ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি আরব সফরে প্রধানমন্ত্রী ॥ শ্রমবাজার উন্মুক্ত হতে পারে

যুদ্ধাপরাধী বিচারে মধ্যপ্রাচ্যের জোরালো সমর্থন

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৪ জুন ২০১৬

যুদ্ধাপরাধী বিচারে মধ্যপ্রাচ্যের  জোরালো সমর্থন

তৌহিদুর রহমান ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সমর্থন আরও জোরালো হবে। এছাড়া সৌদি আরব সফরকালে শ্রমবাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত হতে পারে বলেও আশা করা হচ্ছে। সৌদি আরব সফরকালে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত, বিনিয়োগ, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ইত্যাদি বিষয় প্রাধান্য পাবে। এছাড়া সফরকালে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব গেছেন। তিনি সেখানে ৫ দিন অবস্থান করবেন। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব সমর্থন দেয়। পাকিস্তান ও তুরস্ক এই বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও সৌদি আরব যুদ্ধাপরাধের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম দেশেও যুদ্ধাপরাধী বিচারের পক্ষে অবস্থান নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধাপরাধী বিচার ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের সমর্থন আরও জোরালো হবে। আশা কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ড. ওয়ালিউর রহমান শুক্রবার জনকণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হলে পাকিস্তান প্রথম দিকে সৌদি আরবকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। তবে সৌদি আরব পাকিস্তানের কথায় কান দেয়নি। সৌদি আরব দেখেছে এই বিচার একটি আইনী কাঠামোর মধ্যে দিয়ে চলছে। সে কারণে এই বিচার নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি তারা। এই বিচার প্রক্রিয়ায় এক ধরনের সমর্থনই রয়েছে তাদের। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফর করছেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সৌদি আরবের কোন মাথাব্যথা নেই। তিনি আরাও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আরও জোরালো হবে। সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে এই বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য পাকিস্তান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে লবিং চালিয়ে আসছিল। এছাড়া যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। পাকিস্তান ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ মিসর ইতোমধ্যেই বলেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে পাকিস্তানের নাক গলানো উচিত নয়। বাংলাদেশে যখন একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে, ঠিক সে সময়েই প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে আরও সমর্থন আরও জোরালো হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। সৌদি আরব সফরকালে আগামী ৫ জুন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। দুই দেশের শীর্ষ নেতার এই বৈঠকে সৌদিতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার পুরোপুরি উন্মুক্ত, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সন্ত্রাস প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রকৌশল, হালাল মাংসসহ বিভিন্ন সামগ্রী আমদানি করতে চায় তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব। এ সব পণ্যে আমদানিতে বিশেষ সহায়তা চাইতে পারে সৌদি পক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময়সূচী চূড়ান্ত করে বাংলাদেশকে ইতোমধ্যেই জানিয়েছে সৌদি সরকার। গত বছর শেখ হাসিনাকে সৌদি আরব সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। ওই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই সৌদি আরব সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরের মধ্য দিয়ে সেখানকার শ্রমবাজার বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত হতে পারে। বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ ও অন্যান্য সহযোগিতাও বাড়তে পারে। সফরকালে দু’দেশের চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এর আগে ২০০৯ সালে তিনি দ্বিপক্ষীয় সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে ঢাকা ও রিয়াদের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়েও সফর হয়েছে। সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মী কাজ করছে। দেশটিতে শ্রম বাজারে আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সৌদিতে আরও বেশি হারে জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্যে দিয়ে সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে আশা করছে উভয় দেশ। এ সফরে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ডাক্তার-নার্সসহ দক্ষ শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে আরেকটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি সৌদি আরব সৌদি আরবের পররাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন আল জুবায়েরের আমন্ত্রণে দেশটি সফর করেন মাহমুদ আলী। সে সময় দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে আলোচনা করেন তারা। সৌদি আরবে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর রিয়াদ সফরের বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়। সে সময় সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য সৌদি আরব প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব সফরে গেলে সৌদি বাদশাহ খুশি হবেন বলেও জানিয়েছিলেন সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, ওষুধ নেয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসায়িক ভিসা প্রদানের ইস্যুটিও ঝুলে রয়েছে। এছাড়া সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামে বাংলাদেশী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জমি দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরব সফরকালে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বে আইএসবিরোধী সামরিক জোটের বিষয়ে ইতোমধ্যেই সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ। আইএসবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব একযোগে কাজ করবে। আইএসবিরোধী জোটে থেকে সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইনফরমেশন বিনিময়, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি কাজে যুক্ত থাকবে বাংলাদেশ। তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সৌদি জোটে বাংলাদেশ সৈন্য পাঠাবে বলেও জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরকালে আইএসবিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
×