ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এতে জ্বালানি ব্যয়ও অর্ধেকে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে

পুরনো ১১ বিদ্যুত কেন্দ্র সংস্কার করে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৪ জুন ২০১৬

পুরনো ১১ বিদ্যুত কেন্দ্র সংস্কার করে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ দেশের ১১ পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র সংস্কার করে এক হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সবকটি বিদ্যুত কেন্দ্র সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি বিদ্যুত কেন্দ্রের ওভারহোলিং, তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্রর রি-পাওয়ারিং এবং তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্রকে সিম্পল সাইকেল থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের জন্য ঋণের নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। দুটি প্রকল্পের জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। নয়টি প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। তবে এ প্রকল্পে চট্টগ্রামের রাউজান বিদ্যুত কেন্দ্র সংরক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে। পুরাতন বিদ্যুত কেন্দ্র সংস্কার করে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পাওয়ারসেল সরকারের কাছে সুপারিশ করে। ওই সুপারিশের পর সরকার বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এতে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে জ্বালানি ব্যয়ও অর্ধেকে নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, আগে দেশের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো সিম্পল সাইকেলে বিদ্যুত উৎপাদন করত। এতে বিদ্যুত উৎপাদনে গ্যাসের অপচয় হতো। এখন সিম্পল সাইকেলের পরিবর্তে কম্বাইন্ড সাইকেল প্রযুক্তিতে একই জ্বালানি খরচে প্রায় দ্বিগুণ বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। সিম্পল সাইকেল কেন্দ্রে ৩৫ ভাগ উৎপাদন দক্ষতার জায়গাতে কম্বাইন্ড সাইকেলে সর্বোচ্চ ৫৫ ভাগ উৎপাদন দক্ষতা পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো দীর্ঘদিনের পুরাতন হওয়ায় কোন কোনটির উৎপাদন ক্ষমতা ২০ ভাগে নেমে এসেছিল। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ঘোড়াশাল ৫ নম্বর ইউনিটের ওভারহোলিং আগামী মাস থেকে শুরু হতে পারে। বিদ্যুত কেন্দ্রটির বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ১৯০ মেগাওয়াট। ওভারহোলিংয়ের পর ২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে ২১০ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। ওভারহোলিং শেষে রাউজান কেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ৩০ মেগাওয়াট বেড়ে ১৮০ থেকে ২১০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ এসটি ২১০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ মেগাওয়াট কমে গেছে। কেন্দ্রটি ওভারহোলিং করে নতুন জেনারেটর স্থাপন করলে উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ মেগাওয়াট বৃদ্ধি করা সম্ভব। সূত্র বলছে, কেন্দ্রটির দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। দেশের একমাত্র কয়লাচালিত কেন্দ্র বড়পুকুরিয়ার দুটি ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ মেগাওয়াট করে কমে ৯০ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু বিদ্যুত কেন্দ্রটি বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে কয়লার আর্দ্রতার কারণে কেন্দ্র মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায় বলে দেখা গেছে। এখন বলা হচ্ছে, ওভারহোলিং করা হলে কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা অন্তত ৬০ মেগাওয়াট বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ প্রকল্পের দরপ্রস্তাব মূল্যায়ন শেষে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পাওয়ারসেলের তরফ থেকে সমীক্ষা করে সরকারের কাছে পুরাতন কেন্দ্রগুলোর রি-পাওয়ারিং করার জন্য মতামত দেয়া হয়। এর আলোকে ১৫ বছরের মধ্যে স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর রি-পাওয়ারিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র ঘোড়াশালের তিনটি ইউনিটকে সরকার পর্যায়ক্রমে রি-পাওয়ারিং করছে। এর মধ্যে ঘোড়াশাল ৩য় এবং ৪র্থ ইউনিটের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ১৮০ মেগাওয়াট থেকে ২৩৬ মেগাওয়াট বৃদ্ধি করে ৪১৬ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩য় ইউনিটের জন্য ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে আর ৪র্থ ইউনিটের দরপত্র মূল্যায়ন শেষে ঠিকাদারকে নোটিফিকেশন অব এ্যাওয়ার্ড (কাজ দেয়ার ঘোষণা) করা হয়েছে। শীঘ্রই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। একই বিদ্যুত কেন্দ্রের ষষ্ঠ ইউনিটও রি-পাওয়ারিং করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক কেন্দ্রটির রি-পাওয়ারিংয়ে সহায়তা করছে। কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতাও ১৯০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪১৬ মেগাওয়াট হবে। কেন্দ্রটির মূল কাজের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দরপত্র মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তিনটি বিদ্যুত কেন্দ্রকে সিম্পল সাইকেল থেকে কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করা হচ্ছে। কেন্দ্রগুলো হলোÑ বাঘাবাড়ী-১০০ মেগাওয়াট, শাহজিবাজার-৭০ মেগাওয়াট এবং সিলেট-১৫০ মেগাওয়াট। বাঘাবাড়ী এবং শাহজিবাজার বিদ্যুত কেন্দ্রে ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) ঋণ সহায়তা দেবে। ইতোমধ্যে ঋণচুক্তিও স্বাক্ষর করা হয়েছে। বাঘাবাড়ী কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট থেকে ৫০ মেগাওয়াট বেড়ে ১৫০ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। শাহাজিবাজার কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা ৭০ মেগাওয়াট থেকে ৩৫ মেগাওয়াট বেড়ে ১০৫ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে। এছাড়াও সিলেট গ্যাস টারবাইন সিম্পল সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্রটির উৎপাদন ক্ষমতা কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তর করলে ৭৫ মেগাওয়াট বৃদ্ধি পাবে। কেন্দ্রটি এখন ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে।
×