ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নব নির্বাচিতদের সঙ্গে ফখরুলের রুদ্ধদ্বার বৈঠক

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৪ জুন ২০১৬

নব নির্বাচিতদের সঙ্গে ফখরুলের রুদ্ধদ্বার বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের পর প্রথমবাবে মতো কমিটিতে স্থান পাওয়াদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে দলটি। দলের মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামে আলমগীরের সভাপতিত্বে শুক্রবার নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বেলা এগারোটা থেকে দুপুর পৌনে একটা পর্যন্ত চলে এ বৈঠক। যদিও কাউন্সিলের ৭৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। ফলে নতুন কমিটির যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির নবনির্বাচিত যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে প্রথমবারে মতো বৈঠক হয়েছে। বৈঠকটি ছিল মূলত আনুষ্ঠানিক বৈঠক। বৈঠকে আমরা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক কার্যক্রম কীভাবে আরও বেগবান করতে পারি এবং বিএনপিকে আরও শক্তিশালী করে কীভাবে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবার যে আন্দোলন চলছে তাকে এগিয়ে নেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিকে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নেয়া হয়েছে বৈঠকে। বৈঠকে দলকে আরও শক্তিশালী করা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপি যে নেতৃত্ব দেবে সংগঠনকে সেভাবে গড়ে তোলার শপথ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সব স্তম্ভকে ভেঙ্গে দিয়েছে। দেশকে এ অবস্থা থেকে বের করে আনার জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সত্যিকার অর্থে সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। সরকার অবিলম্বে এ ধরনের নির্বাচনের ব্যবস্থা না করলে দাবি আদায়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। এ জন্য তিনি নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিএনপি এমন একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য যাদের আলাদা কোন প্রস্তুতি নিতে হয় না। ১৯৯১ সালে বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলেছিলেন যে, বিএনপি ১০-১১টি আসনে প্রার্থী দিতে পারবে। অথচ দেখা গেল বিএনপি সরকার গঠন করেছে। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে খুব শীঘ্রই দলের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়া হবে। সেখানে বাজেট সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান বিস্তারিত জানানো হবে জানান। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নতুন কমিটিতে জায়গা পাওয়া নেতাদের যারা এখনও একাধিক পদে আছেন সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তারা থাকতে পারবেন যেকোন একটি পদে। কে কোন পদটিতে থাকতে চান, তা লিখিতভাবে দলকে জানাতে বলেছেন মির্জা ফখরুল। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠপর্যায়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এসেছেন, তাদের চাঙ্গাভাব কীভাবে ধরে রাখা যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলও তৈরি হয়েছে। অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে দূরত্ব কমানোর কাজ কীভাবে করা যায় সেটি নিয়েও আলোচনা হয়। ঈদ-উল ফিতরের পর সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাংগঠনিক সফরে যেতে বলা হয়েছে। সফর শেষে নির্বাচন নিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেয়া নতুন কমিটির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুর কবির খোকন, হারুনুর রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, নুরুল ইসলাম মঞ্জু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাখাওয়াত হোসেন জীবন, সাহাদাত হোসেন, আনোয়ারুল আজীম, বিলকিস শিরিন ও শামা ওবায়েদ ছিলেন। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে আবদুল মোমেন তালুকদার খোকা, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, মোস্তাক মিয়া, মাহবুবুর রহমান শামীম, আবুল হাশেম বক্কর, মাহবুবুল আলম নান্নু, শাহীন শওকত, শামসুজ্জামান, সৈয়দ জাহাঙ্গীর হোসেন, মোশতাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, শরীফুল আলম, ওয়ারেস আলী মামুন, সেলিমুজ্জামান সেলিম, শহিদুল ইসলাম বাবুল ও জয়ন্ত কু-ুু উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর তিন ধাপে এখন পর্যন্ত ৪০ নেতার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। কাউন্সিলের ৭৫ দিন পার হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করতে পারেনি দলটি। বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে আগত কাউন্সিলররা সর্বসম্মতভাবে দলের নির্বাচিত চেয়ারম্যান খালেদা জিয়াকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে তিন দফায় মহাসচিব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব, কোষাধ্যক্ষ, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মোট ৪০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। দলের গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটি ও সম্পাদকম-লীর অন্য সদস্যদের নাম এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
×