ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুদান হয়ে লিবিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে দালালচক্র

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৪ জুন ২০১৬

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুদান হয়ে লিবিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে দালালচক্র

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ লিবিয়ার চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের ফলে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি পাঠানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও একটি শক্তিশালী দালাল চক্র সুদান হয়ে সেদেশে লোক নিচ্ছে। ১৯ বাংলাদেশীর একটি শক্তিশালী দালাল চক্র সুদান থেকে লিবিয়ায় অবৈধভাবে এই লোক নেয়ার হোতা হিসেবে কাজ করছে। এই ১৯ দালালের নাম প্রকাশ করে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস। গত দুই বছরে তিন দফায় বিবৃতি দিয়ে লিবিয়ায় যেতে নিষেধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। লিবিয়া ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার ফলে সেখানে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। সর্বশেষ গত বছর ৮ অক্টোবর লিবিয়ায় না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়। লিবিয়া পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে শ্রমিকদের যেতে নিষেধও করা হয়। সম্প্রতি লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের ফেসবুক পেজে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সুদান হয়ে মানবপাচারকারীদের সহায়তায় বাংলাদেশীরা অবৈধভাবে লিবিয়ায় প্রবেশ করছে। তারা লিবিয়ায় প্রবেশের পর আজদাবিয়ায় সংঘবদ্ধ বাংলাদেশী দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হচ্ছেন। তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। এই নির্যাতন এড়াতে পরিবারের সদস্যরা দালালদের অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ বিষয়ে একজন দালালের ছবিও প্রকাশ করেছে লিবিয়ার দূতাবাস। দূতাবাসের ফেসবুকে বলা হয়েছে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, নির্যাতন ও হত্যা চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এ দালাল চক্র। লিবিয়ায় আজদাবিয়ার বাংলাদেশী দালালদের সংঘবদ্ধ এই চক্রের অপতৎপরতা বন্ধের জন্য তাদের লিবীয় ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, বাংলাদেশে স্থায়ী ঠিকানা ও নিকটাত্মীয়ের পরিচয়সহ বাংলাদেশের মোবাইল নম্বর জানাতে বলা হয়েছে। লিবিয়ায় অবস্থিত এসব দালাল সম্পর্কে কোন তথ্য জানা থাকলে তা দূতাবাসকে জানাতে বলা হয়েছে। দূতাবাস প্রতারিতদের অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার ১৯ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। এরা হলো- কুমিল্লার সবুজ, আনোয়ার, নাসির, অঞ্জন, যশোরের মুরাদ, ফেনীর কানা আনোয়ার, ফরিদপুরের নাসির, ঝিনাইদহের আলী, টাঙ্গাইলের লাল মিয়া, মুন্সীগঞ্জের জালাল, রাজীব, সজীব, চাঁদপুরের নাসির, বরিশালের সবুজ, রফিক, মিরাজ, নরসিংদীর বাসেদ, আলমগীর, গাজীপুরের রাজীব। এসব দালালের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। গত মার্চ মাসের প্রথমদিকে দালালরা লিবিয়ার বেনগাজীতে এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে টাকা-পয়সা দাবি করে। পরে দূতাবাসের মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত থাকায় সাত জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা হয়। বাংলাদেশ সরকার থেকে লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও সেদেশে বিভিন্নভাবে শ্রমিক যাচ্ছিলেন। তবে সেসব শ্রমিক লিবিয়া যাচ্ছিলেন ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে এসব শ্রমিকরা ইউরোপে পাড়ি জমিয়ে থাকেন। কারণ মুয়াম্মার আল গাদ্দাফির পতনের পর গৃহযুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া এখন ইউরোপমুখী মানবপাচারের অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে গত বছর ১৬ মে লিবিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের লিবিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। দেশটির অভিযোগ লিবিয়ার কোম্পানিতে বাংলাদেশীরা চাকরি নিয়ে আসে। কিন্তু তারপর অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করে। অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে লিবিয়া সরকারের অনুরোধে বাংলাদেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১১ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরুর পর লিবিয়া থেকে প্রায় ৩৬ হাজার বাংলাদেশীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে অনেকেই সঙ্কটের মধ্যেও দেশটিতে থেকে যান। পরবর্তীতে দেশটির অচলাবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। তারপর বাংলাদেশ থেকে কিছু কিছু শ্রমিক লিবিয়া গেলেও দেশটির পরিস্থিতি গত বছর থেকে আরও বেশি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এ প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৩১ মে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম লিবিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
×