ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৭১০ ইউপিতে আজ নির্বাচন

শেষ দফা ইউপি ভোট শান্তিপূর্ণ করতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৪ জুন ২০১৬

শেষ দফা ইউপি ভোট শান্তিপূর্ণ করতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপিতে ষষ্ঠ ও শেষ দফায় ভোট আজ। ইসির জন্য সহিংসতামুক্ত পরিবেশে নির্বাচন উপহার দেয়ারও শেষ সুযোগ এটি। এ দফায় সারাদেশে ৪৬ জেলার ৯২ উপজেলায় ৭১০ ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে। এদিকে শেষ দফায় ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশনে। এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। তা বিরতি ছাড়াই শেষ হবে বেলা ৪টায়। এদিকে ষষ্ঠ দফায় নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ব্যালট বাক্স ও ভোটার সরঞ্জাম কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল। এ দফায় চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য মিলে প্রায় ৩৩ হাজার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটার রয়েছে ১ কোটি ১০ লাখের বেশি। সারাদেশে সাড়ে ছয় হাজার কেন্দ্রে আজ সকাল থেকে ভোট উৎসব শুরু হবে। প্রার্থীদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ২২৩ জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫ হাজারের বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান পদে এ দফায় ইতোমধ্যে ২৭ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাদের সবাই ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী। এদিকে ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলে নির্বাচন নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটারদের নির্ভয়ে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটদানের অভয় দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সহিংসতার আশঙ্কা জানিয়েছে অনেক প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে কমিশনে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর ভয়ভীতির কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ বলেছেন ইউপি নির্বাচনের শেষ ধাপ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যা যা করা দরকার কমিশন সবই করছে। আমরা যেসব অভিযোগ পাচ্ছি তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি। গোলযোগ-সহিংসতা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবার সহযোগিতার দরকার। কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু ভোট আয়োজন সম্ভব নয়। এ দিকে শেষ ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ দিয়েছে ইসি। ইসির উপসচিব ফরহাদ আহম্মেদ খান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলমান ইউপি নির্বাচনের পাঁচটি পর্ব ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। শনিবার ষষ্ঠ ও শেষ ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পঞ্চম পর্যায়ের ইউপি নির্বাচনেও বিভিন্ন স্থানে সংঘাত, হানাহানি ঘটেছে। বেশ কিছু প্রাণহানি হয়েছে যা কোনমতেই কাম্য নয়। এই অবস্থায় শেষ পর্যায়ে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। এছাড়া চিঠির অনুলিপি ইতোমধ্যে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত মঙ্গলবার ইসির সচিব স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও পাঠনো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর। চিঠিতে নারী, সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী, সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরা যাতে নিরাপদে ভোট দিতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগেও চতুর্থ ধাপের ভোটের পরপরই কমিশন নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একই ধরনের চিঠি দেয়া হয়েছিল। ওই চিঠিতেও সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী সহিংসতা নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশকে বিঘিœত করছে উল্লেখ করে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ভোটের অনূকূল পরিবেশ সৃষ্টির অনুরোধ করা হয়। এদিকে ষষ্ঠ ধাপে নির্বাচনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, শেষ ধাপে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করি ভাল নির্বাচন হবে শেষ ধাপে। তিনি বলেন, ভোটে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে একজন সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বাঁশখালীর সব ইউপির ভোট বন্ধ করা হয়েছে। কোন অনিয়ম সহ্য করা হবে না। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এবার আওয়ামী লীগ দলীয় ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীর থাকার কারণে সহিংসতা বাড়তে পারে। কারণ শেষ পর্যয়ে এসে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে বহিষ্কার ছাড়া অন্য কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে নির্বাচনে মাঠে দলের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী উভয়ই শক্ত অবস্থানে রয়েছে। দলের অনেক নেতাকর্মী ও সমর্থক বিদ্রোহী প্রার্থী পক্ষে কাজ করছে। তাদের মতে ইউপি নির্বাচনে আগের ৫ দফায় সহিংসতা হয়েছে মূলত দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে কেন্দ্রে করেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এ দফায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া না হলে সহিংসতার ঘটনা বাড়তে পারে। তবে জানা গেছে, কমিশন এ দফায় আগের মতোই কঠোর হওয়ার কথা বললে তাদের পক্ষ থেকে বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কমিশন জানিয়েছে শেষ ধাপের নির্বাচনে এক লাখের বেশি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় লাখের মতো সদস্য নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত রয়েছেন। নির্বাচন সামগ্রী শুক্রবার রাতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির ৫৮টি কেন্দ্রে হেলিকপ্টারযোগে নির্বাচনী সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি ৫ জুন পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন থাকবে। এছাড়া নির্বাচনী ভোট কেন্দ্রের জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সাধারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রভেদে ১৭ থেকে ২০ জনের ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এ ক্ষেত্রে কেবল ভোটের দিনই লক্ষাধিক ফোর্স ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে গঠিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ইসির নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে ১টি করে মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় ২টি করে র‌্যাবের মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও ১ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ভোট গ্রহণের আগে-পরে চারদিনের জন্য ৩ জন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন। উপজেলাপ্রতি ১ জন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত থাকছে। ২ পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার ॥ এদিকে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে টাঙ্গাইলের গোপালপুর সার্কেলের এএসপি জমিরউদ্দিন সরকারকে প্রত্যাহার করে সেখানে একজন উপযুক্ত কর্মকর্তা পদায়নের নির্দেশও দিয়েছে ইসি। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত নির্দেশনাটি স্বরাষ্ট্র সচিবকে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে উপযুক্ত কর্মকর্তা পদায়নের জন্য আইজিপিকেও চিঠি দেয়া হয়েছে।
×