাইফেল উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দু’জন ফারাবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারাবীর সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একই বর্ষের ছাত্র ছিল। গ্রেফতারকৃতরা ফারাবীর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ওই রাইফেল সম্পর্কে ফারাবী অনেক কিছু জেনে থাকতে পারেন। এমন একটি বাহিনীর অস্ত্র কিভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সে বিষয়ে বিস্তর অনুসন্ধান চলছে। এ কর্মকর্তা বলছেন, দেশে ব্লগার, লেখক, প্রকাশকদের নৃশংসভাবে হত্যার নেপথ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত থাকার বিষয়টি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। অস্ত্র উদ্ধার থেকে শুরু করে হত্যাকা-, সাইট ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে নৃশংস হত্যাকা-ের দায় স্বীকার, সবই হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের নামে দেশে একটি বিশেষ শক্তির উত্থান ঘটানোর চেষ্টা চলছে। সে শক্তিকে পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। যারা এ ধরনের হত্যাকা- ঘটাচ্ছে তাদের অস্ত্র-গোলাবারুদ সরবরাহ, অর্থের যোগান, গ্রেফতারের পর জামিনের ব্যবস্থা করা, আত্মগোপন থেকে শুরু করে সবকিছুই করা হচ্ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে। এর শিকড় অনেক গভীরে। জঙ্গীদের মামলা মনিটরিং সেল ও মামলার তদন্তকারী সংস্থাগুলো সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারের পর জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নাম-পরিচয়, পেশা এবং প্রকৃত ঠিকানা আড়াল করে। বিপুল পরিমাণ আসামির সঠিক নাম-ঠিকানা অধিকাংশ সময়ই যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয় না। এছাড়া গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সঠিকভাবে তদন্ত না করেই মামলার চার্জশীট প্রদান করা হচ্ছে। আর আইনজীবীরা জামিন আবেদনে বলছেন, পুলিশ চাহিদা মোতাবেক টাকা না পেয়ে গ্রেফতারকৃতদের জামায়াত-শিবির ও জঙ্গী সদস্য বলে উল্লেখ করে আদালতে সোপর্দ করেছে। তারা নিষিদ্ধ কোন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয়। আসামিদের পক্ষে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় উপযুক্ত প্রমাণাদি মামলার নথিপত্রের সঙ্গে না থাকায় গ্রেফতারকৃতদের জামিন পাওয়ার পথ সহজ হচ্ছে। জামিনপ্রাপ্তরা আবার চলে যাচ্ছে আত্মগোপনে। জড়িয়ে পড়ছে লেখক, প্রকাশক, ব্লগার হত্যাসহ নানা নাশকতামূলক কর্মকা-ে। এজন্যই জঙ্গীদের প্রযুক্তিনির্ভর ডাটাবেজ করার কাজ চলছে। যদিও ২০০৯ সালের প্রথম দিকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন জঙ্গী মনিটিং সেল গঠন করা হয়। জঙ্গীবাদ রুখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নরের প্রতিনিধি ও ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে সেলের সদস্য করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মূলত ২০১০ সাল থেকে শুধুমাত্র জঙ্গীবাদ সংক্রান্ত একটি বিশেষ ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। ডাটাবেজে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃত ও জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গীদের নাম-ঠিকানা, ছবি, স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক দল, জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ, বিদেশী জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ, বিদেশে যাতায়াত, অস্ত্র-গোলাবারুদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিষয়াদি ছাড়াও নানা তথ্য। কারাবন্দী জঙ্গীদের সঙ্গে সাক্ষাতকারীদের নাম-ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্যও রাখা হয়েছে ডাটাবেজে। ডাটাবেজে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত যেসব জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে তাদের নামের তালিকা। দেশে তৎপর থাকা নিষিদ্ধ দেশী-বিদেশী জঙ্গী সংগঠনের নাম। এসব সংগঠনের কার্যক্রম, আর্থিক অবস্থা, সদস্য সংখ্যা, তৎপরতা চালানোর কৌশল, স্থায়ী-অস্থায়ী কার্যালয়, অস্ত্র-গোলাবারুদ সংক্রান্ত ধারণাগত তথ্যসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি। জঙ্গীবাদ বিষয়ে কাজ করা পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, আগে জঙ্গী শনাক্ত করা কঠিন ছিল। কারণ জঙ্গীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ অন্যান্য অভিযোগে মামলা হতো। ফলে অনেক সময়ই তারা জামিনে ছাড়াও পেয়ে যেত। ২০১০ সালের পর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হচ্ছে। ফলে জঙ্গীদের শনাক্তকরণের পথ সহজ হয়ে গেছে। যাদের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হয়েছে, তারা জঙ্গী তাতে কোন সন্দেহ। কারণ যাচাই-বাছাই শেষেই সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা হচ্ছে। এজন্য তাদের দ্রুত ডাটাবেজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জঙ্গী হামলা ও ব্লগার, প্রকাশক, লেখকসহ জঙ্গীদের হাতে নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দী মোতাবেক পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে যাদের নাম আসছে, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে ডাটাবেজে। প্রয়োজন অনুযায়ী পলাতকদের সম্ভাব্য ছবি আঁকিয়ে রাখা হচ্ছে। ডাটাবেজে স্থান পেয়েছে ভারতের বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় সে দেশের জাতীয় তদন্ত সংস্থা কর্তৃক দেয়া জঙ্গীদের নাম। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত পাঠানো ৩১ জনের মধ্যে কারাবন্দী ১৯ জনকে ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মুক্ত থাকা ১২ জনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদের খসড়া ডাটাবেজের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিদেশে অবস্থানকারীদের নামও রয়েছে ডাটাবেজে। ডাটাবেজটি মূলত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, কারা কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। ডাটাবেজে বাংলাদেশের প্রায় ৪০টি ইসলামী সংগঠনের নামও স্থান পেয়েছে। এসব সংগঠন ধর্মীয় উগ্র মতবাদ ও দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষে রয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেছেন, জঙ্গী, জঙ্গী ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠন, সংগঠনের নেতা, সংগঠনের কার্যক্রম থেকে শুরু করে সবকিছুরই তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এমনকি নিয়মিত মনিটরিং অব্যাহত আছে। বিষয়টি সম্পর্কে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সরকার জঙ্গীদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। জঙ্গীদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যসংবলিত ডাটাবেজ তৈরির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক জঙ্গী সংগঠন সম্পর্কেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নৃশংস হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পর্কে বিশেষ এবং গভীর তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
×